কলকাতা ব্যুরো: বাঘ সংরক্ষণে ব্যাঘ্র প্রকল্পের ধাঁচে এবার দেশে হাতির নিরাপত্তায় এলিফ্যান্ট প্রজেক্ট করতে চায় কেন্দ্র। এই প্রকল্প কার্যকর করতে গত বছরে কাজ শুরু করেছে কেন্দ্র। প্রাথমিক পরিকল্পনা অনুযায়ী, দেশে ৫০ টি যেমন টাইগার রিজার্ভ রয়েছে, সেভাবেই আপাতত ১৫ টি রাজ্যে ৩০ টি এলিফ্যান্ট প্রজেক্ট গড়ার পরিকল্পনা করা হয়েছে। এ ব্যাপারে বিভিন্ন রাজ্যের থেকে মতামত জানতে চাওয়া হয়েছে।
২০১৭ সালের হাতি গণনা অনুযায়ী, দেশে প্রায় ২৭ হাজার হাতি রয়েছে। এর একটা বড় অংশ রয়েছে ঝাড়খন্ডে, উড়িশ্যা, ছত্তিশগড় এবং এ রাজ্যের উত্তরবঙ্গে। উত্তরবঙ্গে প্রায় ৫১৪ হাতি রয়েছে। দক্ষিণবঙ্গের সংখ্যাটা ১৩০ এর মত। কেন্দ্রীয় বন ও পরিবেশ মন্ত্রকের পরি কল্পনা অনুযায়ী, যেভাবে ব্যাঘ্র প্রকল্প গড়ে, বাঘের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে, একইভাবে হাতিদের নিরাপত্তার জন্যই এই প্রকল্প গড়ে তোলা দরকার। প্রকল্প করতে ইতিমধ্যে রাজ্যগুলির থেকে মতামত এবং পরিকল্পনা জানতে চাওয়া হয়েছে।
যদিও সেই কাজ করার আগে কেন্দ্রীয় সরকার এক পরিসংখ্যানে দেখেছে, দেশে বাঘের আক্রমণে যে পরিমাণ মানুষের মৃত্যু হয়, তার বহুগুণ মানুষ মারা যান হাতির আক্রমণে। তাই হাতির নিরাপত্তায়, তার এলাকা বেঁধে দেওয়া প্রয়োজন বলে মনে করছেন পশু বিশেষজ্ঞরাত।
২৩ সেপ্টেম্বর লোকসভায় জমা দেওয়া এক রিপোর্টে বলা হয়েছে, ২০১৯ সাল পর্যন্ত গত পাঁচ বছরে মানুষ এবং হাতির মধ্যে সংঘর্ষে ২৩০০ মানুষের মৃত্যু হয়েছে। যা এই সময়ের মধ্যে বাঘের আক্রমণে মৃত্যুর অন্তত দশ গুণ। আবার চার শ’র বেশি হাতিকে চোরা শিকারির খুন করেছে বলেও হিসেব দিয়েছে বন ও পরিবেশ মন্ত্রক। হাতির আক্রমণে সবচেয়ে বেশি মানুষের মৃত্যুর ঘটনা ছত্রিশগড় ও এ রাজ্যে। ২০১৪ থেকে ২০১৯ এর সেপ্টেম্বর পর্যন্ত উড়িষ্যায় ৪৪৭ এরাজ্যে ৪৪৩ ঝাড়খন্ডে ৩৯১ ও ছত্রিশগড়ে ৩২৯ জনের মৃত্যু হয়েছে।
যদিও ভারতবর্ষের প্রথম এলিফ্যান্ট রিজার্ভ তৈরি হয়েছিল ২০০১ সালে ঝাড়খন্ডে ৪৫২৯ বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে। সিংভূম, পশ্চিম সিংভূম এবং সরাইখেলা- কারশাড়ি জেলার মধ্যে এই রিজার্ভে ২৮০ টি হাতি আছে বলে ২০১৭ র হাতি শুমারিতে দেখা গিয়েছে।
গত এক দশকে এ রাজ্যে হাতি এবং মানুষের মধ্যে দ্বন্দ্বে বিশাল সংখ্যক মানুষের মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। তার থেকেও বেশি ক্ষতি হয়েছে সম্পত্তির। অন্যদিকে উত্তরবঙ্গের ডুয়ার্স চোরাশিকারিদের হাতে হাতির মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। এর সঙ্গে জলপাইগুড়ি থেকে ডুয়ার্স এর মধ্য দিয়ে যাওয়া রেলপথে ট্রেনের ধাক্কায় হাতির মৃত্যু এক অহরহ ঘটনা হিসেবে দেখা দিয়েছে। যার জেরে কলকাতা হাইকোর্ট স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে বন্যপ্রাণী রক্ষায় মামলা দায়ের করেছে। এই অবস্থায় যদি ব্যাঘ্র প্রকল্প ধাঁচে হাতির প্রকল্প হয়, সে ক্ষেত্রে এ রাজ্য সমস্যা অনেক কমবে বলেই মনে করছেন পশুপ্রেমীরা।

Share.
Leave A Reply

Exit mobile version