কলকাতা ব্যুরো: বালটিকুরি মুক্তারাম দে উচ্চ বিদ্যালয়ে ১২ বছর ধরে প্রধান শিক্ষক না থাকায় বিষ্ময় হাইকোর্টের। স্কুল থেকে প্রধান শিক্ষক চেয়ে কতবার আবেদন করা হয়েছে, রাজ্যের স্কুল সার্ভিস কমিশনের কাছে সেই রিপোর্ট তলব করলো আদালত। পাশাপাশি বিদ্যালয়ের কোনো অশিক্ষক কর্মী নেই কেন সে বিষয়ে রিপোর্ট জমা দিতে হবে কলকাতা হাইকোর্টে। একইসঙ্গে যে অশিক্ষক কর্মীর অবসরের পর পেনশন আটকে থাকায় মামলা, সেই স্কুলের টিচার ইনচার্জকে এদিন হাওড়া পুলিশ হাইকোর্টের নির্দেশে হাজির করে আদালতে।
কিন্তু স্কুল কিছু নথি দিয়েছে ওই অশিক্ষক কর্মীর পেনশন ও অবসরকালীন ভাতা দেওয়া নিয়ে, যা নিয়ে সংশয় তৈরি হওয়য় জেলা স্কুল পরিদর্শক বা ডি আইকে ওই নথি খতিয়ে দেখে রিপোর্ট দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে ওই শিক্ষা কর্মীকে ২৪ সেপ্টেম্বরের মধ্যে সব বকেয়া মিটিয়ে দিতে ডি আইকে নির্দেশ দিয়েছে কোর্ট। আবার সেই টিচার ইনচার্জ দিব্যেন্দু মুখ্যার্জী, যিনি আবার রাজ্য তৃণমূল মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি এবং হাওড়ার পুর প্রশাসক বোর্ডের সদস্য, তাকে আবার ৫ অক্টোবর পরবর্তী শুনানিতে হাজির থাকার নির্দেশ দিয়েছে কোর্ট।
শাসক দলের নেতা হিসেবে জেলায় প্রবল প্রভাবশালী এই টিচার ইনচার্জকে নাকি ঘাটাতে সাহস পায়না কেউ। সেই প্রভাবশালী নেতা তথা টিচার ইনচার্জ এদিন হাইকোর্টের বিচারপতির এজলাস অবশ্য সারাক্ষণই মুখে মাস্ক বেঁধে ছিলেন প্রায় চুপচাপই। দু’একটি ক্ষেত্রে তার আইনজীবীর প্রশ্নে টুকটাক জবাব দেওয়া ছাড়া, এখানে অবশ্য তার প্রভাবের কোন বিচ্ছুরণ ঘটেনি। যদিও শিক্ষক মহলে তার প্রবল প্রতাপ সম্পর্কে নানান গল্প ছড়িয়ে আছে। ফলে এই প্রভাবশালী শিক্ষক নেতা আগামী শুনানিতেও হাইকোর্টে তলব পাওয়ায় মিশ্র প্রতিক্রিয়া শিক্ষক মহলে।
এই বিদ্যালয়ের শিক্ষাকর্মী শান্তনু ঘোষকে আগামী ২৪ সেপ্টেম্বরের মধ্যে তার সমস্ত বকেয়া দিয়ে দিতে হবে জেলা স্কুল পরিদর্শককে। পাশাপাশি প্রভিডেন্ট ফান্ড কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ, তাদের কাছেও শান্তনুবাবুর যে বকেয়া পরে রয়েছে তা অবিলম্বে মিটিয়ে দিতে হবে। নির্দেশ বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের। উল্লেখ্য ২৮ জানুয়ারি ২০২১ হাইকোর্টের বিচারপতি শেখর ববি সরাফ টিচার ইনচার্জকে নির্দেশ দিয়েছিলেন বিষয়টি দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য। কিন্তু তাতে কোনও কাজ না হওয়ায় ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার মামলা দায়ের করেন শান্তনু ঘোষ।
গত ১৪ সেপ্টেম্বরের মামলার শুনানিতে আদালত হাওড়া পুলিশ কমিশনারকে নির্দেশ দেন হাওড়া বালটিকুরি মুক্তারাম দে উচ্চ বিদ্যালয়ের টিচার ইনচার্জ দিব্যেন্দু মুখার্জী কে ১৬ সেপ্টেম্বর বেলা ২টোয় কলকাতা হাইকোর্টে হাজির করতে হবে।সেই মত বৃহস্পতিবার ওই স্কুলের টিচার ইনচার্জকে হাজির করে পুলিশ। ২০২০ সালের জানুয়ারি মাসে অবসর গ্রহণ করেন ওই বিদ্যালয়ের অশিক্ষক কর্মী শান্তনু ঘোষ। নিয়ম অনুযায়ী অবসরগ্রহণের দিনের আগেই পেনশন সংক্রান্ত সমস্ত হিসেব-নিকেশ সম্পন্ন করতে হয় স্কুল কর্তৃপক্ষকে। অবসরের এক মাস পর থেকেই শুরু হয় অবসরকালীন পেনশন।
কিন্তু এক্ষেত্রে শান্তনু বাবু এখনো পর্যন্ত তার অবসরকালীন আর্থিক সুযোগ-সুবিধা পাননি।বৃহস্পতিবার টিচার ইন চার্জের উপস্থিতে আদালত জানায় আগামীকাল শান্তনু বাবু বিদ্যালয়ে গিয়ে কাগজে সই করবেন এবং ২৪ সেপ্টেম্বরের মধ্যে জেলা স্কুল পরিদর্শক তাঁর বকেয়া মিটিয়ে দেবেন। টিচার ইন চার্জ আদালতে জানান তাঁর বিদ্যালয়ে ১১ বছর ধরে কেন প্রধান শিক্ষক নেই। সম্প্রতি শান্তন বাবুর অবসরের পর কোন আশিক্ষাক কর্মী নেই। তাই কাজে বিলম্ব হচ্ছে। বিচারপতি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে দুটি কারণেই রিপোর্ট তলব করেন। আগামী ১৫ অক্টোবরের মধ্যে জমা দিতে হবে রিপোর্ট।পেনশন কতৃপক্ষকেও রিপোর্ট জমা দিতে হবে।