বাঙালি মানেই সংস্কৃতি প্রিয়। বাঙালির ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির সুখ্যাতি শুধু দেশেই নয়, দেশের বাইরেও রয়েছে। কাঁসার থালা, বাটি, গ্লাসের ব্যাবহার বাঙালির বহু প্রাচীণ কালের পরম্পরা। আর কাঁসার বাসনের কথাতে প্রথমেই মনে আসে কেঞ্জাকুড়ার কথা।বাঁকুড়া জেলার তথা সারা রাজ্যের শিল্পের গ্রাম নামে পরিচিত কেঞ্জাকুড়া। বাঁকুড়া-১নং ব্লক ও বাঁকুড়া সদর থানার অধীনে অবস্থিত কেঞ্জাকুড়া গ্রাম। এই শিল্প গ্রামটি তিনটে শিল্পের জন্য বিখ্যাত, কাঁসা-বাসন, বাঁশের তৈরি খেলনা এবং তাঁতের গামছা। তবে এই তিনটির মধ্যে সবচেয়ে অন্যতম ও প্রসিদ্ধ কেঞ্জাকুড়ের কাঁসার বাসন। গ্রামের অধিকাংশ মানুষেরা বংশপরম্পরার এই পেশার সঙ্গে জড়িয়ে আছেন। কেঞ্জাকুড়ের প্রায় ৭০০টি কর্মকার পরিবার ছাড়াও অন্যান্য সম্প্রদায়ের বহু মানুষ এই শিল্পের সঙ্গে যুক্ত। এখানকার বাসন রপ্তানি করা হয় দেশের বিভিন্ন প্রান্তে।

কাঁসার তৈরি থালা বাটি গ্রাম বাংলার বিয়ে বাড়ি থেকে শুরু করে প্রাচীন বিভিন্ন আচার পালনেও প্রয়োজন হয়। কাঁসার জিনিসের বিভিন্ন ঠাকুরের পুজোতেও ব্যবহার হয়। তবে সময়ের সাথে বদলেছে আমাদের জীবনযাত্রা।এখন বেশিরভাগ ঘরেই স্টিলের বাসনেই খাবার রান্না করা হয়। এতে দ্রুত রান্না হয় ফলে বাঁচে গ্যাস। তবে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, প্লাস্টিক ও স্টিলের বাসনে মাত্র ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ পুষ্টি থাকে খাবারে। তবে স্টিলের বাসনে রান্না করা খাবার তামার বা কাঁসার পাত্রে রাখলে পুষ্টিগুণ ততটা নষ্ট হয় না। রান্না এবং খাওয়ার জন্য পিতল ও কাঁসার বাসন ব্যবহার করলে খাবারের ৯০ শতাংশ পুষ্টি বেঁচে থাকে। এছাড়াও কাঁসা আমাদের হজমশক্তি বাড়ায়, মস্তিষ্ককে সজাগ করে তোলে। তবে স্টিল ও প্লাস্টিকের বাসনপত্র বাজারে আসার কারণে কাঁসার চল অনেকটাই কমতে শুরু করেছে। যার ফলে ক্ষতিগ্রস্ত গোটা গ্রাম। স্থানীয় কাঁসাশিল্পীদের মতে, “কাঁচা মালের দাম অত্যধিক বেড়ে যাওয়ায় বিক্রি বাটা অনেক কমে গেছে। বর্তমানে পরিশ্রম অনুযায়ী মূল্য ও পাওয়া যায় না। ফলে অনেকেই এই রাজ্য ছেড়ে অন্য রাজ্যে চলে গেছে।” তবে বহু শিল্পীরা এখনো এই গ্রামেই আছে, নিজেদের ঐতিহ্যের কাঁসা শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে। অতি দুর্দশার সাথে দিন কাটাচ্ছেন তারা। তাদের ভরসা বলতে শুধুমাত্র রেশনের চাল গমের। স্থানীয়দের মতে, “এই কাঁসা শিল্পের ওপর জড়িত যে সকল শিল্পীরা আছে তাদের দিকে সরকার যদি একটু নজর দেয়, তবেই এই শিল্প এবং শিল্পীরা নতুন করে বাঁচার পথ খুঁজে পাবে।”

বাঁকুড়া শহর থেকে ২২ কিমি দূরে দ্বারকেশ্বর নদের তীর ঘেঁষা গ্রাম কেঞ্জাকুড়া। চার হাজারের বেশি জনসংখ্যা। এর মধ্যে ৩২০টি পরিবারে কাঁসার বাসন তৈরির কারখানা আছে। যাকে স্থানীয় ভাষায় বলে ‘শাল। আরও শ’তিনেক পরিবারের কেউ না কেউ ওই সব কারখানায় শ্রমিকের কাজ করেন। ফলে গ্রামের প্রায় আশি শতাংশ পরিবার কাঁসা শিল্পের সঙ্গে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে যুক্ত। বলা ভালো, এটাই তাদের জীবন-জীবিকা। এই ৩২০টি কারখানার মালিকদের নিয়ে একটি সংগঠন আছে। যেখানে আছে ‘শাল চালানোর নির্দিষ্ট নিয়মকানুন। সকলকে তা মেনে চলতে হয়। কাঁসার তৈরি থালা বাটি গ্রাম বাংলার বিয়ে বাড়ি থেকে শুরু করে প্রাচীন বিভিন্ন আচার পালনেও প্রয়োজন হয়। কাঁসার জিনিসের বিভিন্ন ঠাকুরের পুজোতেও ব্যবহৃত হয়। তবে সময়ের সাথে বদলেছে আমাদের জীবনযাত্রা।

এখন বেশিরভাগ ঘরেই স্টিলের বাসনেই খাবার বানানো হয়। এতে দ্রুত রান্না হয়, ফলে বাঁচে গ্যাস। তবে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, প্লাস্টিক ও স্টিলের বাসনে মাত্র ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ পুষ্টি থাকে খাবারে। তবে স্টিলের বাসনে রান্না করা খাবার তামার বা কাঁসার পাত্রে রাখলে পুষ্টিগুণ ততটা নষ্ট হয় না। রান্না এবং খাওয়ার জন্য পিতল ও কাঁসার বাসন ব্যবহার করলে খাবারের ৯০ শতাংশ পুষ্টি বেঁচে থাকে। এছাড়াও কাঁসা আমাদের হজমশক্তি বাড়ায়, মস্তিষ্ককে সজাগ করে তোলে। উভয়পক্ষের পারস্পরিক সহযোগিতায় শিল্পটি এখনও চালু থাকলেও বিকল্প আয়ের সন্ধান পেলে অনেকেই এই কাজ থেকে চলে যাচ্ছেন। আশানুরূপ মজুরি না পেয়ে প্রত্যেক এলাকাতেই শ্রমিক এবং কারিগরদের কেউ কেউ এই কাজ ছেড়ে গাড়ি, অটো বা টোটো চালাচ্ছেন। কেউ ছোটোখাটো অন্য ব্যবসা করছেন। ফলে বাঁকুড়া জেলার কাঁসা শিল্প একসময় রাজ্যে অন্যতম কুটির শিল্প হিসেবে অনেক মানুষের রুটি-রুজির ব্যবস্থা করলেও এখন তা সঙ্কটের মুখে।

Share.
Leave A Reply

Exit mobile version