কলকাতা ব্যুরো: আবার স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে মামলা দায়ের করল কলকাতা হাইকোর্ট। কয়েক মাস আগেই এ রাজ্যে হাতি, বাইসান সহ অন্যান্য জীবজন্তুর জীবন রক্ষায় ব্যবস্থা নিতে মামলা দায়ের করেছিল হাইকোর্ট। আর এবার হাইকোর্ট একই ভাবে যেচে মামলা দায়ের করল পক্ষীকুলের নিরাপত্তায়। বেআইনি পাখির বিক্রি এবং তাদের পাচার রুখতে মামলা দায়ের করল কলকাতা হাইকোর্ট।
সারা বছরই পাখির পাচার চলে। আবার অনেক সময় তা ধরে ফেলে বনদপ্তর। এই শীতের মরসুমে পরিযায়ী পাখির আনাগোনা যেহেতু বেশি হয়, তাই এই সময় পাখির চোরাকারবার, পাচার বৃদ্ধি হয়। তাদের রক্ষার জন্যই প্রধান বিচারপতি টি বি এন রাধাকৃষ্ণন ও বিচারপতি অরিজিত বন্দ্যোপাধ্যায়ের ডিভিশন বেঞ্চ শুক্রবার স্বতপ্রণোদিত হয়ে মামলাটি দায়ের করে।
হাইকোর্টের নির্দেশে এদিনই মামলায় যুক্ত সব পক্ষকে নোটিশ করার নির্দেশ দেওয়া হয়। একইসঙ্গে হাইকোর্ট মনে করছে, রাজ্যের তরফে এডভোকেট জেনারেল এই মামলায় আদালতকে সবরকম সহযোগিতা করবেন। আগামী ৮ ডিসেম্বর মামলাটির পরবর্তী শুনানি করতে চায় ডিভিশন বেঞ্চ। কারণ আদালত মনে করছে, শীতের মরসুম শুরু হওয়ায় এখনই পাখিদের পাচার এবং অত্যাচার বেড়ে যাবে। তাই আদালত দ্রুত মামলায় নির্দেশ দিতে চায়।
আদালতের তথ্য অনুযায়ী, মূলত টিয়া, ময়না, চন্দনা, পাহাড়ি ময়না সহ বিভিন্ন জাতির পাখি শীতের সময় রাজ্যে এলে বা অন্য রাজ্য থেকে পাচার করা হয়। এই পাচারের ক্ষেত্রে এ রাজ্যের উত্তরবঙ্গ, ঝারখান্ড এবং বিহার মূল পাচারের ভরকেন্দ্র বলে মনে করছে হাইকোর্ট। মূলত কলকাতা এবং দিল্লিতেই এইসব নানান জাতের পাখি পাচার করা হয়।
হাইকোর্ট এ দিন তারা বেশ কিছু বিষয়ে পর্যবেক্ষণ দিয়েছে। যেমন, যেভাবে পাখি পাচারের ক্ষেত্রে নৃশংসতা করা হয়, তা বন্ধ হওয়া দরকার। কোন ক্ষেত্রে পাইপের মধ্যে ভরে পাখি পাচার হয়। কখনো পাখির ঠোঁট সেলাই করা হয়। আবার পাখির ডানা কেটে দেওয়া, এমনকি ডানায় আঠা লাগিয়ে দেওয়া, যাতে সে উড়তে না পারে, এমন নৃশংসতার পরিচয় পাওয়া যায় পাখি পাচারের ঘটনা সামনে আসলে। আবার একসঙ্গে যত পাখি পাচার হয় অনেক ক্ষেত্রেই তার অর্ধেক পাখি মরে যায়। সামান্য জায়গায় বিশাল সংখ্যক পাখিকে জোর করে নিয়ে যাওয়ার সময় তাতে হয়তো পাচারকারীদের আর্থিক ক্ষতি হয় না, কারণ জঙ্গল থেকে পাখিগুলি ধরতে যাবে খরচ নেই। কিন্তু এতে পাখি শুধু মরে যাচ্ছে বা কষ্ট পাচ্ছে, তাই নয়, এতে প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে।
হাইকোর্টের বক্তব্য, বহু পরিবার পাখি পুষে থাকে। নামিদামি সেইসব পাখি কোথা থেকে ধরা হচ্ছে, কিভাবে তা লুকিয়ে পাচার হচ্ছে, তা হয়তো সকলে জানছেন না, কিন্তু বহু ক্ষেত্রে এমন ঘটনা প্রকাশ্যে ঘটলেও মানুষ তা গ্রাহ্য করে না। আদালত মনে করছে, এক্ষেত্রে সকলেরই ভূমিকা নেওয়া উচিত। তাই স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে মামলা দায়ের করে আদালত দ্রুত আইন প্রয়োগের পক্ষে মত দিয়েছে।

Share.
Leave A Reply

Exit mobile version