অর্ধ শতকেরও আগে চাঁদে মানুষের পা পড়েছিল। এতগুলি বছর পেরিয়ে চন্দ্রাভিযানের ইতিহাস-ভূগোল-বিঞ্জানের পাতা ওলটালে দেখা যাচ্ছে চাঁদ আসলে একটা উপলক্ষ মাত্র। মূল লক্ষ্য মহাকাশে আধিপত্য বিস্তার।

দ্বিতীয় পর্ব 

মানুষের চন্দ্রজয়ের সেই ঐতিহাসিক মুহূর্ত ৫০ বছরের বেশি সময় পেরিয় গিয়েছে। সুবর্ণ জয়ন্তী বর্ষের ২০ জুলাই আমেরিকার কেনেডি স্পেস সেন্টারে নানা আয়োজনে উদ্‌যাপিত হয় সেই ঐতিহাসিকে  মুহূর্ত।  ১৯৯২ সালে এই সেন্টারটিকে নাসা পরিত্যক্ত ঘোষণা করেছিল। তারপর থেকে এখানে আর কোনও কাজ হয়নি। নাসার উদ্যোগে পাঁচ বছর ধরে এই সেন্টারটি সংস্কারের জন্য অর্থ সংগ্রহ করা হয়। দু’বছরের সংস্কার শেষে সাধারণ মানুষের জন্য সেন্টারটি উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে। কেনেডি স্পেস সেন্টারে ১৭ মিনিটের শোতে দেখানো হয় সে দিনের কাউন্ট ডাউন, ‘স্যাটার্ন ৫’-এর উৎক্ষেপণ, ‘অ্যাপোলো ১১’-এর দুষ্প্রাপ্য সব ছবি। অনুষ্ঠানের নাম রাখা হয়েছে, ‘অ্যাপোলো ৫০: গো ফর দ্য মুন’। ২০১৮ তে চাঁদে মানুষের প্রথম পা রাখা অভিযানের ১৯ হাজার ঘণ্টার অডিও টেপ প্রকাশ করেছিল নাসা। মোট ১৯,০০০ ঘণ্টার এই কথোপকথন-কে ডিজিটালাইজড করে নিজেদের অনলাইন আর্কাইভে রেখেছে নাসা। যে কেউ সেই কথোপকথনের রেকর্ড শুনতে পারবেন। তাছাড়া চাঁদ থেকে যা কিছুই পৃথিবীতে আনা হয়েছিল তা গবেষণার সুযোগ করে দিয়েছে। একটি ব্যাগে নমুনা হিসেবে ২১.৫ কিলোগ্রাম চাঁদের মাটি এবং পাথর ভরে ফিরে এনেছিলেন মহাকাশচারীরা। পরে জানা গিয়েছিল,  সেই ব্যাগটি হারিয়ে ফেলেছিল নাসা। তবে ২০১৩ সালে সেটির খোঁজ মেলে।

আমেরিকার ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স ২০১৮-র মার্চে নতুন চন্দ্রাভিযানের ঘোষণা করেছেন। আগামী পাঁচ বছরের মধ্যেই মার্কিন মহাকাশচারীরা নতুন এই অভিযান সফল করে দেখাবেন বলেও তিনি জানান।  এর আগে ২৬ জানুয়ারি নতুন চন্দ্রাভিযানের কথা ঘোষণা করার সময় পেন্স চীন ও রাশিয়াকে ‘প্রতিপক্ষ’  আখ্যা দিয়ে  বলেছিলেন, ‘কোনও ভুল হওয়ার কথা নয় যে, আমরা মহাকাশে আজ লড়াইয়ে অবতীর্ণ, ঠিক যেমনটা ছিল ১৯৬০-এর দশকে।’ একথা তো ঠিকই যে, চাঁদ আসলে এখানে একটা উপলক্ষ্য। মূল লক্ষ্য, মহাকাশে আধিপত্য বিস্তার। তাই লড়াইটা এবার শুধু আমেরিকা-রাশিয়ার মধ্যেই নয়, চীনের সঙ্গেও!

প্রসঙ্গত, ২০১৮-র জানুয়ারিতে চিনের একটি মহাকাশযান চন্দ্রপৃষ্ঠের সবচেয়ে দুরূহ স্থানে অবতরণ করেছে বলেও দাবি করেছে চিন। আমেরিকার নড়চড়ে ওঠার জন্য এটুকু তথ্যই যথেষ্ট। কারণ, এই মুহূর্তে আমেরিকার সবচেয়ে বড় প্রতিযোগী চিন। সেই সোভিয়েত নেই বলে কি স্নায়ুযুদ্ধ মহাকাশে বিস্তৃত হবে না! আমেরিকার সংবাদমাধ্যম থেকেই জানা ইসরায়েলের অলাভজনক প্রতিষ্ঠান স্পেসআইএলের পাঠানো একটি মহাকাশযান চাঁদের পিঠে গিয়ে বিধ্বস্ত হয়েছে ২০১৮-এর ১১ এপ্রিল। বিধ্বস্ত হওয়ার আগে অবশ্য চন্দ্রপৃষ্ঠে ছবি তুলে পাঠাতে সক্ষম হয়েছে তারা। আড় তারপরই নতুন অভিযানের কথা ঘোষণা করেছে। একই রকম চন্দ্রাভিযানের পরিকল্পনা রয়েছে ভারতের। এ বছরই তারা চাঁদের উদ্দেশে পাঠাবে চন্দ্রযান-২।   পিছিয়ে নেই জাপান।  চন্দ্রাভিযানের ঘোষণা করেছে তারাও। তবে জাপান চাঁদে অবতরণ করেই খুশি হবে না, চন্দ্রপৃষ্ঠ ঘুরে দেখার পরিকল্পনা রয়েছে তাদের। ২০২০-তে জাপানের সেই অভিযান হওয়ার কথা। একইভাবে ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সি (ইএসএ) ২০২৫ সালের মধ্যে চাঁদের বরফ খুঁড়ে দেখবে বলে জানিয়েছে।

প্রশ্ন হল সবাইকে কী তবে একই সঙ্গে ‘চাঁদে পেল’? আগেই বলা হয়েছে যে, চাঁদ আসলে একটা উপলক্ষ মাত্র। মূল লক্ষ্য মহাকাশে আধিপত্য বিস্তার। মহাকাশে নতুন প্রতিযোগিতায় প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে যাদেরই উঠুক না কেন, চীন, রাশিয়া ও আমেরিকাই এখনো পর্যন্ত মূল খেলোয়াড়। এই মুহূর্তে চিনের সঙ্গে বাণিজ্যযুদ্ধের প্রতিযোগিতায় নতুন এক উত্তেজনার পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে বলে মনে হচ্ছে। কারণ ঘোষিত মহাকাশ প্রকল্পগুলি থেকে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে যে দুনিয়ার সর্ববৃহৎ শক্তিগুলি এখন আর মাটিতে প্রভাব বিস্তার করেই আশ্বস্ত হতে পারছে না। নিরাপত্তা ও তথ্যের প্রশ্নে তারা মহাকাশকে ব্যবহার করতে চাইছে। মহাকাশের সামরিক ব্যবহার ধারণাটিও এখন আর নতুন কিছু নয়। ট্রাম্প নিজেই এই শব্দের ব্যবহার করেছেন। আমেরিকার সামরিক বাহিনীর অংশ হিসেবে একটি নতুন ‘স্পেস ফোর্স’ গঠনের কথাও তিনি বলেছেন। তাই ‘স্পাই স্যাটেলাইট’ শব্দটি এখন আর নতুন নয়।

চলবে…

Share.
Leave A Reply

Exit mobile version