কলকাতা ব্যুরো: পুলিশ সেজে ছাত্র খুনের অভিযোগে উত্তপ্ত হাওড়ার আমতা। জানা গিয়েছে, শুক্রবার গভীর রাতে পুলিশের পোশাকে আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আনিস খানের বাড়িতে যায় চারজন। পরে বছর আঠাশের আনিস খানকে ছাদ থেকে ফেলে খুন করা হয় বলে অভিযোগ পরিবারের। ঘটনায় রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে সুর চড়িয়েছেন সিপিএম পলিটব্যুরো সদস্য মহঃ সেলিম। অন্যদিকে তদন্ত ঠিক পথে না এগোলে মামলার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন আইএসএফ বিধায়ক নওশাদ সিদ্দিকিও।

আমতা থানা এলাকার সারদা দক্ষিণ খান পাড়ার বাসিন্দা আনিস খানের বাবা সালাম খানের অভিযোগ, বাগনান কলেজে পড়ার সময় আনিস এসএফআই করতেন। পরে যোগ দেন আইএসএফে। বাগনান কলেজে ছাত্র রাজনীতি করার সময়ই বাগনান থানায় এই অভিযোগ দায়ের হয়। পরিবারের দাবি, মাঝে এতগুলো বছর কোনও সমন আসেনি। এদিকে শুক্রবার এলাকায় একটি জলসা ছিল। সেখানে গিয়েছিলেন আনিস। রাত ১টা নাগাদ তিনি বাড়ি ফেরেন। এরপরই পুলিশ তাঁর বাড়িতে চড়াও হয় বলে অভিযোগ। বাড়ির দরজায় লাথি মারে। চার ব্যক্তি বাড়িতে এসে আনিসের নাম করে ডাকতে থাকে। এদের মধ্যে একজন ছিল পুলিশের পোশাকে। তার হাতে ছিল অস্ত্র। বাকি তিনজন ছিল সিভিক ভলান্টিয়ারের পোশাকে।

পুলিশ জানতে চায়, ছেলে কোথায়। তিনি পুলিশকে জানান, ছেলে বাড়িতে নেই। অভিযোগ, এরপরই আনিসের বাবাকে ঠেলে সরিয়ে তিন তলায় উঠে যান তিন সিভিক ভলান্টিয়ার। অভিযোগ এরপরই শুক্রবার গভীর রাতে এরপর ওই তিনজন ছাদে গিয়ে সেখান থেকে আনিসকে ফেলে দেয়। আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন এই পড়ুয়া বর্তমানে কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করছিলেন। আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আন্দোলন ছাড়া সিএএ বিরোধী আন্দোলনেও তিনি যুক্ত ছিলেন। শুধু বিশ্ববিদ্যালয়েই নয় নিজের এলাকাতেও প্রতিবাদী মুখ হিসেবে পরিচিত ছিলেন আনিস। পরিবারের পাশে থাকার আশ্বাস দিয়ে বাম ছাত্র সংগঠন এসএফআই-এর তরফে শনিবারই আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের পার্কসার্কাসের ক্যাম্পাসে মোমবাতি মিছিলের ডাক দেওয়া হয়।

এদিকে ছাত্র খুনের এই নিন্দনীয় ঘটনার তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন সিপিএম-এর পলিটব্যুরো সদস্য মহঃ সেলিম। তিনি বলেন, আনিস খান আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্বে ছিলেন। গত ১৩৭ দিন ধরে হাজার হাজার ছাত্রছাত্রী ধর্নায় বসে রয়েছে, মিছিল করছে। তিনি অভিযোগ করেন, আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বাস্তবায়নের সময়ে ধর্মীয় জিগির তুলেছিলেন এখনকার তৃণমূল নেতারা। তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পর গত একদশক ধরে আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়কে তিল তিল করে শেষ করা হচ্ছে। বাম আমলে আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়কে পার্কসার্কাসে জমি দেওয়া হলেও, বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী সেই জমি নিয়ে নিচ্ছেন বলে এদিন অভিযোগ করেন সেলিম।

শনিবার সকালে রাজ্যের একমাত্র আইএসএফ বিধায়ক নওশাদ সিদ্দিকি আমতায় আনিস খানের বাড়িতে যান। পাশাপাশি তিনি আমতা থানায় গিয়েও কথা বলেন। তিনি জানিয়েছেন এসডিপিও উলুবেড়িয়া, আমতার আইসি, ডিএসপি-সহ পুলিশের উচ্চ আধিকারিকদের সঙ্গে তিনি কথা বলেছেন। তাঁরা আনিসের বাড়িতে যাওয়ার কথা অস্বীকার করেছেন বলে জানিয়েছেন নওশাদ। তিনি বলেন, পুলিশের দায়িত্ব কে পুলিশের পোশাকে এই কাণ্ড ঘটিয়েছে তা খুঁজে বের করা। নওশাদ হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, যদি আনিসের পরিবার অভিযোগ করেন তদন্ত ঠিকপথে এগোচ্ছে না, তাহলে আদালতে গিয়ে সেই সময় থানায় যে আধিকারিকরা ছিলেন, তাদের মামলায় পার্টি করতে বাধ্য হবে আইএসএফ।



অন্যদিকে ইতিমধ্যেই এই ঘটনার প্রতিবাদে সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে। কেউ কেউ অভিযোগ করেছেন তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীরা ঘরে ঢুকে আইএসএফ-এর ছাত্র নেতা আনিস খানকে খুন করেছে। অনেকে আবার এনআরসি বিরোধী আন্দোলনের ছাত্র নেতাকে খুনের প্রতিবাদে রাস্তায় নামার আহ্বান জানাচ্ছেন।

Share.
Leave A Reply

Exit mobile version