ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের নৃশংসতার প্রতিবাদে উত্তাল আমেরিকার বিখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয়গুলি। ফিলিস্তিন মুক্তির স্লোগানে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে অবস্থান নিয়েছেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। বিক্ষোভকারীদের হটাতে জোর জবরদস্তি, আক্রমণ চালাচ্ছে পুলিশ, নির্বিচারে চলছে গ্রেপ্তার। তারই মধ্যে আমেরিকার কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি একাডেমিক ভবন দখল করে কয়েক ডজন বিক্ষোভকারী। তারা এই পদক্ষেপ নেয় গাজায় ইসরায়েলের লাগাতার হামলার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ কর্মসূচির অংশ হিসেবে।  

কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষ শিক্ষার্থী ও বিক্ষোভকারীদের ক্যাম্পাস থেকে দূরে থাকার নির্দেশ দেয়। তবে সেই নির্দেশনা অমান্য করে বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়েই অবস্থান করে। এক সময় আলটিমেটামের সময়সীমা পার হয়ে গেলেও বিক্ষোভ থেকে শিক্ষার্থীরা সরে না আসায় তাদের বহিষ্কারের সিদ্ধান্তের কথা জানায় কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থীদের এই পদক্ষেপের ফলে এত দিন ধরে আমেরিকার বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ইসরায়েলবিরোধী যে আন্দালন চলছিল তাতে নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে। এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই সপ্তাহ দুয়েক আগে ফিলিস্তিনিদের পক্ষে তুমুল বিক্ষোভ শুরু হয়। পরে যা গোটা আমেরিকায় ছড়িয়ে পড়ে। ক্যাম্পাস প্রাঙ্গণে তাঁবু টানিয়ে বিক্ষোভে বসে পড়েন শিক্ষার্থীরা।

গাজা যুদ্ধের বিরুদ্ধে বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থীদের অন্যতম সংগঠন কলাম্বিয়া স্টুডেন্টস ফর জাস্টিস ইন প্যালেস্টাইন (এসজেপি) সামাজিক প্ল্যাটফর্ম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটি কর্তৃপক্ষের আদেশ অমান্য করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে বিক্ষোভকারীদের তাঁবুতে অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। সংগঠনটি এরপর হ্যামিল্টন হল দখলের কথা ঘোষণা করে। তারা জোর দিয়ে বলে, একাডেমিক ভবনটি ১৯৬৮ সালে ছাত্র বিক্ষোভের কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল। বিক্ষোভকারী আরেকটি সংগঠন কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটি অ্যাপার্থেইড ডাইভেস্ট (সিইউএডি) বলেছে, এই বছরের শুরুতে গাজায় মৃত অবস্থায় পাওয়া ছ’বছর বয়সী মেয়ে হিন্দ রাজাবের সম্মানে ভবনটি দখল করেছে তারা। এদিকে টেক্সাস অঙ্গরাজ্যের অস্টিনে ইউনিভার্সিটি অব টেক্সাসের ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ ছত্রভঙ্গ করেছে পুলিশ। সেখান থেকে বেশ কয়েকজনকে আটক করা হয়েছে। কর্তৃপক্ষ বলছে, বিক্ষোভকারীদের তাঁবু সরিয়ে নিতে বলা হয়েছিল। তারা নির্দেশ মানেননি। চলতি সপ্তাহগুলোতে ইসরায়েলবিরোধী বিক্ষোভে ফেটে পড়েছে আমেরিকার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ক্যাম্পাস। গত ১৭ এপ্রিল কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিবাদকারী শিক্ষার্থীদের সরাতে ক্যাম্পাসে নিউইয়র্ক পুলিশ প্রবেশ করে একশোর বেশি শিক্ষার্থীকে গ্রেপ্তার করলে এই বিক্ষোভের স্ফুলিঙ্গ ছড়িয়ে পড়ে সারা আমেরিকায়। গত কয়েক দিনে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এক হাজারের বেশি আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

আন্দোলনরত কয়েকশ শিক্ষার্থীর জমায়েতের মধ্যে ঢুকে সংঘর্ষে জড়ানো, টেনে হিঁচড়ে শিক্ষার্থীদের গণহারে গ্রেপ্তার, নারী অধ্যাপককে মাটিতে ফেলে হাতকড়া পরানো—মার্কিন পুলিশের এমন কর্মকাণ্ডে বিস্মিত গোটা বিশ্ব। মত প্রকাশের অধিকার, প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ প্রদর্শনের অধিকারে সর্বদা সোচ্চার যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পুলিশি অভিযান ও ধরপাকড় দেশটির সংবিধান, বিশ্ববিদ্যালয়ের নীতিমালা, ভাবমূর্তির সঙ্গে একেবারেই সাংঘর্ষিক। গত ১৮ এপ্রিল থেকে ২৮ এপ্রিল পর্যন্ত ১০ দিনে আমেরিকার প্রায় ৩০টির বেশি বিশ্ববিদ্যালয়ে অভিযান চালিয়ে ফিলিস্তিনে গণহত্যার বিরুদ্ধে আন্দোলনরত হাজার জনের বেশি বিক্ষোভকারীকে আটক করেছে পুলিশ। কলাম্বিয়া, ইয়েল, হার্ভাড, এমআইটি, প্রিন্সটনসহ নামকরা সব বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের গণহারে বহিষ্কার, আবাসিক সুবিধা কেড়ে নেওয়া, স্কলারশিপ বাতিলের মতো ঘটনা ঘটছে। অন্যদিকে, আটকদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি অভিযোগে বিচার প্রক্রিয়া চলবে বলে কয়েকটি সূত্র জানিয়েছে।

অক্টোবরে হামাসের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের যুদ্ধ ঘোষণার পর যখন ফিলিস্তিনে গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের বিষয়গুলো সামনে আসতে শুরু করে তখন থেকেই ছোট ছোট দলে আমেরিকার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিক্ষোভ শুরু হয়। তবে গত ১০ দিনে এই বিক্ষোভ ব্যাপক আকার ধারণ করেছে। এমনকি পুলিশি ধরপাকড়ের মধ্যেও আমেরিকাজুড়ে ক্যাম্পাসগুলোতে আন্দোলন দিনদিন তীব্র হচ্ছে।  

Share.
Leave A Reply

Exit mobile version