ঘুড়ি ওড়ানোর বাসনা দমিয়ে রোজ বিকেলে যদি ঘুড়ি হতে পারতাম। আহা! খোলামকুচির মতো উড়ে গেলাম আকাশে। উত্তরের কার্নিশ ঘেঁষে ডেলোতে প্যারাগ্লাইডিং করে উড়ে চলি খাদের ওপর দিয়ে। অতলান্ত খাদ। তিস্তার শেষ মাথা অবধি দেখা যায়। মেঘগুলো ঝুলে আছে এদিক সেদিক। কারা যেন নদীর পাড়ে বালির চরে রোদ কুড়োচ্ছে খড়কুটো মেখে।

গোধুলীর শেষে আকাশের কার্পেটে খয়েরী রঙের ব্যাথা। তাতে ভাসাই আমার প্যারা-সাম্পান। এইসব রঙচটা দিন আর যুগলবন্দী ঘাসের হেলে পড়ার ভঙ্গিতে বুঝি এক রাশ লাল পিঁপড়ে মগজে সার বেঁধে চলছে। আমি উড়ছি না তিস্তার ওপরে। দিগন্ত বিস্তৃত আমাজন, এটা। বুকের ভেতর দ্রিমি দ্রিমি নিয়ে আমি অপেক্ষায়। কতগুলো ঘন্টা মিনিট সেকেন্ড পার হবো এই ধোঁয়া ওঠা রেইন ফরেস্ট। অকালবোধনের লেলিহান শিখা গ্রাস করছে তাকে। ঝলসানো অ্যানাকোন্ডা, বনবিড়াল, প্রাইমেট সব। ফেসবুক জুড়ে। অথচ কুয়াশার দাঁড় বেয়ে কেউ আসছিল আমার শৈশবশহরে। সাঁত্রাগাছিতে। নিভু নিভু পরিযায়ীদের কবিতা নিয়ে।

গোধুলীর শেষে আকাশের কার্পেটে খয়েরী রঙের ব্যাথা। তাতে ভাসাই আমার প্যারা-সাম্পান। এইসব রঙচটা দিন আর যুগলবন্দী ঘাসের হেলে পড়ার ভঙ্গিতে বুঝি এক রাশ লাল পিঁপড়ে মগজে সার বেঁধে চলছে। আমি উড়ছি না তিস্তার ওপরে। দিগন্ত বিস্তৃত আমাজন, এটা।

কম্পাসে চোখ রেখে এখন খুঁজছি দরিয়া। সকালবেলার তাড়াহুড়োয় টিফিন মেলে নি। ন’টায় দোরে তালা। অফিস-স্কুল ছুটোছুটি। টাকার জেদে স্কুল না-যাওয়ার হুমকি? দেওয়ার সুযোগ ছিল না। দিলে, দূরত্বটা পেরোতে পারতাম। ছোটবেলার বন্ধু নিতু এসে কাঁধে হাত রাখলো। ‘কান্দিস না, তোরে আমি ঝালমুড়ি কিন্যা দিমু।’ কবে যেন এসব অপেক্ষা পেরিয়ে আমার একাকিত্বের ভেতর ভেতর অরণ্য তৈরি হলো। নদী ভাঙনের জলে চোখ রাখলে দেখা যায় চাঁদ ভেঙে যাওয়ার দৃশ্য। চাঁদের গল্পরা হুটোপাটি ঢুকে পড়ছে, টের পাই। অথচ চারদিকে আলোর কারফিউ। অট্টহাসি। দীর্ঘশ্বাস। কোনটা আদি, কোনটা অকৃত্রিম?

কোনটা সামাল দেব? বাঁধভাঙ্গা বন্যা নাকি ভাইরাস? এতো যে মঙ্গা-আঁধার চারিদিকে। দেওয়াল জুড়ে পেন্সিল ঘষে ঘষে লিখে রাখি শূন্যতা। ইরেজার ঘষে ঘষে ছোট করতে থাকি নিজেকে। আকাশের কোথাও কোথাও মেঘ জমছে। টুকরো, ছাই ছাই রঙা। চিলেঘর থেকে আজও বৃষ্টি ঝরে। একটানা ঝরঝর। আমি বাসনকোসন পেতে, খবরের কাগজের ওপর বসে থাকি তোমার বই বাঁচাবো বলে। যার সবকিছুই হারিয়ে যায়, তাকে আর কেউ ভালোবাসার গল্প শোনাতে পারে না। শোনাবার দরকারও পড়ে না। ইন্দোনেশিয়ার সবুজ অরণ্য কল্পচিত্রের মতো মুছে গেছে। সারি সারি পাম গাছ সেখানে। তেল রপ্তানীকারক পেটমোটা শিল্পপতিদের সাজানো মিনি জু। ওরাংওটাঙদের হাহাকার।

কোনটা সামাল দেব? বাঁধভাঙ্গা বন্যা নাকি ভাইরাস? এতো যে মঙ্গা-আঁধার চারিদিকে। দেওয়াল জুড়ে পেন্সিল ঘষে ঘষে লিখে রাখি শূন্যতা। ইরেজার ঘষে ঘষে ছোট করতে থাকি নিজেকে।

আমার সাম্পান ল্যান্ড করে নদী তীরে। বালি চিকচিক, সামনে এগোই। পড়ে আছে একাকি বিষণ্ণ নুড়ি। না বলা কথা, আমার সাম্পান। যে নীল রঙের একটা গান ঘরছাড়া করত আমাকে, এই সম্বল।

Share.

15 Comments

  1. অরিজিৎ চক্রবর্তী on

    খুব সুন্দর। কবিতার ছায়াছবি এক।

  2. Bapi green taxi on

    খুব সুন্দর একটি লেখা এটা পোড়ে নিজেকে ঘুড়ি অনুভব করি ও উড়ে যায় দূর দিগন্তে নদ-নদী ছাড়িয়ে আকাশের টুকরো টুকরো ছড়িয়ে থাকা মেঘের রাজ্যে পিছনে ফিরে দেখতে পাই স্মৃতি থেকে মুছে যাওয়া শৈশবটাকে।
    ধন্যবাদ স্যার।

  3. ধ্রুব অধিকারী। on

    খুব ভালো লাগলো স্যার।।।‌‌‌ অসাধারণ ।

Leave A Reply

Exit mobile version