দেশে বেকারত্ব বেড়েই চলেছে। আজ নয়, বিগত বেশ কয়েক বছর ধরেই দেশে কর্মসংস্থানের হাল ধাপে ধাপে অবনতির পথেই ধাবিত হয়েছে। দলে দলে যুবক চাকরি না পেয়ে হতাশায় ভুগছেন। গত পাঁচ দশকে দেশে বেকারত্বের হার সর্বোচ্চ সীমায় পৌঁছেছে।তবে দেশের এই চরম বেকারত্ব ভোট বাক্সে তেমন ভাবে প্রতিফলিত হয়েছে এমনটা বলা যায় না।পরিসংখ্যান বলছে, দেশে এই মুহুর্তে ১ কোটি ৭০ লক্ষ যুবক হন্যে হয়ে চাকরি খুঁজছেন। কিন্তু তাঁদের অধিকাংশই যে শেষ পর্যন্ত একটা চাকরি জোগাড়করতেসক্ষম হবে তার কোনও নিশ্চয়তা নেই। ফলে অনেকেই চাকরি জোগাড় করতে অতিসক্রিয় নন। চাকরি না পাওয়ার হতাশাই তাঁদের মনোবল ভেঙে দিচ্ছে তাঁরা পিছিয়ে যাচ্ছেন। অনেকেই আবার বেসরকারি ক্ষেত্রে চাকরি পেয়ে ছেড়ে দিয়েছেন বা দিতে বাধ্য হয়েছেন। কারণ, কম মাইনে অথচ হাড়ভাঙা পরিশ্রম।

গবেষণা তথা জাতীয় অর্থনীতিকেন্দ্রিক চিন্তন সংস্থা সেন্টার ফর মনিটরিং ইন্ডিয়ান ইকোনমি-র দেওয়া পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২১ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রতি ৫ জন স্নাতকের মধ্যে একজন বেকার। কর্মহীন থেকে এই সব বেকার যুবকদের মধ্যে তৈরি হচ্ছে চরম হতাশা। ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম এই অবস্থা বিশ্লেষণ করে জানাচ্ছেন, মোহভঙ্গতা দেশের যুবদের ক্রমশই গ্রাস করছে। অন্যদিকে  অসংগঠিত ক্ষেত্রে যারা কাজ করেন, তাঁদেরও কাজের ক্ষেত্রে কোনও নিশ্চয়তা নেই। তাঁরা বয়স শেষে নিজেদের পরিবারকে ভবিষ্যতের সুরক্ষা দিতে পারছেন না। অন্যদিকে শিক্ষিত যুবসমাজ কষ্ট করে যাওবা লেখাপড়া শিখল কিন্তু দেশে চাকরি নেই। কেউ কেউ শিক্ষাদীক্ষার মানসম্মান জলাঞ্জলি দিয়ে যদিও বা বেসরকারি বা অসংগঠিত ক্ষেত্রে একটা কাজ জোটালো কিন্তু সেখানেও বেতন দিনমজুরির থেকেও কম। অন্যদিকে নেই কোনও স্বাস্থ্যবিমা কিংবা চাকরির নিশ্চয়তা। চাকরি বাজারের সংকট যত প্রকট হচ্ছে যুব সমাজ ততই আশাহত হচ্ছে। এর ফলে ভারতের অর্থনীতিতে ( #IndianEconomy ) এক বিরূপ প্রভাব পড়তে শুরু করেছে।

দেশের এই অবস্থায় ২০১৪-য় তিনি বছরে ২ কোটি করে কর্মসংস্থানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। তাঁর কথা অনুযায়ি গত আট বছরে ১৬ কোটি বেকার ছেলেময়ের চাকরি হওয়া উচিত ছিল।এরপরও ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটের আগে দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি কর্মসংস্থানের ঢালাও প্রতিশ্রুতি দেন। কিন্তু গত আড়াই বছরে তাঁর দেওয়া প্রতিশ্রুতি কার্যত শূন্যতেই স্থির হয়ে আছে। বিরোধীরা প্রশ্ন তুললেই অতিমারি পরিস্থিতির দোহাই দিয়েছেন। কিন্তু সেই অজুহাত কতদিন? হয়ত সেই কথা ভেবেই কয়েকদিন আগে প্রধানমন্ত্রী আগামী দেড় বছরে ১০ লক্ষ ‘সরকারি চাকরি’র ঘোষণা করেন। কিন্তু দেশে চাকরিটা কোথায়? গত আট বছর ধরে তিনি কর্মসংস্থানের হাজার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, বস্তুতপক্ষে একটিও যে কার্যকরি হবেনা তা তিনি ভালই জানতেন। সেখানে ফের কীভাবে ১০ লক্ষ চাকরি আগামী দেড় বছরে হবে? দেশে ভারি শিল্প বলতে কিছুই প্রায় নেই। সরকারি সংস্থাগুলি একটি দুটি করে চলে যাচ্ছে বেসরকারি খপ্পরে। এবারএকটি চাল খেলতে চাইল কেন্দ্র।

এদেশে সরকারি ক্ষেত্রে কর্মসংস্থানের বড় ভরসা হল রেল, তারপরেই ভারতীয় সেনা। সেই চাকরিতে স্থায়িত্ব আছে, যে কারণে গরিব ও নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের তরুণরা দলে দলে সেনা বাহিনীতে চাকরির জন্য ছোটেন। কেন্দ্র সেনায় নিয়োগের ঘোষনা করল- অগ্নিপথ প্রকল্পে ( #Agnipath Scheme )(সশস্ত্র বাহিনীর তিন শাখা স্থল, জল এবং নৌসেনা) ৪৫ হাজার চুক্তিভিত্তিক সেনা নিয়োগ। কিন্তু এই চাকরিতে ৭৫ শতাংশকেই চার বছরের মধ্যে অবসর নিতে হবে। হাতে ১০ থেকে ১২ লক্ষ টাকা এলেও তারপরে কী হবে? নেই কোনও পেনশনের ব্যবস্থা। তার মানে ফের তাঁদের নতুন করে চাকরি খুঁজতে হবে। ফলে ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত। যদিও উত্তরপ্রদেশ, হরিয়ানার মতো কয়েকটি রাজ্য পুলিশ ও অন্যান্য পরিষেবাগুলিতে অগ্নিবীরদের অগ্রাধিকার দেওয়া হবে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। কিন্তু অগ্নিবীরেরা প্রাক্তন সেনাকর্মীদের সমান সুযোগ পাবেন কি না, তা স্পষ্ট নয়।

ফলে কেন্দ্রের ‘অগ্নিপথ’ প্রকল্পের চাল অগ্নিপথে পরিণত হল। বিক্ষোভ হিংসার আকার ধারন করে। উত্তেজিত জনতা কয়েক ডজন রেলওয়ে কোচ, ইঞ্জিন এবং স্টেশনে আগুন দেয় এবং বিজেপি অফিস, যানবাহন এবং অন্যান্য সম্পত্তিতে আগুন ধরিয়ে দেয়, পুলিশকে রাজ্যের প্রায় এক তৃতীয়াংশে ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ করতে বাধ্য হয়।সেনায় চাকরি হচ্ছে মানে যুবসমাজের মন খুশিতে ভরে যাবে। কেন্দ্রের এই রাজনৈতিক চালটি যুবসমাজ বেশ ভাল ভাবেই বুঝতে পারে, কেন্দ্র যে ভাবনায় চালটি চেলেছিল তা বুমেরাং হয়ে গেল। আসলে বেকারত্ব নিয়ে ক্ষোভ যুবমানসে ছাই চাপা আগুন হয়েছিল, ‘অগ্নিপথ’সেখানে অগ্নিসংযোগ ঘটায়। যে কারণে আন্দোলনকারীদের প্রশ্ন, যোগ্যতা থাকলেও কেন বাকি ৭৫ শতাংশকে সেনায় নিয়োগ করা হবে না। কেন স্থায়ী সেনাদের মতো সমান ঝুঁকি নিয়ে কাজ করেও পেনশন বা গ্র্যাচুইটির সুবিধা মিলবে না।

তা ছাড়া বিগত বেশ কয়েক বছরে বেকারত্ব চরম সীমায় পৌঁছেছে। বেকারত্ব নিয়ে যুবসমাজের মধ্যে ক্ষোভ জমছিল অনেক দিন ধরেই। নানা ভাবে তা চাপা ছিল। সেই চাপা ক্ষোভবিক্ষোভ হয়ে আছড়ে পড়েছে। অগ্নিপথ প্রকল্পের ঘোষণা একটি আগুনের ফুলকির মতো কাজ করেছে। সেনাবাহিনীতে বেশি সংখ্যায় যুবক চাকরি করতে যান বিহার, উত্তরপ্রদেশ, হরিয়ানার মতো রাজ্যগুলি থেকে, লক্ষ্যনীয় বিক্ষোভ বেশি এই রাজ্যগুলিতে। যুবসমাজ বুঝেছেন যে অগ্নিপথ বাড়তি কর্মসংস্থানের সুযোগ নয় বরং চাকরির নিরাপত্তা, সুযোগসুবিধা কম। এই ক্ষোভ ভোটবাক্সে কতটা প্রতিফলিত হবে বলা মুশকিল তবে কেন্দ্রের রাজনৈতিক চাল যুবসমাজ ধরে ফেলেছে।
Share.

3 Comments

  1. susmit mazumdar on

    বছর চারেকের কাজ, শুধু সরকারি বলে, ২১ থেকে পঁচিশেই অবসর হতে পারে। হাতে ১০ থেকে ১২ লক্ষ টাকা। তারপরে কী হবে ? তা জানা নেই। বিপদের আঁচ এখানেই

  2. sushil kumar mandal on

    দেশে চাকরির অবস্থা খুবই খারাপ। প্রত্যেক বছর কোটি কোটি চাকরির প্রতিশ্রুতি দেওয়ার পর কেন্দ্র এখন দেড় বছর ১০ লক্ষ চাকরির কথা বলছে, কেন্দ্র নিজেও ভালো করেই জানে সমস্যাটা কোথায় হচ্ছে। চাকরির অভাব রয়েছে দেশে। তলায় তলায় যে আগুন জ্বলছে সেই আগুনকে চাপা দিতেই ১০ লক্ষ চাকরির কথা বলা হয়।

  3. Amarnath Mondal on

    কেন্দ্র সরকারের এই প্রকল্প এক বোকা বানানোর চেষ্টা। বেকারত্ব আর রক্তহীন আর্থিক অবস্থার সমাধানের এক হাস‍্যকর ও অনাকাঙ্ক্ষিত ‘জুগাড়’।

Leave A Reply

Exit mobile version