কলকাতা ব্যুরো: একেই সংক্রমণের ভয়। সঙ্গে লক ডাউনের কারনে আর্থিক মন্দা। আর এই দুইয়ের গেরোয় ভরা গ্রীস্মেও এবার এসি থেকে মুখ ফিরিয়েছে আম গেরস্ত। মে- জুন, জুলাইয়ে হাজার অফারেও এসি বিক্রি হচ্ছে না দোকান থেকে। যেখানে গত বছরও চড়া দামে ঠান্ডা হওয়ার যন্ত্র কিনতে হুড়োহুড়ি পড়েছিল, সেখানে এবার বাজার ফাঁকা। কেউ বলছেন, করোনা আতঙ্কে জেরবার মানুষ। এসিতে থাকলে করোনা সংক্রমণের সম্ভাবনা অনেক গুন বাড়ে শুনে সাবধানি তারা। অনেকে তো আবার ঘরে এসি থাকা সত্ত্বেও চালাচ্ছেন না। যদি কিছু হয়, এই আশঙ্কায়। আর যাদের নেই এবছর নতুন এসি কেনার কথা ভেবেছিলেন, তারাও সেই পরিকল্পনা বাতিল করেছেন। আবার কারও মতে লকডাউনের কারণে চাকরি ব্যবসা সব কিছুর অবস্থাই খুব খারাপ। মানুষের হাতেও এখন টাকা নেই। সেই কারণেই এসি কিনে খরচ বাড়াতে চাইছেন না। তবে কারণ যাই থাক এসি যে সেই অর্থে বিকোচ্ছে না তা সিইএসসির তথ্যেই পরিষ্কার।


সিইএসসি সূত্রে জানা গিয়েছে, কলকাতা ও শহরতলিতে গতবছর ১ এপ্রিল থেকে ৩১ শে জুলাই পর্যন্ত নতুন এসির আবেদন জমা পড়েছিল ৫৫ হাজার। আর নতুন এসি বিভিন্ন শোরুম থেকে বিক্রি হয়েছিল প্রায় ৯০ হাজার। সেখানে এবার পয়লা এপ্রিল থেকে একুশে জুলাই পর্যন্ত নতুন এসির আবেদন হয়েছে মাত্র ৮৫০০। সিইএসসির এক কর্তা জানান, অনেকেই এসির জন্য আলাদা করে মিটার নেন না বা বিদ্যুতের লোড বাড়ান না। অর্থাৎ এসি কেনার সেই তথ্য বিদ্যুৎ দফতরের কাছে থাকে না। তাই গত বছর গরমের চার মাস প্রায় ৯০ হাজার এসি বিক্রি হলেও নতুন এসির আবেদন জমা পড়েছিল মাত্র ৫৫ হাজার। আর এবছর সেখানে সাড়ে আট হাজারেই আটকে গিয়েছে ঠান্ডা হওয়ার যন্ত্র বিক্রি। যা দেখে রীতিমতো মাথায় হাত এসি প্রস্তুতকারক সংস্থাগুলির কর্তাদের। একই অবস্থা শোরুম মালিকদেরও।


বেশিরভাগই দুষছেন এই করোনার সংক্রমণের ভয়কে। তাদের কথায়, যেহেতু সর্বত্র প্রচার হচ্ছে এসি থেকে করোনা সংক্রমণের সম্ভাবনা বাড়ে তাই নতুন করে তা কিনতে ভয় পাচ্ছেন সাধারণ মানুষ। কিন্তু ঘরে এসি চালালে তো আর কোনো সংক্রমণ হওয়ার সম্ভাবনা নেই। কোনও গণপরিবহন বা সিনেমা বা শপিং মল, এসব জায়গায় তবু একটা চান্স থাকে। যেহেতু অন্য অনেক ধরনের মানুষ সেখানে থাকেন। কিন্তু ঘরে তো পরিবারের লোক ছাড়া আর কেউ থাকেন না। এটাই মানুষ বুঝতে চাইছেন না তাই এসিও কিনছেন না। সিইএসসি-র বিদ্যুৎ বিল নিয়ে যে হয়রানি এখন চলছে সাধারণ গৃহস্থের, তাও এসি ব্যবহারের আগে মানুষকে দু’বার ভাবাবে বলেও মনে করছেন অনেকে।


চিকিৎসকদের অবশ্য দাবি, এসিতে এই অসুখ ছড়ানোর প্রবণতা বেশি। তাদের কথায়, কোভিড ১৯ ড্রপলেটের মাধ্যমে ছড়ায়। কথা বলা, হাঁচি,কাশির ফলে যে ড্রপলেট তৈরি হয় তা আয়তনে প্রায় ৫ মাইক্রোমিটারের বেশি । এত বড় কণার পক্ষে এক মিটারের বেশি দূর পর্যন্ত যাওয়া খুব মুস্কিল। তাই সেটা এক মিটারের মধ্যেই থিতিয়ে পড়ে। বিজ্ঞানীদের মত, যে ড্রপলেটের এক মিটারের মধ্যে লুটিয়ে পড়ার কথা, এয়ার কন্ডিশনের বায়ুর প্রবাহ সেগুলোকে অনেকটা বেশি দূর পর্যন্ত টেনে নিয়ে যেতে পারে। চিকিৎসকদের এই মতকেই গুরুত্ব দিয়ে তাই এসির কেনা থেকে বিরত থাকছে আম গেরস্ত।

Share.
Leave A Reply

Exit mobile version