আট থেকে আশি যে কোনো বয়সীর অতি প্রিয় এবং পৃথিবীর জনপ্রিয়তম ফ্লেভারগুলির অন্যতম হল চকলেট। ঝকমকে মোড়কটা দেখলেই যে কারও মন খুশিতে ভরে যায়। আর সেই মোড়ক যার হাতে ধরা থাকে তার সহজ সরল হাসিটা দেখলেও আনন্দ হয়। ঝকমকে রাংতায় মোড়া চকোলেট আসে বেলজিয়াম, সুইজারল্যান্ড কিংবা আমেরিকার মতো উন্নত দেশগুলি থেকে। চকলেটের আসল জিনিস কোকোয়া বীজ যোগান দেয় পশ্চিম আফ্রিকার দুই দেশ আইভরি কোস্ট আর ঘানা।

চকোলেট পছন্দ অপছন্দ নিয়ে কেউ কোনও প্রশ্ন তুলেছে কিনাজানা নেই। তবে চকোলেট যদি বৃষ্টি হয়ে ঝরে পড়ে? যে কেউ বলবেন, এমন দৃশ্য শুধু কল্পনায় হতে পারে, বাস্তবে নয়। কিন্তু বাস্তবে যদি ঘটে তাহলে কেমন অনুভূতি হবে! কিন্তু একদিন এই ঘটনা বাস্তবেই ঘটেছিল। সুদূর ইতিহাস নয়। মাত্র কয়েক বছর আগের ঘটনা। ২০২০ সালের ১১ আগস্ট। রাস্তায় মানুষজন চলছে নিজের খেয়ালে। কোথাও কিছু নেই। মানুষজন লক্ষ্য করলেন আকাশ থেকে ঝরে পড়ছে খয়েরি গুঁড়োর মত কিছু।

বৃষ্টির মত ঝরে পড়ে ছড়িয়ে পড়ছে বাড়িঘর, রাস্তাঘাট সর্বত্র।সাদা চাদরের ওপর খয়েরি গুঁড়ো পড়ে বরফে মোড়া এলাকাগুলি নিল এক অদ্ভুত রূপ। এই বৃষ্টি রীতিমত হৈচৈ ফেলে দেয় সারা শহরে। কী জিনিস এটা! প্রাথমিক হতভম্ব ভাব কাটিয়ে তাঁরা দেখার চেষ্টা করলেন কি ঝরছে আকাশ থেকে। আর দেখতে গিয়ে তাঁরা একাধারে হতবাক এবং খুশি। কিছুক্ষণ পরে বোঝা গেল ওই গুঁড়ো আসলে আর কিছুই নয়, চকলেট তৈরির মূল উপাদান কোকোয়া গুঁড়ো। সেই গুঁড়োতে এক নিমেষে ছেয়ে গেল ওল্টেন শহর ও পারিপার্শ্বিক এলাকাগুলো।

কিন্তু চকোলেটের বৃষ্টি কী সম্ভব? অবাক প্রশ্ন নিয়ে গোটা শহরটা রহস্য উন্মোচনে মেনে পড়ে। রহস্য উন্মোচনে নেমে পড়ে স্থানীয় প্রশাসনও।ততক্ষণে আশপাশের বরফে মোড়া বিভিন্ন জায়গার শ্বেতশুভ্র বরফের চাদরের ওপর খয়েরি গুঁড়ো ভরে গেছে। এক অদ্ভুত রূপ নিয়েছে বরফে মোড়া এলাকাগুলো। যেন কেউ বরফের ওপর চকোলেট ছড়িয়ে দিয়েছে! ঘটনাটি ঘটেছে সুইৎজারল্যান্ডে। সুইৎজারল্যান্ডের শহর ওল্টেন। এই শহর এবং তার আশপাশের এলাকা জুড়ে চকোলেটের এই বৃষ্টি রীতিমত হৈচৈ ফেলে দেয়। দেখা যায় আদপে ওই গুঁড়ো হল চকোলেট তৈরির মূল উপাদান কোকোয়া-র।

আসলে চকলেট তৈরির প্রাথমিক উপাদান কোকোয়াকে শুকনো করে গুঁড়িয়ে নেওয়া হয়।যার পাউডার চকলেটের কারখানাগুলি নিজেরাই করে নেয়। আর সেখানেই হয় গন্ডগোলের সূচনা! সুইজারল্যান্ডের একটি বিখ্যাত চকলেট কোম্পানি হল লিন্ড অ্যান্ড স্প্রুয়েঞ্জলি। সেই কোম্পানিরই স্থানীয় একটি কারখানার ভেন্টিলেশন সিস্টেমে সমস্যা হয়েছিল সেদিন। ব্যস! গুঁড়ো করে রাখা কোকোয়া প্রবল হাওয়ার দাপটে কারখানা থেকে বেরিয়ে আশপাশে ছড়িয়ে পড়তে থাকল। যার ফলে সৃষ্টি হয়েছিল রূপকথার মত বাস্তবেও চকলেট বৃষ্টির। আর সেই বৃষ্টির সাক্ষী থেকেছিল গোটা ওল্টেন শহরবাসী।

প্রসঙ্গত, সুইজারল্যান্ডের বিখ্যাত এবং জনপ্রিয় চকলেট হল ‘টোবলেরওয়ান’। প্রায় ১১৫ বছরের পুরোনো এই চকলেটটি ছোটদের খুব প্রিয় মুখরোচক খাবার।এই চকলেট সুইজারল্যান্ডের বিখ্যাত কনফেকশনারি নির্মাতা থিওডোর টোবলেরের তৈরি। তাঁর নামেই চকলেটের নামটি রাখা হয়েছিল।

Share.
Leave A Reply

Exit mobile version