“ভাষাটা তৈরি হয়ে গেলে আমার ডাকে সাড়া দিয়ে সারা পৃথিবী থেকে ছুটে আসবে সব মহানায়কেরা। লেলিনের দেশ থেকে আসবে আন্দ্রে তারকোভস্কি, মার্কিন মুল্লুক থেকে স্ট্যানলি কুব্রিক, চার্লস চ্যাপলিন, বার্গম্যান, ডি সিকা, রসোলিনি, ফেলিনি, গদা, ত্রুফো, ব্রেসো, ওযু, কুরোসাওয়া, বার্তোলুচ্চি। আমি দু’হাত দিয়ে আলিঙ্গন করব গ্রিফিতের নতুন জন্ম, আইজেনিস্টাইনের বিপ্লব আর বুনুয়েলের পরাবাস্তবতা …” এটি একটি বাংলা ছবির সংলাপ। ছবিটি বিশ্ব সিনেমার ইতিহাসের দীর্ঘতম সিনেমার স্বীকৃতিপ্রাপ্ত। ছবির ভাষ বাংলা। নাম‘আমরা একটা সিনেমা বানাবো’।ছবির পরিচালক আশরাফ শিশির। এই সিনেমাটিকে বলা হচ্ছে বাংলা ভাষায় নির্মিত দীর্ঘতম ফিকশন ফিল্ম। ছবিটির দৈর্ঘ্যে ২১ ঘন্টা। ইমপ্রেস টেলিফিল্ম প্রযোজিত ছবিটি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারও পেয়েছে।

বাংলাদেশের পাবনা শহরের একমাত্র সিনেমা হল ‘রূপকথা’-য় ২০২০ সালের ১৯ ও ২০ জুলাই দুদিন ধরে প্রথমবার ২১ ঘণ্টার ছবিটি প্রদর্শিত হয়েছিল।সকাল ৯টায় ছবিটি দেখানো শুরু হয়।মাঝে দু-তিনটি বিরতি দিয়ে চলে রাত ১১টা পর্যন্ত।

ছবিতে অভিনয় করেছেন রাইসুল ইসলাম আসাদ, সুমনা সোমা, স্বাধীন খসরু, মাসুম আজিজ, আয়শা মুক্তি, প্রাণ রায়, তেরেসা চৈতি, এলিনা শাম্মী, অরণ্য রানা, দুখু সুমন, জান্নাত সোমা, ছাড়াও চার হাজার শিল্পী।

আবহ সংগীত রাফায়েত নেওয়াজ, সম্পাদনা সাব্বির মাহমুদ, চিত্রগ্রহণ মোহম্মদ আশরাফুল, সমর ঢালী ও সাব্বির। গান গেয়েছেন আইয়ুব বাচ্চু-সহ আরও বহু শিল্পী।

২০০৯ সালে শুরু করে দীর্ঘ ৮ বছর ধরে ১৭৬ দিন ধরে শুটিং চলেছে এই ছবির। ছবিটির লোকেশন ছিল ঈশ্বরদীতে পদ্মা নদী ও হার্ডিঞ্জ ব্রিজের আশপাশের গ্রামে। এর আগে ছবিটি হংকং, কানাডা, ক্রোয়েশিয়া, কলম্বিয়া, ফ্রান্স, অস্ট্রেলিয়ার ১০টি আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে প্রদর্শিত হয়েছে।

ছবি সম্পর্কে আশরাফ শিশির জানান, ‘তৃতীয় বিশ্বের ছোট্ট একটি দেশের ছোট্ট একটি শহরে মানুষের যে জীবন, তা একেবারেই সাদাকালো। তাঁরা যে স্বপ্ন দেখে, তা কিছুটা রঙিন। জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত মানুষ মূলত নিষ্পাপ, শুধু পরিস্থিতি–পারিপার্শ্বিকতার কারণে তারা অনেক অন্যায় করতে বাধ্য হয়।

সিনেমা বানানোর বিপ্লবের পাশাপাশি এখানে এমন এক নিষ্পাপ মানুষের গল্প রয়েছে, যে জীবনে একটি পিঁপড়াকেও হত্যা করেনি, অথচ ছবির শেষে সে একজনকে খুন করে ফেলে। এমন এক নারীর জন্য সে এ কাজ করে, যাকে সে কোনো দিনও চোখে দেখেনি।’

তবে শুধুমাত্র দৈর্ঘের দিক থেকেধরলেসিনেমা দুনিয়ার সবচেয়ে দীর্ঘ হল‘কিওর ফর ইনসোমেনিয়া’। এই ছবির পরিচালক জন হেনরি টাইমিস। ৮৭ ঘণ্টা অর্থাৎ ৫,২২০ মিনিট। এ ছবি আমি দেখিনি, কে দেখেছে তাও জানি না। যাদেরঘুম হয় না তারা এই ছবি কি দেখেছেন? নিরীক্ষামূলক এই ছবিতে কবি এ ডি গ্রোবান ৪,০৮০ পৃষ্ঠার একটা কবিতা পড়েছেন।

বস্তুত ছবিটিকে নির্মাতা আশরাফ শিশিরের ভিন্নধর্মী এক নিরীক্ষণ বলা যায়। যে নিরীক্ষণ আমাদের বার বার শুনিয়েছে ক্যামেরা অবসকিউরা, ম্যাজিক ল্যান্টার্ন, সাদাকালো, রঙিন, স্বল্পদৈর্ঘ্য, পূর্ণদৈর্ঘ্য, মুক্তদৈর্ঘ্য, স্যুররিয়ালিজম, ইম্প্রেশনিজম, এক্সপ্রেশনিজম, কিউবিজম, ডাডায়িজম, মডার্নিজম, পোস্ট-মডার্নিজম, রিয়্যালিজম, ম্যাজিক রিয়্যালিটি, নিওরিয়্যালিজম, ম্যাজিক রিয়্যালিজম আর পয়েটিক রিয়্যালিজমের কথা।

Share.
Leave A Reply

Exit mobile version