পর্ব- ১

থানার সেরেস্তায় ধুলো পড়ে যাওয়া ফাইলের মধ্যেই পড়েছিল এই ফাইলটিও। ছয় বছর আগের একটি হত্যা রহস্য। থানা-সিআইডি চেষ্টা করেও মেলেনি কোনো সূত্র। ফলে আদালতে রিপোর্ট দিয়ে ইতি টানতে হয় মামলায়। অন্তরালেই থেকে যায় আততায়ী।

কিন্তু লকডাউনের আবহে পুরোনো ফাইল ঝালিয়ে দেখতেই আন-লক হল দিনহাটা থানার মামলাটির। কিনারা হল আরতি চক্রবর্তী হত্যা মামলাটির।২০১৪ সাল থেকে পুলিশের চোখে ফাঁকি দিয়ে পালিয়ে থাকলেও অবশেষে ধরা পড়তে হল ‘কুইন অফ ক্রাইম’ পূর্নিমা সাহাকে।
কুইন অফ ক্রাইম? হ্যাঁ। তেমনটাই বলছেন তদন্তকারীরা। আর কেনই বা বলবেন না? আপাত সাদামাটা চেহারার মাঝ বয়সী এক মহিলা। কিন্তু তার অপরাধের ঝুলিতে রয়েছে অন্তত দুটি খুন, খাওয়ারের সঙ্গে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে গৃহস্থ বাড়ি থেকে লুঠের অন্তত ডজন খানেক মামলা। অপরাধের জগতে হাতেখড়ি সম্ভবত ১৯৯৯ সালে। গ্যাংটক, দার্জিলিং-সদর, ধুপগুড়ি, দিনহাটার মামলা তো রয়েছেই। প্যান্ডোরা বক্স খুললে হয়তো উত্তরবঙ্গের আরও থানায় তার অপরাধের আরও কীর্তি সামনে আসবে। আপাতত শ্রীঘরে দিন কাটাচ্ছে উত্তর দিনাজপুরের রায়গঞ্জের পূর্নিমা।


আপতত যে ঘটনার সূত্রে আবার পুলিশের জালে ধরা পড়তে হল এই অপরাধের রাণীকে, সেটা একটু বলে নেওয়া যাক।
দিনহাটাব পুরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডে স্ত্রী আরতিকে নিয়ে থাকতেন সুবোধ চক্রবর্তী। দু’জনেরই বয়স সত্তরের বেশি। ছেলে থাকতেন অন্যত্র। রান্নার লোক খুঁজছিলেন ওই দম্পতি। সেই কাজের নামেই নাম ভাড়িয়ে চক্রবর্তী বাড়িতে কাজে ঢোকে পূর্নিমা। নিজের নাম বলে মঞ্জু সাহা। একাকি দম্পতির সহানুভূতি অর্জন করতে নানা গল্প ফাঁদে। ফলে সাতপাঁচ না ভেবে ‘মঞ্জু’কে কাজে রেখে দেন সুবোধ-আরতি। দু’দিন ঠিকঠাক কাজ করলেও আসল কাজ হাসিল করে তৃতীয় দিনের মাথায়। দম্পতির খাবারে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে ওই বাড়ি থেকে ১০ ভরি সোনার গয়না এবং নগদ ৩০ হাজার টাকা নিয়ে ‘পাতাল লোকে’ ডুবে দেয় ‘মঞ্জু’। দু’জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হলে মারা যান আরতি।  মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে আসেন সুবোধ বাবু।
দিনহাটা থানা খুনের মামলা রুজু করে তদন্তে নামে। দেখা যায় পুরো পরিচয়টাই ছিল ভুয়ো। অভিযুক্তের কোনো ছবিও পাওয়া যায়নি। সিআইডি গোয়েন্দারা মহিলার স্কেচ আঁকান। কিন্তু সব চেষ্টা করেও অপরাধীর নাগাল পেতে ব্যর্থ হন তদন্তকারীরা। ফলে চারবছর তদন্ত চালিয়ে কোনো সূত্র না পেয়ে আদালতে ফাইনাল রিপোর্ট দিয়ে কেসটি বন্ধ করে দিতে হয় পুলিশকে।
সেই মামলাতেই সম্প্রতি চন্ডীতলার বাড়িতে থেকে পূর্নিমাকে গ্রেপ্তার করে দিনহাটা থানার পুলিশ। ইতিমধ্যেই তাঁর টিআই প্যারেড হয়ে গিয়েছে। খুনের মামলার পূর্ননির্মাণ করে ফেলেছেন তদন্তকারীরা।

চলবে……

Share.
Leave A Reply

Exit mobile version