কলকাতা ব্যুরো : আগে ছিল বাবুদের পূজো। বাবুরাই করতেন , বাবুরাই দেখতেন। সাধারণের পূজো দেখার অধিকার ছিল না সেভাবে। বাবুদের বাড়ির সামনে দাড়িয়ে থাকত দারয়ান। হাতে চাবুক। সাহেব – সুবো আর অতিথি ছাড়া অন্য কারো প্রবেশ নিষেধ। কেউ ঢুকতে গেলে লাঞ্ছনা আর চাবুকের বাড়ি খেয়ে বেরোতে হতো। দূর্গা পূজা তখনও একটা শ্রেণীর মধ্যে আবদ্ধ ছিল। সমগ্র বাঙালির সে পূজো নয়। দুর্গাপুজো বাঙালির জাতীয় উৎসব হয় পূজো সার্বজনীন হবার পর। প্রথমে বাড়ির পূজো, তারপর বারোয়ারি, সব শেষে সার্বজনীন।

এই বারোযারির পিছনে একটা গল্প আছে। তখনকার দিনে হুগলি জেলার গুপ্তিপাড়ার জমিদার খুব ঘটা করে পূজো করতেন। নিমন্ত্রিত থাকতেন উচ্চ সমাজের তাবড় তাবড় লোকজন। আর অবশ্যই সাহেবরা। সে পুজোর ধারে কাছে ঘেঁষতে পারতো না সাধারণ মানুষ। ওই গ্রামে বাস করতো বারো বন্ধুর এক দল। দিনের পর দিন একই ঘটনা। তারা গেলেন বেজায় চটে। সালটা ১৭৯০ । বারো বন্ধু ঠিক করলেন তারা নিজেরা চাঁদা তুলে দুর্গাপুজো করবেন।পূজো হলো। প্রাণ ভরে সাধারণ মানুষ দেবীর আরাধনা করলেন। বারো ইয়ারের পূজো বলে, সেই থেকে নাম বারোয়ারি।

তবে বারোয়ারি আর সার্বজনীন পুজোর পার্থক্য কোথায় ? বারোয়ারি হয় নিজেরা চাঁদা তুলে আর সার্বজনীন সাধারণ মানুষের টাকায়। এবার স্থান, কাল, পাত্রের পরিবর্তন হলো। সার্বজনীন প্রথম শুরু হলো কলকাতায়। সালটা ১৯২৬। সে বছর প্রথম এই কলকাতাতেই সিমলা আর বাগবাজারে আয়োজিত হলো শহরের প্রথম সার্বজনীন দুর্গোৎসব।

তখন সিমলা ব্যায়াম সমিতির খুব নাম ডাক। সেই সমিতির দেখভাল করেন আতিন্দ্র নাথ বোস। তিনি প্রথম কলকাতার সার্বজনীন পুজোর উদ্যোক্তাদের একজন। সালটা ১৯২৬। সে বার মৃৎশিল্পী ছিলেন কুমারটুলির বিখ্যাত নিতাই পাল। সে বছর প্রতিমা হলো একচালার। সেই শুরু। এর পর ১৯৩৯ সালে দূর্গা, লক্ষ্মী, গণেশ, কার্তিক, সরস্বতী সবার আলাদা আলাদা চালায় পূজো হয়।

বাগবাজারের দুর্গাপুজো শুরু হয় ১৯১৮ সালে। কথিত স্থানীয় কিছু যুবক এক ধনী লোকের বাড়ি দূর্গা পূজা দেখতে গিয়ে অপমানিত হন। তার পরের বছরই তারা বারোয়ারি পূজো চালু করেন। সবার জন্য উন্মুক্ত করে দেন দুর্গাপুজোর দ্বার। অনেক পন্ডিত এই পুজোর বিরোধিতা করেছিলেন প্রথমে। পরে আর এঁটে উঠতে পারেন নি।

Share.
Leave A Reply

Exit mobile version