ময়দান রহস্যময়ই বটে। দিগন্ত বিস্তৃত্ব মাঠ। রাত নামতেই ময়দান চত্বরের নেমে আসে অন্ধকার। আশেপাশের রাস্তাগুলো হয়ে যায় শুনশান। কয়েক বছর আগে অন্তত এমনই চেহারা ছিল। সেটাই কী সহজে কাম তামাম করে আজও খুনীদের আড়ালে থাকার ক্ষেত্রে অনুঘটকের কাজ করেছে? তদন্তকারীদের অনেকটা তেমনই ধারনা। কারণ, একটি বা দুটি নয়। এই ময়দান থানা তল্লাটে তিনটি খুনের ঘটনার রহস্য উন্মোচন করা যায়নি আজও। যার মধ্যে একটি ঘটনা ২০১৬ বছর পুরোনো। বাকি দুটি ঘটে বছর চারেক আগে এক মাসের ব্যবধানে। একেএকে বিভিন্ন কিস্তিতে সেই হত্যারহস্যের কাহিনী তুলে ধরব। শুরুয়াৎ করা যাক ১৬ বছর পুরোনো খুনের ঘটনাটি দিয়ে।
                        

ইন্দ্রনীল বসু

শেষ পর্ব

টালিগঞ্জ থানা থেকে সেই তথ্য পেয়ে আবার নয়া উদ্যোমে খুনের রহস্যভেদের চেষ্টা করে ময়দান থানার পুলিশ ও লালবাজারের গোয়েন্দারা। তদন্তকারীরা জানতে পারেন, মনোহর পুকুর রোডের বাসিন্দা এক যুবকের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল সবিতার। ওই এলাকার এক ব্যক্তির গাড়ির চালাতো মহেশ। আদতে বিহারের মুজাফফরপুরের বাসিন্দা। এমনকী, ৩০ মে যেদিন রাতে সবিতার দেহ উদ্ধার হয়, সেদিন বিকেলে মহেশের সঙ্গেই সবিতাকে শেষবার দেখা গিয়েছিল বলেও আশেপাশের লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানতে পারে পুলিশ। সবিতার নিখোঁজ হওয়ার দিন থেকে মহেশও বেপাত্তা বলে জানা যায়। তবে তার একটি ছবি জোগাড় করে পুলিশ।

ঘটনাস্থল থেকে ফের কিছু সূত্র মিলতে পারে, সেই আশাতেই ফের ডাক পরে সেই নিরাপত্তারক্ষীর। যিনি পুলিশকে দেহ উদ্ধারের খবর দিয়েছিলেন। তাঁকে দ্বিতীয় দফার এই জিজ্ঞাসাবাদ পর্বে যে তথ্য উঠে আসে তাতে তদন্তকারীদের শিড়দাঁড়া দিয়ে খানিকটা হিমেল বাতাস বয়ে যায়। শুধু দেহ পড়ে থাকতে নয়, ওই নিরাপত্তারক্ষী নিজের চোখে তরুণীকে খুন হতেও দেখে ছিলেন। ওই যুবক চাঞ্চল্যকর বয়ানে জানান, ময়দান চত্বরে সন্ধ‍্যার পরে অনেক যুগল আসেন। লুকিয়ে লুকিয়ে তাঁদের সেই ঘনিষ্ঠ মূহুর্তে দেখার অভ্যাস রয়েছে তাঁর। কাজের ফাঁকে নেশা করতে করতে সেইসব করতেন তিনি। সেদিন রাতে একইভাবে ওই তরুণীকে এক তরুণের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হতে দেখেন তিনি। কিন্তু তারপরই ঘটে সেই ভয়ানক ঘটনা। মিলনের পর তরুণীর সঙ্গী যুবক তাঁর গলায় ওড়নার ফাঁস দিয়ে খুন করে। সে দৃশ্য দেখেই পালিয়ে আসেন তিনি। কিন্তু সে সময় পুলিশকে সেই কথা জানালে তার নেশার কথা জানাজানি হয়ে যেতে পারে। ফলে কাজ খোয়ানোর আশঙ্কায় তিনি ওই ঘটনা চেপে গিয়েছিলেন বলে পুলিশের কাছে দাবি করেন। মহেশের ছবি পুলিশ তাঁকে দেখালে সেটি শনাক্ত করেন ওই নিরাপত্তারক্ষী। মহেশ খুন করেছে একাধিক সূত্রে তা নিশ্চিত হলে তার খোঁজে কার্যত চিরুনি তল্লাশি চালায় পুলিশ। একাধিকবার বিহারে তাঁর বাড়িতে তল্লাশি চালায় পুলিশ। আত্মীয় পরিজন, সম্ভাব‍্য ডেরা সব জায়গায় খোঁজ করেও টিকি ছোঁয়া যায়নি সন্দেহভাজন ওই যুবকের। অগত্যা ২০০৬ সালে আদালতে রিপোর্ট দিয়ে কেসটি বন্ধ করে দেয় পুলিশ। সবিতা কী মহেশকে বিয়ের জন্য চাপ দিচ্ছিল? বিবাহিত মহেশ পথের কাটা সরাতেই কী খুন করে? না কী অন্য কোনো মোটিভ? মেলেনি উত্তর। হয়তো আর মিলবেও না!
এক পুলিশের আধিকারিকের আক্ষেপ, ওই নিরাপত্তা কর্মী সেদিন সব ঘটনা জানালে হয়তো ‘আনডিক্টেট’ কেসের তালিকায় থাকতো না এই কেসটি।

(শেষ)

Share.
Leave A Reply

Exit mobile version