রহস্যময়ই বটে। দিগন্ত বিস্তৃত্ব মাঠ। রাত নামতেই ময়দান চত্বরের নেমে আসে অন্ধকার। আশেপাশের রাস্তাগুলো হয়ে যায় শুনশান। কয়েক বছর আগে অন্তত এমনই চেহারা ছিল। সেটাই কী সহজে কাম তামাম করে আজও খুনীদের আড়ালে থাকার ক্ষেত্রে অনুঘটকের কাজ করেছে? তদন্তকারীদের অনেকটা তেমনই ধারনা। কারণ, একটি বা দুটি নয়। এই ময়দান থানা তল্লাটে তিনটি খুনের ঘটনার রহস্য উন্মোচন করা যায়নি আজও। যার মধ্যে একটি ঘটনা ২০১৬ বছর পুরোনো। বাকি দুটি ঘটে বছর চারেক আগে এক মাসের ব্যবধানে। একে একে বিভিন্ন কিস্তিতে সেই হত্যা রহস্যের কাহিনী তুলে ধরব। ইতিমধ্যে একটি ঘটনা তুলে ধরেছি। এবার দ্বিতীয়টি। যা ঘটে চার বছর আগে।

ইন্দ্রনীল বসু

শেষ পর্ব

মাছের ড্রামে মেলা দেহটি শনাক্তকরণে মরিয়া চেষ্টা শুরু করলেন তদন্তকারীরা। ছবি পাঠানো হল সব থানায়। পুলিশের বিভিন্ন হোয়াটসআপ গ্রুপ থেকে ফেসবুকেও পোস্ট করা হল সেই ছবি। কিন্তু নিট ফল জিরো।

দেহটি ছিল মাছের ড্রামে। আবার জাল দিয়ে ঢাকা ছিল দেহটি। তাহলে কি মাছ ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন খুন হওয়া ওই যুবক? কোনো সম্ভবনাই উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছিল না সেই মূহুর্তে। ফলে সেই ছবি নিয়ে তদন্তকারীরা ছুটলেন কোলে মার্কেট, মানিকতলা বাজার থেকে বিভিন্ন মাছের আড়ৎ, বাজারে। অন্যদিকে, যে মাছের ড্রামে দেহটি পাওয়া যায় সেটির মাধ্যেমেও ‘ব্রেক থ্রু’ পাওয়ার চেষ্টা চলতে থাকল। অর্থাৎ যদি কোনো সূত্র মেলে। ওই ধরনের ড্রাম হাওড়া ও কলকাতার যে সব জায়গায় তৈরি হয় সেখানে গিয়ে খোঁজখবর শুরু হল। লক্ষ্য ড্রামের গায়ে থাকা চিহ্ন থেকে ওই রকমের ড্রাম নির্দিষ্ট ভাবে কোথায় তৈরি হয় তা জানা। কিন্তু এবারও নিরাশ হয়ে ফিরতে হল তদন্তকারীদের। অকুস্থলের আশেপাশে কোনো সিসিটিভি ছিল না ঠিকই। কিন্তু তার আগে পরের বিভিন্ন রাস্তার সিসিটিভিও পরীক্ষা করল পুলিশ। সাহায্য নেওয়া হল ‘টাওয়ার ডাম্বিং’ পদ্ধতির।

ভোর বেলা দেহটি উদ্ধার হয়েছিল। মোটামুটি তদন্তকারীরা নিশ্চিত ছিলেন রাতে গাড়ি চলাচল কমে যাওয়ার পর থেকে ভোরের আলো ফোটার আগে, কোনো এক সময় দেহটি সেখানে পাচার করা হয়েছিল। ফলে ওই সময়কালের মধ্যে সেই অঞ্চলের মোবাইল টাওয়ার গুলির মাধ্যেমে যতগুলি ফোনকল হয়েছে টাওয়ার ডাম্পিংয়ের মাধ্যেমে সেগুলিকে চিহ্নিত করা হয়। সেই সব কলারদের থেকে চিহ্নিত করে তাঁদের ডেকে পাঠিয়ে কথাও বলে পুলিশ। এক্ষেত্রেও কোনো ফল মিলল না।

এদিকে, দু’মাসেরও বেশি সময় গড়িয়ে গিয়েছে। সব চেষ্টা করেও যখন কোনো আশার আলো পাওয়া যাচ্ছে না, তখন তদন্তকারীরা একটি অভিনব উপায়েও নিহতের পরিচয় জানার চেষ্টা করলেন। ওই যুবকের দেহ উদ্ধারের পর তাঁর ফিঙ্গারপ্রিন্ট সংগ্রহ করেছিল পুলিশ। আধার কর্ড তৈরির সময় প্রত্যেক নাগরিকের ফিঙ্গারপ্রিন্ট নেওয়া হয়। ফলে আধারের তথ্যের সঙ্গে ওই যুবকের ফিঙ্গারপ্রিন্টে মিলিয়ে দেখার চেষ্টা। কারও সঙ্গে সেই ফিঙ্গারপ্রিন্ট মিললে জানা যেতে পারে যুবকের পরিচয়। ঘটনা জানিয়ে চিঠি দেওয়া হল আধার কর্তৃপক্ষকে।

কিন্তু এক্ষেত্রেও সাহায্য মিলল না। থানা থেকে হোমিসাইড শাখা আবার হোমিসাইড থেকে থানা কেস নিয়ে তদন্ত চালালেও কোনো ফল মেলেনি। এক মাস দু’মাস করে চার বছর পেরিয়ে গিয়েছে। লাগাতার চেষ্টাতেও কিনারা না হওয়া এক সময় হাল ছেড়ে দিতে বাধ্যে হয় পুলিশ। খাতায় কলমে কেস ‘ক্লোজড’ না হলেও এখনও রহস্যই হয়ে রয়েছে গিয়েছে ময়দানের এই হত্যাকান্ড। তাহলে কী অপরাধ বিজ্ঞানের ভাষায় যাকে বলা হয় ‘পারফেক্ট ক্রাইম’সেই নিঁখুত অপরাধ হয়েই থেকে যাবে এই ঘটনা? উত্তর মেলেনি আজও।

                                                                                                                (শেষ)
Share.
Leave A Reply

Exit mobile version