অদ্ভুতুড়ে

কোথায় হারিয়ে গেল আনজিকুনি গ্রাম

By admin

February 01, 2024

কানাডার নুনাভুতের কিভালিক অঞ্চলের একটি হ্রদের নাম আনজিকুনি। হ্রদটির খ্যাতি মিষ্টি জলের মাছের জন্য। মাছ ধরা পৃথিবীর আদিম পেশাগুলির মধ্যে অন্যতম। এমন লেকের পাশে যে জেলেদের গ্রাম গড়ে উঠবে সেটাই স্বাভাবিক। এস্কিমোদের ইনুইট গোষ্ঠীর একদল লোক মাছ ধরার জন্যই আনজিকুনি লেকের পাশে এসে বসবাস শুরু করে তারপর ধীরে ধীরে সেখানে আরও লোকের আনাগোনা শুরু হয়। একদিন আনজিকুনি লেকের পাশে প্রায় দু-আড়াই হাজার লোকের একটি গ্রাম গড়ে ওঠে। আনজিকুনি হ্রদের নামেই গ্রামটির নাম হয় আনজিকুনি গ্রাম।

মিষ্টি জলের হ্রদ থেকে মাছ ধরা আর সেই মাছ দিয়ে তৈরি করা উপাদেয় ভোজন, সঙ্গে মাতাল করা চোলাই মদের উষ্ণ পানীয় ছিল ইনুইটদের খুব প্রিয়। ইনুইটরা ছিল অতিথিবৎসল। তাদের আতিথেয়তায় ওই এলাকায় দূর থেকেও অনেক মানুষের আনাগোনা ছিল। এখানে ক্ষুধার্ত শিকারীরাও রাতের আঁধারে আসতো। এই ভাবে আশেপাশের দু-চার অঞ্চলে গ্রামটি পরিচিত হয়ে ওঠে। আসল পরিচয় অবসর-বিনোদন আর আড্ডা-কোলাহলের এক নৈসর্গিক স্থান হিসেবে।

এক কানাডিয়ান শিকারী জো লেবল মদ্যপানের উদ্দেশ্যেই কয়েকবার আনজিকুনি গ্রামে এসেছিলেন। এই আসা যাওয়ায় গুটিকতক পরিবারের সঙ্গে তার সখ্যতাও গড়ে উঠেছিল। ১৯৩০ সালের নভেম্বর মাসের প্রচণ্ড শীতের এক জ্যোৎস্নাস্নাত রাতে সেই কানাডিয়ান শিকারী কাঠ চোলাই পানের উদ্দেশ্যে এবং অনেকদিন পর সরল-সহজ মানুষগুলির সঙ্গে মদ্যপান এবং জমিয়ে আড্ডা দিতেই শীতের হিমশীতল হাওয়া উপেক্ষা করে আনজিকুনি গ্রামে এসে হাজির হলেন। কিন্তু আনজিকুনি পৌঁছে তিনি এক অদ্ভুত নীরবতা  অনুভব করলেন। প্রথমে তিনি ভাবলেন তার মনের ভুল। কারণ,  সেই পরিচিত পথ-ঘাট, ঘরবাড়ি সবই রয়েছে। যদিও তাদের একদল লোক প্রায় সারারাতই জেগে থাকে তবুও বেশ রাত হয়েছে এজন্যই বোধহয় এমন নীরবতা, হয়ত সবাই গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন।  তাদের ঘুমিয়ে পড়াটাই স্বাভাবিক কারণ সারাদিন তারা কঠোর পরিশ্রম করে। এই সব সাতপাঁচ ভাবতে ভাবতে লেবল এক ঘর দু ঘর করে এগোতে এগোতে গ্রামের আরও ভেতরে যেতে থাকলেন। কিন্তু গ্রামের প্রায় মাঝখানেও এসেও সেই নীরবতাই অনুভব করলেন। কোথাও কোনো টু শব্দটি নেই, শুধু তার বুটের আর  ঠাণ্ডা বাতাসের শব্দ ছাড়া।  

এরপর তিনি পরিচিতদের ঘরের দিকে এগিয়ে গিয়ে জোর গলায় তাদের নাম ধরে ডাকতে লাগলেন। কিন্তু কেউ তার ডাকে সাড়া দিয়ে বেরিয়ে এল না। তিনি দু-একটি ঘরের দরজার কপাটে ঠক ঠক শব্দ করলেন, ধাক্কা দিলেন। দেখলেন, দরজা ভেতর থেকে খোলা। ঘরের ভেতরে এলোমেলোভাবে পড়ে আছে ইনুইটদের ব্যবহৃত জিনিসপত্র, কাপড়চোপড়, আরও নানা কিছু। তার চোখে পড়লো উনুনে অর্ধসিদ্ধ খাবারের পাত্র। তখইন তিনি ভাবলেন এই ঘরের লোকজন হয়ত কোথায় গিয়েছে। তাই অন্য আরেকটি ঘরের দিকে পা বাড়ালেন। কিন্তু না, সেখানেও একই ঘটনা! এবার তিনি বুঝলেন নিশ্চয় কিছু একটা গণ্ডগোল হয়েছে নইলে কোথাও সবাই মিলে যদি গিয়েও থাকে তবে ঘরবাড়ি, জিনিসপত্র এভাবে অগোছালো করে ফেলে চলে যাওয়ার কথা নয়। আর যদি তারা কোথাও যায়ই তবে তো অন্তত পায়ের ছাপ রেখে যাবে কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় নিজের বুটের ছাড়া আর একটি পায়ের ছাপ তিনি কোথাও দেখতে পেলেন না।  তৎক্ষণাৎ তিনি পার্শ্ববর্তী টেলিগ্রাফ অফিসে গিয়ে পার্বত্য পুলিশ বাহিনীকে ফোন করেন। পুলিশ দ্রুত গ্রামটিতে পৌঁছে তন্ন তন্ন তল্লাশি করেও কোনো জনমানবের চিহ্ন খুঁজে পায়না বরং  যা পাওয়া গেল তা রীতিমতো রক্ত হিম করার মতো ব্যাপার।

তারা লক্ষ করলেন গ্রামের কবরস্থানের প্রায় সবগুলি কবর ফাঁকা, কেউ যেন লাশ তুলে নিয়ে গিয়েছে। গ্রামের অদূরে তারা ৭ টি স্লেজ কুকুরের আর্তনাদ শুনে গিয়ে দেখে গ্রামবাসীদের সাতটি পোষা স্লেজ কুকুরের অর্ধমৃত নিথর দেহ। কুকুরগুলিকে দেখে মনে হচ্ছে ভয়ংকর কিছুর সঙ্গে প্রাণপণ লড়াই করেছে তারা। সেদিন পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা এখানকার ঘটনার কোনো কিছুই আঁচ করতে পারেনি। আশপাশের গ্রামবাসীও জানে না ঠিক কী হয়েছে আনজিকুনিদের সঙ্গে।আজ অবধি আনজিকুনিদের সেই নিখোঁজ রহস্যের কোনো সমাধান হয়নি। জানা যায়নি নিগূঢ় রহস্যে আবৃত এই জল্পনা-কল্পনার পেছনের ঘটনা। তদন্ত করেও এর কোনো কূলকিনারা করতে পারেনি কেউ। তবে, ধারণা করা হয় কোনো অতিপ্রাকৃতিক ঘটনার সাক্ষী হয়েছিল তারা, যার রহস্য আজও অজানা, হয়তো অজানা হয়েই থাকবে চিরদিন।