এক নজরে

বাজেটে সাধারণ মানুষ কী পেলেন

By admin

February 02, 2024

লোকসভা ভোটের দিনক্ষণ স্থির না হলেও কয়েকমাস পরেই সেই মহাযুদ্ধ। তার ঠিক আগে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন পেশ করলেন অন্তর্বর্তীকালীন ‌বাজেট ২০২৪-২৫। তাঁর প্রায় এক ঘন্টার বাজেট বৃক্ততায় তিনি দেশবাসীকে যেমন কোনো বড় স্বপ্ন দেখাননি ভোটমুখী কোনও চমকও রাখেননি বরং কিছুটা ভারসাম্যের বাজেট পেশ করারই চেষ্টা করেছেন মোদী সরকারের অর্থমন্ত্রী। তবে বাস্তব পরিস্থিতি পর্যালোচনার জন্য দেখে নেওয়া দরকার কেন্দ্র সরকার অন্তবর্তীকালীন বাজেটে কোন খাতে কত টাকা বরাদ্দ করলো।

অন্তর্বর্তী বাজেটে প্রতিরক্ষা মন্ত্রকে বরাদ্দ হয়েছে ৬.১ লক্ষ কোটি টাকা।উল্লেখ্য, ২০২৩-২৪ সালের বাজেটে এই খাতে ৫.৯৪ লক্ষ কোটি বরাদ্দ করা হয়। তার মানে এবার গত বছরের তুলনায় ১৩ শতাংশ বেশি বাজেট প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রকে দেওয়া হল। দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে সড়ক এবং পরিবহন ক্ষেত্র। এই খাতে বরাদ্দ করা হয়েছে ২.৭৮ লক্ষ কোটি টাকা।

তৃতীয় স্থানে রয়েছে রেলওয়ে। মোদী সরকার আলাদা রেল বাজেটকে অবলপ্ত করেছে। ফলে সাধারণ বাজেটেই রেলের জন্য টাকা বরাদ্দ করা হয়। এবারের বাজেটে রেল মন্ত্রকের জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে ২.৫৫ লক্ষ কোটি টাকা। চতুর্থ স্থানে রয়েছে ক্রেতা সুরক্ষা, খাদ্য এবং খাদ্য বন্টন মন্ত্রক। এবারের বাজেটে এই খাতে টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে ২.১৩ লক্ষ কোটি টাকা। মোদী সরকার আভ্যন্তরীন নিরাপত্তায় বিশেষ জোর দিয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের জন্য এবার বরাদ্দ করা হয়েছে ২.০৩ লক্ষ টাকা। গ্রামীন‌ অঞ্চলগুলিতে উন্নয়নে বিশেষ জোর দেওয়ার কথা বলছে মোদী সরকার। এবারের বাজেটে গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রকের জন্য ১.৭৭ লক্ষ টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। কেমিক্যাল এবং ফার্টিলাইজার মন্ত্রকের জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে ১.৬৮ লক্ষ কোটি টাকা। যোগাযোগ মন্ত্রকের জন্য দেওয়া হয়েছে ১.৩৭ লক্ষ কোটি টাকা। সব থেকে কম বরাদ্দ করা হয়েছে কৃষিক্ষেত্রে। মুখে কৃষকদের উন্নয়নের কথা বললেও এই খাতে কৃষকদের জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে ১.২৭ লক্ষ কোটি টাকা।

সামনে লোকসভা ভোট।তাই অনেকেই ভেবেছিলেন ভোটের কথা মাথায় রেখে হয়তো জনমুখী বা জনমোহিনী বাজেট হবে। মোদী সরকার একাধিক প্রকল্প থেকে করছাড় দেবে এমনটাই ভেবেছিল সাধারণ মধ্যবিত্ত। কিন্তু সে পথে হাঁটেন নি অর্থমন্ত্রী নির্মলা। ফলে আশাহত হয়েছেন সাধারণ মানুষ। কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সরকার অনেক ব্যবস্থা নিয়েছেন বলে বাজেট বক্তৃতিতায় বলেছেন বটে। কিন্তু আমজনতা ভাল করেই জানেন বাস্তব চিত্রটি আসলে কী। নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে হুহু করে, সেদিকে সরকারের কোনো দৃষ্টি নেই। এই বাজেটে ওষুধের দাম, শাক সবজির দাম, রান্নার গ্যাসের দাম, ট্রেন ভাড়া কমার কোনও দিশা দেখা গেল না। যে কারণে আমজনতার বিরাট অংশ বলছেন দিশাহীন বাজেট। এই বাজেট সাধারণ মধ্যবিত্ত মানুষের কথা ভেবে পেশ করা হয়নি। কারণ যে সমস্যা গুলির মধ্য দিয়ে প্রতিদিন তাঁদের যেতে হচ্ছে এই বাজেটে তার কোনও সুরাহা পাওয়া যায়নি।

বাজেটে করছাড় নিয়েও বিশেষ কোনও ঘোষণা করলেন না নির্মলা। আগের কর পরিকাঠামোকেই অপরিবর্তীত রাখলেন। কাজেই সে দিক থেকেও তেমন কোনও সুরাহা মিললো না। গোটা বাজেটে কর্মসংস্থান নিয়ে একটি কথা বলা হয়নি। কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী যুবাদের প্রশিক্ষণ দিয়ে যোগ্য করে তোলার খতিয়ান দিয়েছেন ঠিকই কিন্তু অন্তর্বর্তী বাজেটে সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে কোনও সুযোগ তৈরির বার্তা নেই। দেশে বহুদিন ধরেই কর্মসংস্থান একটা বড় সংকটে পরিণত হয়েছে। তার উপর চরম আকার নিয়েছে মুদ্রাস্ফীতি। কিন্তু এই বাজেটে মধ্যবিত্তের জন্য কোনো আশার কথা বললেন না অর্থমন্ত্রী নির্মলা। বরং ভোটের কথা ভেবে মহিলাদের উন্নয়নে জোর দিয়েছেন। যদিও কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী বাজেটে উল্লেখ করেছেন মহিলা, গরিব, যুবা দেশের ভিত্তি। কিন্তু তাঁর সেই বক্তব্যের সঙ্গে অন্তর্বর্তী বাজেটের কার্যত কোনও মিল পাওয়া যায়নি।

Budget 2024 – 1

বাজেটে মহিলাদের অর্থনৈতিক স্বনির্ভরতা নিয়ে একাধিক প্রকল্পের কথা বলা হয়েছে। লাখপতি দিদি প্রকল্পের আওতায় ৮ কোটি মহিলা সুবিধা পেয়েছেন বলে খতিয়ান তুলে ধরেছেন। কিন্তু এই অন্তর্বর্তী বাজেটে গাড়ি বাড়ির কেনার ক্ষেত্রে সুদের হার কমানো বা মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে কোনও পদক্ষেপ দেখা গেল না। কাজেই আমজনতার কাছে এই বাজেট এক কথায় অর্থহীন হয়ে দাঁড়িয়েছে। কারণ তাঁরা কি সুবিধা পাবেন?