কলকাতা ব্যুরো: মমতার ছোঁয়া বিজেপিতে।অবিশ্বাস করবেন না। এই ছোঁয়ায় এখন নাকি জেরবার বঙ্গ বিজেপি।পরিস্থিতি এমন যে, কেন্দ্রীয় নেতারা করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি মাথায় করে ছুটে এসেছেন পশ্চিমবঙ্গে।উপায় কী? বঙ্গ বিজেপির রাজ্য সভাপতি নাকি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্টাইলে দল চালাচ্ছেন।মুখে তো বলেনই যে, তিনি কাউকে পরোয়া করেন না, তিনি একাই রাজ্যে ক্ষমতায় আনবেন বিজেপিকে, কাজেও নাকি তৃণমূলনেত্রী।কাউকে পাত্তা দেন না। কারও পরামর্শ শোনেন না। ভাবটা এমন, দল চলবে তাঁর একার কথায়। মমতা স্টাইল তো বটেই।কিন্তু প্রমাদ গুনেছেন দিল্লির নেতারা। তাঁর সভাপতিত্বে দল নাহয় লোকসভায় ১৮টি আসন পেয়েছে।তাই বলে দিলীপ তো আর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নন। তৃণমূলের সব নেতা জানেন, মমতা না থাকলে বাজারে তাঁদের দাম থাকবে না।দলটা গড়েছেন মমতাই। দিলীপের সেই ক্যারিশমা নেই।তিনি দলটাও গড়েননি। তাঁর তেমন নিয়ন্ত্রণ নেই দলের ওপর।তিনি এই পথে চললে দলে বিদ্রোহ অনিবার্যই।বিক্ষোভ তো ইতিমধ্যে শুরু হয়েই গিয়েছে।দলের একজন সাংসদও তাঁর সঙ্গে না কি নেই।সকলেই দিলীপের কাজকর্ম তো বটেই আলটপকা মন্তব্যে রেগে কাঁই হয়ে আছেন।রাজ্যের অন্য নেতারা এখন নিয়মিত তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ রাখেন না।যে যাঁর মতো চলেন। মাথায় হাত পড়েছে জগৎ প্রকাশ নাড্ডাদের।দলে এমন বিশৃঙ্খল অবস্থা থাকলে জনসমর্থন যাই থাকুক, ২০২১-এর তীরে এসে তরী ডোবার সমূহ সম্ভাবনা।পরিস্থিতি সামলাতে তাই আজ থেকে হাইপ্রোফাইল বৈঠক শুরু হয়েছে। না, দলীয় দপ্তরে নয়।নিউ টাউনে দিলীপ ঘোষের বাসভবনে। একটা কথাও যেন বাইরে না যায়।বিজেপির অন্দরে কান পাতলে শোনা যাচ্ছে, দিল্লির বাঘা বাঘা নেতারা মহাফ্যাসাদে পড়েছেন।দিলীপ ঘোষকে সামলানো শক্ত। মিটিংয়ে কেন্দ্রীয় নেতাদের কথা মন দিয়ে শোনেন।কিন্তু কাজে ও কথায় তিনিই শের। সবাইকে নিয়ে চলা তাঁর ধাতে নেই।কিন্তু দিলীপকে ছাড়লেও যে আপাতত চলে না।আরএসএসের ঘরের লোক, অথচ শক্ত হাতে দলকে ধরতে পারবেন, এমন লোক আছে কোথায়?মুকুল রায়ের যোগ্যতা নিয়ে নাড্ডাদের সংশয় নেই। বরং দিল্লির নেতাদের কাছে ভালোই কদর আছে এই তৃণমূল নেতাদের।কিন্তু হাজার হলেও প্রাক্তন তৃণমূল নেতা তো। কোথাও একটা কিন্তু আছে।তাছাড়া আরএসএস ছাপ না থাকলে এই দলটায় এমন উচু পদের নাগাল পাওয়া কঠিন।আপাতত তাই ভারসাম্যের খেলায় দল বাঁচাতে দিলীপের বাড়ির বৈঠকে হাজির বিজয়বর্গীয়, মেনন।পাঁচ দিনের বৈঠক, কিন্তু রোজ নয়। আজ, কালের পর ২১,২৩ ও ২৫ অগস্ট।জেলা নেতাদের বিভিন্ন দিনে ডেকে আনা হবে। দিনে ৫টা জেলা।মুরলীধর লেনে আলাপ করলেই বোঝা যাচ্ছে, দিলীপের প্রভাব কতটা, তা যেমন বোঝার চেষ্টা চলবে জেলায় জেলায়, তেমনই জেলা নেতাদের বুঝিয়ে দেওয়া হবে, শুধু দিলীপ দিলীপ করে লাভ নেই।তাহলে বেশিদিন আসন টিঁকবে না। আসলে দলে দিলীপ প্রায় নিঃসঙ্গ।রাজ্য পার্টিতে তাঁর সঙ্গে আছেন কেবল সায়ন্তন বসু, রাজু বন্দ্যোপাধ্যায় আর সুব্রত চট্টোপাধ্যায়। বিজেপির দায় আছে বোঝানো যে, দলটা “পার্টি উইথ ডিফারেন্স।”রেজিমেন্টেড দল হিসাবে প্রতিষ্ঠা এখন খুব কঠিন।পাঁচ দিনের ব্রেন স্ট্রোমিং সেশনে সেই মরিয়া চেষ্টাটাই করবেন কৈলাস বিজয়বর্গীয়, শিবশঙ্কর, অরবিন্দ মেননরা।বাংলা দখল না হলে যে এই নেতাদেরও আম যাবে, ছালাও যাবে।