এক নজরে

জলের জন্যই তৈলমর্দন, জলের জন্যই যুদ্ধ

By admin

November 05, 2020

মৈনাক শর্মা

চতুর্দিক প্লাবিত এলাকায় পানীয় জলের সঙ্কটই কিন্তু বড় হিসেবে দেখা দেয়। চারিদিকে থৈ থৈ করছে জল, অথচ বন্যা কবলিত এলাকায় পানীয় জলের জন্য হাহাকার। আগামী বিশ্বের বাস্তবতা কিন্তু হতে চলেছে অনেকটা এরকমই। গ্লোবাল ওয়ার্মিং এর কারণে গলছে হিমবাহ। বাড়ছে সমুদ্রের জলস্তর। যার জেরে আগামী ৫০ বছরের মধ্যে সমুদ্র গর্ভে বিলীন হওয়ার বাস্তব আশঙ্কা রয়েছে কলকাতা সহ বিশ্বের বহু শহরেরই। আবার একইসঙ্গে ক্রমশ ভুগর্ভস্থ জলের পরিমাণ কমতে থাকায় বিশ্বে তীব্র থেকে তীব্রতর হতে চলেছে পানীয় জলের সঙ্কট। যা কার্যত এক আকালের রূপ পেতে চলেছে বলেই মনে করছেন ভুবিজ্ঞানীরা।ভেবে দেখুন যদি একফোঁটা জলের জন্য এক দেশকে অন্যের সাথে যুদ্ধ করতে হয়! হ্যাঁ, ঠিকই শুনছেন এমনই হতে চলেছে আমাদের ভবিষ্যৎ। ওয়ার্ল্ড ওয়াইল্ডলাইফ ফান্ড এর মতে ২০৫০ সালের মধ্যে পৃথিবীর ১০০ টি শহর হবে জলশুন্য। এই ১০০ টি দেশের শহরগুলির মধ্যে ৩০ টি ভারতের যার মধ্যে প্রথমে রয়েছে জয়পুর। তার পরের তালিকায় আছে সিটি অফ জয় কলকাতা, রয়েছে ইন্ডোর , অমৃতসর , শ্রীনগর , বিশাখাপত্তনম, বাণিজ্য নগরী মুম্বই ও ভারতের সিলিকন ভ্যালি বাঙ্গালুরুও। ওয়ার্ল্ড ওয়াইল্ডলাইফ ফান্ডের ওয়াটার রিস্ক রিপোর্টার মধ্যে ২০৩০ থেকে ২০৫০ র মধ্যে পাঁচটি শহরের ঝুঁকির স্কোরও নির্ধারণ করে যার মধ্যে লুধিয়ানা, চন্ডিগড়, অমৃতসর ও আহমেদাবাদের স্কোর যথাক্রমে ৪.৯ , ৪.৮ , ৪.৭ ও ৪.৬ । রিপোর্টটির মতে অধিক জনবসতি পূর্ণ এলাকাতে পানীয় জলের সমস্যা বেশি দেখা যাবে। ২০২০ সালের ১৭ শতাংশের তুলনায় ২০৫০ সালে ৫১ শতাংশ জনসংখ্যা বাড়বে বলে মত ওয়ার্ল্ড ওয়াইল্ডলাইফ ফান্ড-র।

ভূগর্ভস্থ পানীয় জলের অভাবের ও প্রতিনিয়ত মাটি ক্ষয়ের র জন্যই ইন্দোনেশিয়া কে তার রাজধানী জাকার্তা থেকে অন্য স্থানে পরিবর্তনের চিন্তা ভাবনা শুরু করছে সে দেশের সরকার। জাকার্তা দ্বীপের ভূভাগ সমুদ্রের উপর অবস্থিত ও সেই ভূভাগের উপরে রয়েছে মিষ্টি জলের স্রোত বর্তমানে জাকার্তার জনসংখ্যা বেশি হওয়ার কারণে ভূগর্ভস্থ মিষ্টি বা পানীয় জল প্রায় শেষের মুখে ও সেই কারণের জন্যই মাটি ক্ষয়ের ফলে প্রতিবছর শহরের বেশ কিছু অংশ বিলুপ্ত হচ্ছে সমুদ্রে। এমনই ভয়াবহ সমস্যা দেখা যেতে পারে ভারতের উপকূল বর্তী অঞ্চলগুলিতেও।জলের জন্য বিবাদ এদেশেও নতুন নয়। কাবেরী নদীর জল নিয়ে কর্ণাটক ও তামিলনাড়ুর মধ্যে, জল নিয়েই পাঞ্জাব ও হরিয়ানার মধ্যে বিবাদ চলেছে বহুদিন। এক সময় যা ছিল পঞ্চ নদের সুজলা সুফলা উপত্যকা এখন তার একটি বড় অংশই মরুভূমি। রাজস্থান হয়ে তা এগোচ্ছে দিল্লির দিকেও। তিস্তার জল বণ্টন নিয়ে ভারতের কাছে বাংলাদেশের একইসঙ্গে চলছে কাকুতি মিনতি, অন্যদিকে চলছে কূটনৈতিক লড়াইও। অতীতেও যা হয়েছে গঙ্গার জল বণ্টন নিয়ে।বিজ্ঞানীদের মতে, কলকাতা সহ রাজ্যের অন্তত ৮ জেলায় দ্রুত হারে নামছে জলস্তর। বর্ষার জল যা ভরাট করতে পারছে না। তাই বিপদের আশঙ্কা থাকছেই। অথচ এখনো সেচ, বিশেষত বোরো চাষের সময় যা লাগামছাড়া ভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে। যা থেকে বাড়ছে বিপদের আশঙ্কা।সমুদ্রের লবনাক্ত জলকে পানীয় যোগ্য করার জন্য বিপুল অর্থ ব্যয় করতে হয় সৌদি আরবের মতো দেশকে। খনিজ তেলে সমৃদ্ধ হওয়া সত্ত্বেও পানীয় জলের বিপুল অভাব লক্ষণীয় সে দেশে। মানে সোজা কথায়, তেল আছে, জল নেই। বৃষ্টির পরিমান কম হওয়ায় সৌদি আরব পানীয় জলের জন্য ভূগর্ভস্থ জল স্রোত ছাড়াও সমুদ্রের লবনাক্ত জলকে মিষ্টি পানীয় জলে পরিণতর জন্য বিপরীত আস্রবণ বা রিভার্স অসমোসিস (RO যা বর্তমানে ফিল্টারগুলিতে ব্যবহার করা হয় )পদ্ধতির উপর নির্ভরশীল।পরিবেশ বিশ্লেষকদের মতে, জলজ জমি দখলের উদ্দেশে তৃতীয় বিশ্ব যুদ্ধের পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে। এছাড়া ইন্দোনেশিয়া ও সৌদি আরবের মতো ভারতের পরিণতি যেন না হয় সেই উদ্দেশে নাগরিক সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। অহেতুক জল অপচয় করা ভবিষতের প্রজন্মের জন্য কতটা ক্ষতিকারক সে সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণাও গড়ে তোলা জরুরি বলেই মত বিশেষজ্ঞদের।