এক নজরে

গণতন্ত্রে মহামূল্যবান ভোট  

By admin

April 23, 2024

বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্রের দেশ ভারতে গত ১৯এপ্রিল থেকে শুরু হয়েছে ১৮ তম লোকসভা নির্বাচন, চলবে ১জুন পর্যন্ত। এই নির্বাচনে মোট ভোটার প্রায় ৯৬ কোটি। এই ৯৬ কোটি ভোটারের প্রতিটি ভোটই খুবই মূল্যবান। কারণ, ভোটার মাত্র একজন কিংবা দেশের প্রত্যন্ত কোনও প্রান্তে কয়েকজন ভোটার থাকলেও তাদের কাছে পৌঁছানোর জন্য দেশের নির্বাচন কমিশন নজিরবিহীন পদক্ষেপ নিয়ে থাকে। হাতির পিঠে চেপে, অথবা খচ্চরের ওপর মালপত্র চাপিয়ে বুথে যাওয়া আবার গভীর জঙ্গলের ভেতর মাত্র একজন ভোটারের জন্য আলাদা ভোটকেন্দ্র তৈরি করা হয়ে থাকে।

একজন ভোটারের জন্য পোলিং বুথ

গুজরাটের গির ফরেস্ট হল সারা পৃথিবীতে এশিয়াটিক লায়ন প্রজাতির শেষ টিঁকে থাকা আবাসভূমি। সিংহের এই অভয়ারণ্যে, গির-এর গভীর জঙ্গলের ভেতরে সেই ২০০৭ সাল থেকে নির্বাচন কমিশন প্রতিবার ভোট এলেই একটি বিশেষ ভোটগ্রহণ কেন্দ্র তৈরি করে আসছে। জঙ্গলের ভেতর বানেজ নামে একটি জায়গায় ওই পোলিং বুথটিতে মাত্র একজনই ভোটার। ওই জঙ্গলের মধ্যে রয়েছে হিন্দুদের একটি প্রাচীন শিবমন্দির। ওই মন্দিরের পুরোহিত এবং উদাসীন আখড়ার একজন সন্ন্যাসী। মন্দির প্রাঙ্গণে তিনি একাই থাকেন। ওই জঙ্গলের ত্রিসীমানায় আর কোনও জনবসতি নেই, ফলে অনেকটা অঞ্চল জুড়ে তিনিই হলেন একমাত্র ভোটার।

গুজরাটের এই বিশেষ বুথটি ছাড়াও সুদূর চীন সীমান্তে অরুণাচল প্রদেশের প্রত্যন্ত গ্রাম মালোগামেও রয়েছে আর একটি পোলিং স্টেশন, যেখানে নথিভুক্ত ভোটারের সংখ্যা মাত্র একজন। ২০১৯ সালেও মালোগামের সেই একজন ভোটারের কাছে পৌঁছতে নির্বাচন কমিশনের কর্মীদের টানা চার দিন ধরে দুর্গম পাহাড়ি রাস্তা আর খরস্রোতা নদী উপত্যকা পাড়ি দিতে হয়েছিল। কারণ প্রতিটি ভোটই মূল্যবান। ভারতে নানা রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনে মাত্র এক ভোটের ব্যবধানে জয়-পরাজয়ের নিষ্পত্তি হয়, তার একাধিক উদাহরণ আছে। দেশের লোকসভা আসনগুলিতে যেখানে গড় ভোটারের সংখ্যা বেশ কয়েক লক্ষ সেখানেও জয়ের ব্যবধান দশেরও কম ছিল, এরকম অন্তত দুটো দৃষ্টান্ত দেওয়াই যায়। ১৯৮৯ সালে অন্ধ্রের অনকাপল্লি আসনে কংগ্রেসের কোনাথালা রামকৃষ্ণ আর ১৯৯৮ সালে বিহারের রাজমহল আসনে বিজেপির সোম মারান্ডি – এরা দুজনেই জিতেছিলেন নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বীর চেয়ে মাত্র ৯টি করে ভোট বেশি পেয়ে।

ডুবুরি নিয়ে পোলিং বুথে

দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য মেঘালয়ের পশ্চিম জৈন্তিয়া হিলস জেলার এক প্রান্তে, ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত ঘেঁষে রয়েছে কামসিং নামে একটি গ্রাম। ওই গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে চলেছে সারিগোয়াইন নদী, যার মাঝবরাবর রয়েছে সীমান্তরেখা। দুর্গম ও পাহাড়ি গ্রামটিতে এখন পর্যন্ত বিদ্যুতের খাম্বা বসেনি। সৌর বিদ্যুতের কয়েকটি প্যানেলই গ্রামবাসীদের ভরসা। এই গ্রামে বাস করে মাত্র বিশ-পঁচিশটি পরিবার। পাহাড়ের কোলে পানের চাষ করেই তাদের রুটি-রুজি চলে। কামসিং গ্রামে গাড়িতে চেপে পৌঁছনোর কোনও উপায় নেই। কারণ সেখানে কোনও রাস্তা নেই। জেলা সদর জোওয়াই থেকে গ্রামটির দূরত্ব ৬৯ কিলোমিটার, আর সবচেয়ে কাছাকাছি মহকুমা বা তহসিলদার অফিস আমলারেমে, সেটাও কামসিং থেকে অন্তত ৪৪ কিলোমিটার দূরে।

কামসিং পৌঁছনোর একমাত্র রাস্তা হল সারিগোয়াইন নদী। ফলে ভোটের সময় নির্বাচন কমিশনকে নৌকাতে করেই ভোটের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মী ও ইভিএম কামসিং গ্রামের পোলিং বুথে পাঠাতে হয়। ভোটকর্মীদের যেমন নৌকায় লাইফ জ্যাকেট পড়তে হয় তেমনি সঙ্গে কয়েকজন ডুবুরিও থাকেন। যাতে নদীপথে নৌকা ডুবে গিয়ে কারও জীবন সংশয় বা ভোটের সরঞ্জাম জলে পড়ে গেলে তা উদ্ধার করা যায়। কামসিং গ্রামে ৩৫ জন ভোটার, ২০ জন পুরুষ ও ১৫ জন নারী। এরা সবাই পানের বরজে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন।