এক নজরে

অন্য দেশ অন্য ক্রিসমাস

By admin

December 25, 2021

বড়দিনের আগের সন্ধ্যায় সিসিলি অঞ্চলে যে ভোজসভা হয় তাতে থাকে প্রায় বারো রকমের মাছ। ইংল্যান্ডসহ আরও কয়েকটি ইংরেজি সংস্কৃতির দেশে বড়দিনের খাওয়া দাওয়ায় থাকে টার্কি, আলু, শাকসব্জি, সসেজ, গ্রেভি ছাড়াও থাকে পুডিং, মিন্স পাই ও ফ্রুট কেক। পোল্যান্ড, পূর্ব ইউরোপ ও স্ক্যান্ডিনেভিয়া অঞ্চলের খাওয়া-দাওয়ায় থাকে নানা রকমের মাছ। বড়দিনে ওই সব দেশে ভেড়ার মাংসের খুব চল আছে। জার্মানি ও অস্ট্রিয়ায় হাঁস ও শুকরের মাংসের চল বেশি। ফিলিপিনে সবথেকে জনপ্রিয় হ্যাম। খাওয়া-দাওয়াতে যেমন নানা ধরণ তেমনি ঘর-বাড়ি সাজানোর রীতি-রেওয়াজও একেক দেশে আলাদা।

নাইজেরিয়ায় যারা শহরে থাকেন তারা বড়দিনে চলে যান গ্রামের দিকে। কিন্তু তার থেকেও বলার মতো বিষয় হল, বড়দিনে নায়জেরিয়ায় কেক নিয়ে তেমন কোনও উদ্দিপনা নেই।সে দেশে কেক তৈরির চেয়ে নানা ধরনের মাংসের সুস্বাদু পদ রান্না হয় বেশি। মাংসের ওইসব পদের নামও খুব গালভরা—জুলোফ রাইস, টুয়ো, ফুফু ঈত্যাদি, সঙ্গে থাকে নানান পানীও।

ইতালিতে বড়দিনেরউৎসব শুরু হয় ৮ ডিসেম্বর থেকে। ওইদিন থেকেই সবাই ক্রিসমাস ট্রি তৈরিতে হাত লাগায়। পাশাপাশি যীশুর জন্মকথা ফুটিয়ে তুলতে মা মেরি, জোসেফ, গাধা, হাঁস, যীশু ইত্যাদি তৈরি করা হয়। প্রায়এক মাসের উৎসব শেষ হয় ৬ জানুয়ারি। সেদিন সবাই ক্রিসমাস ট্রি তুলে ফেলে।বড়দিনের পরেরদিন ইতালিতে সেইন্ট স্টিফেন’স ডে পালন করা হয়। এছাড়া ইতালির দক্ষিণাংশ সিসিলিতে ১৩ ডিসেম্বর বছরের সবচেয়ে ছোট দিনটিতে সেন্ট লুসিস ডে পালিত হয়। এ দিন সেখানে গমজাত বা আটার তৈরি কোনও খাবার খাওয়া হয়না।

অস্ট্রেলিয়ায় যখন ক্রিসমাস আসে তখন গ্রীস্মকাল কিন্তু তাতেও জাঁকজমকে কিছু ঘাটতি পরেনা। ইউরোপ আমেরিকার মতো করেই সেখানে বড়দিনের উৎসব উদযাপন হয়।এমনকি আদিবাসীদের নিজস্ব ধর্ম থাকা স্বত্বেওতারাও বড়দিনের উৎসবে অংশগ্রহণ করে। বড়দিন উপলক্ষে অস্ট্রেলিয়ায়’দুটি বড় খেলা অনুষ্ঠিত হয়; বক্সিং ডে টেস্ট আর ইয়ট রেস-এটা ওদের ঐতিহ্য। ক্রিসমাসের বার্তা সবার কাছে পৌঁছে দিতে অস্ট্রেলিয়ার অ্যাডিলেড শহরে আয়জিত হয় এক বিশাল শোভাযাত্রায় লক্ষ লক্ষ মানুষের জমায়েত হয়। অন্যদিকে মেলবোর্ন শহরে অনুষ্ঠিত হয় ক্যারোলস বাই ক্যান্ডেল লাইটস নামে এক মিউজিক্যাল শো।

ব্রাজিলেও ক্রিসমাসের সময় ঠান্ডা একেবারেই থাকে না কারণ তখন গ্রীষ্মকাল। কিন্তু বড়দিন বলে কথা তাই সে দেশেও ইউরোপ আমেরিকার মতো সাজসাজ রব পড়ে যায়। বিশেষ করে সাও পাওলো, রিও ডি জেনিরোর মতো বড় শহরগুলিতে সাজের বাহার দেখার মতোই। ঠাণ্ডা কিম্বা বরফ নেই বলে এখানে ক্রিসমাস-ট্রিগুলিতে তুলো ছড়িয়ে রাখা হয়। সবথেকে মজা হয় কিউরিতিবা শহরে। এখানে ঘর-বাড়ি সাজানো ঘিরে রিতিমতো প্রতিযোগিতা হয়। কার বাড়ি কত সুন্দর হল সেটা ঠিক করার জন্য বিচারকমন্ডলী ঘুরে ঘুরে দেখেন। প্রসঙ্গত, ব্রাজিলে সান্টা ক্লজকে ডাকা হয় পাপাই নোয়েল নামে। খাবারের তালিকায় থাকে বিশেষ একটি পদ—চকোলেট এবং কনডেন্স মিল্ক দিয়ে তৈরি ব্রিগেডেইরো। ২৪ ডিসেম্বর রাত বারোটা বাজলেই চার্চগুলিতে শুরু হয়ে যায় মিসা দ্য গ্যালো উদযাপন।

মেক্সিকোতে ক্রিসমাসের একটি নাম—লাস পোসেদাস। এখানকার বড়দিন উৎসব অন্য যে কোনও জায়গার থেকে শুধু আলাদাই নয়,প্রায় তিরিশ রকমের ক্রিসমাস পালন হয়। ক্রিসমাস এগিয়ে আসা মাত্র মেক্সিকানরা দরজায় দরজায় ঘুরে বেড়াতে থাকেন। যীশু জন্মানোর পর মা মেরি একটু আশ্রয়ের জন্য দিনের পর দিন লোকের দরজায় দরজায় ঘুরে বেরিয়েছিলেন, সেই করুন ঘটনা স্মরণ করেই এই রীতি পালন। মেক্সিকোতে বড়দিনের উৎসব১২ ডিসেম্বর লা গুয়াদালুপানা ভোজ দিয়ে শুরু হয় আর ৬ জানুয়ারি এপিফোনি ভোজ দিয়ে হয় শেষ।