ঘুরে-ট্যুরে

নিশুতি রাতেও দরজা বন্ধ হয়না সে সব গ্রামে

By admin

September 17, 2020

পৌলমী ভৌমিক। ছবি: শুভব্রত গায়েন

(প্রথম পর্ব)

যাবো তো বটেই কিন্তু কোথায়?

অসমবয়সী মানুষদের নিয়ে গড়া টিম নিয়ে ঘুরতে যাওয়ার একটা আলাদা রোমাঞ্চ রয়েছে। বিশেষ করে তা যদি হয় ৫ বছরের শিশু থেকে ৭০ বছরের প্রবীণদের নিয়ে গড়া। যে বয়সটা ফেলে এসেছি, যে বয়সটা পার করছি আর যে বয়সে একদিন পৌছাবো, একই জায়গাকে ঘিরে সব বয়সের অনুভূতিগুলোকে খুব নিবিড়ভাবে উপলব্ধি করা যায়। ছোঁয়া যায়। যদিও বাড়তি কিছু সতর্কতা গ্রহণেরও প্রয়োজন হতে পারে এমন কোনো ট্যুরে।

প্রতি বছরই কালীপুজো, দীপাবলির সময় একটা বড় ফ্যামিলি ট্যুর আমাদের বাঁধা। প্রায় বছরের শুরু থেকে তার জন্য আমি আর আমার বর শুভ রীতিমত গবেষণা শুরু করে দিই। গুগলে যে কোনও জায়গার খুঁটিনাটি বের করা থেকে শুরু করে ওই জায়গায় বেড়াতে গেছে এমন পরিচিতদের সঙ্গে কথা বলা – সবই সে প্রস্তুতির অঙ্গ। শ্বশুর, শাশুড়ি, মা, বাবা, আমরা কর্তা গিন্নী আর সঙ্গে আমাদের ৫ বছরের ক্ষুদে – ৭০ বছর থেকে ৫ বছর পর্যন্ত রয়েছে আমাদের বেড়ানোর গ্রুপে। তাই জায়গা নির্বাচনের ব্যাপারে খানিক সচেতন থাকতে হয় বৈকি।

সালটা ২০১৭। ঠিক হল মেঘালয় যাবো। উত্তর পূর্ব ভারতের দিকটা আমি বা শুভ, কেউই যাইনি – তাই ইচ্ছেটা ছিলোই। যদিও অনেকেই সাবধান করে বললেন, মেঘালয় মানেই ঝর্ণা, গুহা, অ্যাডভেঞ্চারের জায়গা। এরকম কম্বিনেশনের গ্রুপের জন্য তা খুব একটা উপযুক্ত নয়। তবুও সাহসে ভর করে সেটাই চূড়ান্ত করলাম। শ্বশুরমশাইয়ের পেসমেকার। শাশুড়ি এমনিতেই একটু নার্ভাস প্রকৃতির। মা-র মনে ষোলো আনার ওপর আঠারো আনা ইচ্ছে থাকলেও গত ৩০ বছর ধরে পায়ের ব্যাথায় ভুগছেন।একটাই ভরসা বাবা আমার এদের সবার মধ্যে একটু ফিট। ঠিক হলো, যেখানে যারা যেতে পারবে না গাড়িতে বা হোটেলেই থাকবে। কাটা হল সরাইঘাট এক্সপ্রেসের টিকিট। সব থেকে বেশি উৎসাহ আমাদের পাঁচ বছরের ছেলে পোস্তর।

এক রবিবার বিকেলে, রাতের খাবার প্যাক করে চেপে বসলাম ট্রেনে। পরদিন সকাল দশটা নাগাদ ট্রেন পৌঁছলো গুয়াহাটি স্টেশানে। স্টেশনের বাইরেই গাড়ি অপেক্ষা করছিল। গাড়িতে মালপত্র তুলে রওনা দিলাম মেঘালয়ের রাজধানী শিলং-এর উদ্দেশ্যে। শিলং পৌঁছতে পৌঁছতে প্রায় দুপুর। সবার কথা ভেবেই লাঞ্চটা রাস্তাতেই সেরে নেওয়া হলো। শিলং শহরে ঢোকার খানিক আগে থেকেই আকাশের মুখ ভার। হাল্কা বৃষ্টি চলছে।

শিলং আর গড়িয়াহাটের মধ্যে ফারাক কোথায়

ট্যুরের খুঁটিনাটি আগে থেকে ঠিক করাই ছিল। সেখানেই আমরা ঠিক করে রেখেছিলাম, শিলং-এ বেশি সময় কাটাবো না আমরা। কাল সকাল সকালই বেরিয়ে যাবো। তাও সন্ধ্যেবেলা বাজারটা ঘুরতে বেরোলাম। হোটেল থেকে ১০ মিনিটের দূরত্ব। যদিও ট্যাক্সিতে বসে জ্যামেই কেটে গেল ৩০মিনিট। বাজারে জামাকাপড় সহ নানা পসরার ছড়াছড়ি। কিন্তু ভীষণ ভিড়, যানজট আর কোলাহল। খানিক ঘোরাঘুরির পর হোটেলেই ফেরত এলাম। সারা রাতের জার্নিতে সবাই বেশ ক্লান্ত। খেয়ে নিয়ে অগত্যা লম্বা ঘুম। কাল আটটায় রেডি হয়ে বেরোনোর কথা। যাবো জোয়াই।

প্রকৃতির উজাড় করা রূপ আর মানুষের পরিচ্ছন্নতা বোধ

পরদিন সকাল আটটাতেই শিলং থেকে গাড়িতে বেরোতে পেরেছি।খাসি পাহাড় থেকে চলেছি জয়ন্তীযা পাহাড়ের দিকে। শিলং শহরটা পার করার পরই মেঘালয়ের প্রকৃতি যেন দুহাত বাড়িয়ে আমাদের স্বাগত জানাল। ঝকঝকে পরিষ্কার কালো পিচের চওড়া রাস্তা, দুধারে নরম সবুজ ধানি জমি। কলাগাছে কাঁদি কাঁদি কলা, আনারস বাগানে আনারস, বাতাবি গাছে ঝুলছে গুচ্ছ গুচ্ছ বাতাবি লেবু। প্রকৃতি যেন দুহাত ভরে ঢেলে সাজিয়েছে। চারিদিক সবুজে সবুজ। ভীষণ সবুজ। দূরেও সবুজ পাহাড়ের হাতছানি।তাতে দেখা যাচ্ছে ঝর্ণার জলের সাদা সাদা রেখা। মা, বাবারা তো গাড়িথেকেই দু’দিকের প্রকৃতি দেখে মুগ্ধ।পথে মাঝে মাঝে পড়ছে ছোট বাজার। আশ্চর্যের ব্যাপার খেয়াল করলাম, সব দোকানের সামনেই বিশাল বিশাল পাকা হলুদ কলার কাঁদি রাখা। ফলের আলাদা দোকানও প্রচুর। বেশিরভাগ দোকানই চালান মহিলারা। শুনেছিলাম মেঘালয় মাতৃতান্ত্রিক রাজ্য। চাক্ষুস অভিজ্ঞতা হলো। বাজারে লোকজন, রোজকার ব্যাস্ততা। কিন্তু বিরাজ করছে অদ্ভুত এক প্রশান্তি। নেই হর্ণের বাড়াবাড়ি অথচ গাড়ির সংখ্যাও কম নয়। তারা চলছে নিয়ম মেনেই। মানুষগুলোর মুখে সর্বদা হাসি আর গালে গোঁজা কাঁচা সুপুরি। আর আজন্ম লালিত পালিত কলকাতার বাসিন্দা বলেই বোধহয় যেটা আমাদের সবার চোখে পড়লো পরিচ্ছন্নতার দিকটি । রাস্তাঘাট, বাজার কোথাও একটুকু নোংরা, ময়লা নেই সত্যিই। এই ব্যাপারটা আরও ভালো বুঝেছিলাম পুরো মেঘালয় ট্যুরেই।

নতুন অভিজ্ঞতা মনোলিথ পার্ক

ঘন্টা দুয়েকের পথের জার্নি যে কিভাবে কেটে গেল বুঝলাম না। হাইওয়ে ছেড়ে গাড়ি তখন একটা ছোট গ্রামের পথে ঢুকেছে। চারপাশে ছোট ছোট বাড়ি, সিমেন্টে বাঁধানো রাস্তা। গ্রামের নাম নার্টিয়াং (Nartiang )। আমরা যাচ্ছি এই গ্রামের এক আশ্চর্য মনোলিথ পার্ক দেখতে। মনোলিথ মেঘালয় সংস্কৃতির এক অন্যতম অঙ্গ । আমাদের জন্য এক অদ্ভুত দৃশ্য। বিভিন্ন ধরনের পাথর লম্বা করে দাঁড় করানো এক প্রান্তর। রাজা রাজড়ারা তাদের যুদ্ধ জয় এবং নানা কীর্তির স্মারক হিসেবে এই সব সৌধ রচনা করেছিলেন। কিছু গোল চ্যাপ্টা পাথর শোয়ানো আছে। এগুলকে বলে ডলমেন – মহিলাদের জন্য। কিন্তু আমরা প্রেমে পড়ে গেলাম এই বিশাল চত্বরটার – বিস্তীর্ণ ফাঁকা প্রান্তরে অদ্ভুত বড় বড় পাথর, মাঝে মাঝে পথ। হলুদ গাঁদাফুলে ছেয়ে আছে পুরো জায়গাটা আর রয়েছে অদ্ভুত এক নিস্তব্ধতা। দিনের বেলাতেও ঝিঁঝিঁ পোকার ডাক। সবমিলিয়ে এক অন্যরকম অনুভূতি। এরকম দৃশ্য জীবনে দেখিনি,তাই বোধহয় জীবনেও ভুলবো না। বেশ কিছুক্ষণ ওখানে কাটিয়ে পাশে প্রায় ৬০০ বছরের পুরনো এক দূর্গা মন্দির দেখে বেরিয়ে এলাম নার্টিয়াং গ্রাম থেকে।

রাতের গন্তব্য ইয়ালাং পার্ক

এবার চলেছি জোয়াইতে। ইয়ালং পার্ক – ওখানেই আজ আমাদের রাতের ঠিকানা। পথে দেখলাম থাডলাস্কিয়ান লেক (Thadlaskein Lake)। নার্টিয়াং থেকে ঘন্টাখানেক আবার গাড়িতে চলার পর আমরা জোয়াই জেলায় ঢুকে পড়েছি। বড় রাস্তা থেকে হঠাৎ ডানদিকে টার্ন নিয়ে গাড়ি এগিয়ে চললো পাহাড়ি জঙ্গলের রাস্তায়। যত ঢুকছি জঙ্গল তত গভীর হচ্ছে, জন মানবের চিহ্ন নেই। সঙ্গে থাকা বয়স্ক লোকেদের মধ্যে এবার গুঞ্জন শুরু হয়ে গেলো। চোখে-মুখে তাঁদের এক উৎকণ্ঠার ছাপ। এ কোথায় থাকার জায়গা! মিনিট ১৫ চলার পর পথটা হঠাৎ শেষ । বুঝলাম একটা পাহাড়ের প্রায় মাথায় আমরা। সামনে বিশাল গেট – ইয়ালং পার্ক। গাড়ি উঠে চললো। দুই এক মিনিট পরই চোখের সামনে যে ছবিটা ভেসে উঠলো,সেটা এক কথায়, অপূর্ব! পাহাড়ের মাথায় ছবির মতো তিনটে কটেজ। নুড়ি বিছানো পথে একে অপরের সঙ্গে যুক্ত। সামনে একটা অফিস রুম আর ডাইনিং রুম। সেটা তখনও বানানো হচ্ছে। গাড়ি থেকে নেমে আমার ৫ বছরের ছেলে পোস্ত থেকে ৭০ বছরের শ্বশুরমশাই, সবাই সমান রোমাঞ্চিত। হাসিমুখে এগিয়ে এলেন কেয়ারটেকার। জিনিসপত্র চলে গেল কটেজে। বেশ বড় সড় রুম, ডাবল বেড, টেলিভিশন, বাথরুম, সামনে ছোট্ট বারান্দা।

একটা কটেজে মা-বাবা, একটাতে আমি, শুভ আর পোস্ত, অন্যটায় শ্বশুরমশাই ও শাশুড়ি মা। গরম গরম চা খেয়ে আমরা স্নান সেরে ফেললাম। এই গভীর ঘন জঙ্গল এলাকা, যেখানে আমরা সাড়ে ৬ জন আর কেয়ারটেকার ছাড়া জনমানবহীন। এমন এক জায়গায় বাথরুমে গিজার অবাক করার মতোই ব্যাপার। স্নান সেরে ধোঁয়া ওঠা গরম গরম ভাত, ডাল, আলুভাজা আর খানিক ঝালঝাল কিন্তু অপুর্ব চিকেন সহকারে লাঞ্চ সেরে সবাই মিলে কটেজের সামনে একটু বসে রইলাম। কি শান্তি! লিখে প্রকাশ করা কঠিন। একটু পড়ে সদলবলে চললাম ইয়ালং পার্ক দেখতে। কটেজ চত্বর থেকে নেমে রাস্তার উল্টো দিকেই পার্কের সিঁড়ি। ধীরে ধীরে উঠতে লাগলাম। সঙ্গের বয়স্করা একটু পিছিয়ে। পোস্ত রাস্তার ধারের গাছ থেকে একটা ডাল ভেঙ্গে মহা আনন্দে সিঁড়ি দিয়ে উঠছে।

পবিত্র বনভূমি

গত ক’মাসে মেঘালয় নিয়ে আমাদের কত্তা-গিন্নির চর্চার ফলে আমরা এতটুকু জানতাম যে সারা রাজ্য জুড়ে এরম কিছু ভার্জিন ফরেস্ট আছে যেগুলো ওখানকার বাসিন্দারা মনে করেন পবিত্র বনভূমি। খুবই যত্নসহকারে তারা এসব জঙ্গলের দেখভাল করেন। মাফলং সেক্রেড ফরেস্টের কথা কিছুটা গুগলে পাওয়া গেলেও ইয়ালং পার্ক (Ialong park) বেশ অপরিচিত। সিঁড়ি দিয়ে উঠতে উঠতে সেই কথাগুলো আমরা বেশ ভালো করে অনুভব করতে পারছিলাম। এত বিশাল জঙ্গল, ধাপে ধাপে উঠে গেছে সিঁড়ি – বাঁকে বাঁকে বসার সুন্দর জায়গা। সবুজে, নানা রঙের ফুলে অজস্র প্রজাপতি – সব মিলিয়ে বড়ই মায়াবী পরিবেশ। কিন্তু আশ্চর্যজনক ভাবে শান্ত ও পরিচ্ছন্ন। দুহাত অন্তর প্রতিটা গাছে লাগানো আছে বেতের টুকরি – আসলে ওগুলো ওয়েস্টবিন। মনে হলো, কেউ যেন বছর বছর ধরে রক্ষা করে আসছে এই জঙ্গলকে। নিজের বাড়ির উঠোনের মত ঝকঝকে করে সাজিয়ে গুছিয়ে রেখেছে। একটু জোরে কথা বলে ফেললেই নিজেদের অস্বস্তি হচ্ছে। মনে হচ্ছে আমাদের জুতোর ধুলোয় নোংরা হয়ে যাচ্ছে না তো এই পবিত্র বনভূমি! বেশ খানিকটা উঠে একটা বাঁকে দাঁড়াতেই সামনের প্রকৃতি যেন দুহাত বাড়িয়ে আমাদের ছুঁলো। দূর দূর অবধি সবুজে ঢাকা। সামনে এক বিশাল উপত্যকার শেষে সবুজ পাহাড়। এঁকে বেঁকে বয়ে যাচ্ছে একটা নদী।

বিকেল গড়িয়ে আসছে। ধীরে ধীরে নিচে নামতে শুরু করলাম। নিচে এসে দেখা পেলাম Mr. Pyrkhat Shyllaএর। এ নাম উচ্চারণ করা আমাদের কাজ না। ওই নাম উচ্চারণ করতে হলে জিভের যে আড় ভাঙতে হবে, সেই আড়ষ্টতা আমাদের কাটেনি। তাই নিজেদের মনেই, ওনার নামকরন করলাম – পরিক্ষিত বাবু।এই পরিক্ষিত বাবুর তত্বাবধানেই এই বিশাল ইয়ালং পার্ক ট্রাভেলর্স নেস্ট। উনি নিজেই বললেন,নিচে নদীর ধারে ওনার একটা কাজ আছে। আমরা চাইলে ওনার গাড়িতে গিয়ে নদীটা দেখে আসতে পারি। লাফিয়ে উঠলাম। বড়রা অবশ্য ওখানে বসে চা খাওয়াটাই পছন্দ করলেন। আমি, শুভ আর পোস্ত ওনার গাড়িতে চললাম মুণ্ডু নদী দেখতে। ইংরেজিতে “Myntdu”। এখানকার উচ্চারন বোঝা আমাদের কম্ম নয়। সেটা এই দুদিনে বুঝে গেছি। পোস্ত এই নদীর নামকরন করেছে “মুন্ডু”। আমরা আজও এই নামে ডাকি।

পাহাড় চূড়ায় আমরা সাড়ে ছয় জন

রাতে কেয়ারটেকার বললো, যাতে আমরা জলদি ডিনার সেরে নিই। কারন ও আমাদের খেতে দিয়ে চলে যাবে নিচে ওদের গ্রামে। কলকাতার বাসিন্দা, রাতে ১০টার আগে খাবার কথা ভাবতেই পারি না। তবু, কি আর করা! কিন্তু খেতে বসে হলো আসল রিয়েলিটি চেক। এই ছেলেটি যদি রাতে বাড়ি চলে যায় তবে এই পুরো জঙ্গলে শুধুমাত্র আমরা সাড়ে ৬ জন। সঙ্গে বয়স্ক মানুষ আর বাচ্চা! বড়দের চোখে মুখে অস্বস্তি স্পষ্ট। অস্বস্তি যে আমার বা শুভরও হচ্ছে না, তা নয়। কিন্তু কিছু করনীয় নেই। ৫ কিলোমিটার দূরে ওদের গ্রাম। বেশ বুঝলাম, রাতে কোন বিপদে পড়লে জাস্ট কিচ্ছু করার নেই। মনের কথা কেয়ারটেকারকে খুলে বলতে, সে এক গাল হেসে জানালো, এ জঙ্গল খুবই নিরাপদ। হিংস্র জন্তু তেমন নেই। আমি বললাম – “আর মানুষ?”! এই কথায় ছেলেটির মুখের যা অভিব্যক্তি হয়েছিল তাতে নিজেকে খুবই খারাপ একজন মানুষ মনে হলো। মানুষ যে খারাপ হতে পারে, এমন কথা বোধহয় সে শোনেইনি। অদ্ভুতভাবে ভাঙ্গা হিন্দি ও খাসি ভাষায় সে জানালো, তাদের এখানে দরজা কেউ বন্ধ করে না কখনো। সামনে কিছু না বললেও, মনে মনে হেসেছিলাম। শহুরে মন অবিশ্বাস করেছিলো। কিন্তু এই কথাটা যে কতটা সত্যি পুরো মেঘালয় ঘোরার পর নিজেরাই উপলব্ধি করি। সত্যিই এ রাজ্যে, ঘরের দরজা বন্ধ হয় না এমনকি রাতেও।

পরদিন ভোর ভোর ঘুম ভেঙ্গে গেল। সারা রাত ধরে বৃষ্টি হয়েছে। দরজা খুলেই দেখি বাইরে বারান্দার দেওয়ালে বিশাল আকৃতির একটা মথ। কি যে তার রূপের বাহার! পোস্ত খুব অবাক – কারণ কাল দুপুর থেকে আজ অবধি এই মথটা এক চুলও নড়েনি। ব্রেড অমলেট, গরম চায়ে ব্রেকফাস্ট সেরে বেড়িয়ে পড়লাম। গাড়ি চলতে শুরু করলো। পেছনে পড়ে রইলো প্রশান্তি, পবিত্রতা, বিশ্বাসের এক বিশাল পরিসর- ইয়ালং পার্ক। আজ দেখবো অদেখা আরো কিছু জায়গা। বিষাদের মধ্যেও তাই জেগে রইলো অজানাকে জানার আনন্দের এক অনুভূতি।

চলবে