FILE - This Jan. 19, 1931, file photo shows Chicago mobster Al Capone at a football game. An intimate letter gangster Capone wrote while imprisoned at Alcatraz has sold at auction in Massachusetts. Boston-based RR Auction said the winning bid came Monday, Sept. 26, 2016, at an auction in Cambridge. (AP Photo/File)

এক নজরে

পাবলিক এনিমি নাম্বার ওয়ান

By admin

May 06, 2023

তৃতীয় পর্ব

টরিও-কাপোন শিকাগো দখল করে ফেললে পরিস্থিতি গরম হয়ে উঠে। একে একে সব ক্ষমতা তালুবন্দি করে ফেলায় শত্রুপক্ষ টরিওকে হাপিস করে দেওয়ার ছক কষতে থাকে। সেই ছকের অন্যতম হোতা ছিলেন জর্জ মরান। তাঁর ছক অনুযায়ী টরিও আক্রান্ত হলেও প্রাণে বেঁচে যায়। হত্যার পরিকল্পনা ভেস্তে গেলেও শত্রুপক্ষের উদ্দেশ্য সফল হয়। টরিও ভয় পেয়ে দাদাগিরি ছেড়ে রাজত্ব আল কাপোনের হাতে তুলে দিয়ে ইতালিতে ফিরে যান। কাপোন ক্ষমতা লাভের পর শিকাগোর পুরনো এলাকা ছেড়ে সবচেয়ে দামি হোটেল মেট্রোপোলে উঠে আসেন। মেট্রোপোল থেকেই কাপোন চোরাচালানের সাম্রাজ্য কয়েকগুণ বিস্তৃত করে রাজা বাদশাহের মতো বিলাসি জীবনযাপন শুরু করেন।

এ ধরণের কথা বলার পরও আল কাপোন সিসারোতে এক ভয়ংকর খুনের ঘটনা ঘটিয়েছিলেন। সেই নৃশংস হত্যাকাণ্ডে কাপোন সিসারোতে মোট তিনজনকে গুলি করে খুন করেন। তাদের মধ্যে একজন বিচারকও ছিলেন। ওই বিচারক এক হত্যা মামলায় আল কাপোনকে দোষী সাব্যস্ত করতে কাপোনের বিরুদ্ধে রায় দিয়েছিলেন। শেষ পর্যন্ত কাপোন প্রভাব খাটিয়ে মুক্তি পেয়েছিলেন।তারপরই ওই বিচারক বুঝতে পেরেছিলেন কাপোনের হাত থেকে তাঁর মুক্তি নেই। এর আগেও যারা কাপোনের বিরোধিতা করেছিলেন অথবা কাপোনের কর্মকাণ্ডের বিরূপ সমালোচনা করেছিলেন তাদের প্রত্যেককেই কাপোনের গুলিতে মরতে হয়েছিল।

অন্যান্যবারের মতো বিচারক খুনের বেলাতেও কোনো সাক্ষী প্রমাণ না থাকায় আল কাপোন বেঁচে যান। বারবার কাপোন খুন করেও বেঁচে যাওয়ায় পুলিশ প্রশাসন তাঁর উপর খাপ্পা হয়ে উঠেছিল। তারা  আল কাপোনের ব্যবসার চালান ভণ্ডুল করে দেওয়ার চেষ্টা শুরু করে। এর জন্য কাপোনের চোরাচালানের ব্যবসা কিছুটা লোকসান খেতে থাকে। কিন্তু কাপোন ঝোপ বুঝে কোপ মারতে ওস্তাদ ছিলেন। এবার তিনি ক্ষমতা বা প্রভাব না খাটিয়ে  পুলিশদের সঙ্গে সরাসরি সমঝোতা করলেন।তিনি পুলিশকে কথা দিলেন, শহরে আর কোনো খুনের ঘটনা ঘটাবেন না। পুলিশও কাপোনের কথা বিশ্বাস করে তাঁর ব্যবসার চালান ছেড়ে দেওয়া শুরু করলো। কিন্তু খুন বা হিংসার ঘটনা ছাড়া কি অপরাধের দুনিয়ে চলতে পারে, ফলে কয়েক মাস যেতে না যেতেই ফের শিকাগোর রাজপথ রঙিন হল রক্তে।

অপরাধ দুনিয়ার শাহেনশাহ হওয়ার জন্য খুনে হাত রাঙাতেই হয়, বিশেষ করে প্রতিদ্বন্দ্বী থাকলে। শিকাগোর অপরাধ দুনিয়ায় সম্পত্তি আর প্রতিপত্তি বাড়িয়ে আল কাপোন এক নম্বরে থাকলেও তার সময়েই শিকাগোতে আর এক জন তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠেছিল, তাঁর নাম মোরান। অপরাধ জগতে প্রতিদ্বন্দ্বীকে বাঁচিয়ে রাখার রীতি নেই, কাপোনও সেই রীতি রক্ষা করতে চাইছিলেন। সেই মতো মোরান ও তাঁর গ্যাঙকে উচিত শিক্ষা দিতে পরিকল্পনা সাজিয়ে ফেললেন আর ঘটিয়ে ফেললেন আর এক রক্তাক্ত কাহিনি।প্রেমের জন্য যে ভ্যালেন্টাইনস ডে পালিত হয়ে আসছে সেই রোমান্স ভরা সন্ধ্যায় শিকাগোতে ঘটে গেল এক ভয়ংকর গণহত্যা। শীতের ওই সন্ধ্যায় শিকাগো শহরের আনাচ কানাচ তল্লাশি চালিয়ে তুলে আনা হল মোরানের প্রধান সাত সহযোগীকে। একটি গ্যারাজের ভিতর তাদের দেয়ালের দিকে মুখ করে লাইন দিয়ে দাঁড় করিয়ে পেছন থেকে ৭০ রাউন্ড গুলি ছোঁড়া হল।

১৪ ফেব্রুয়ারি গভীর রাতে পুলিশ গুলিতে ঝাঁজরা হয়ে যাওয়া ওই সাত জনের দেহ উদ্ধার করলো। শিকাগোতে ঘটে যাওয়া এই গণহত্যা ‘সেন্ট ভ্যালেন্টাইনস ডে ম্যাসাকার’ বলে গোটা বিশ্বে পরিচিতি পায়।একই সঙ্গে আমেরিকার মাফিয়া জগতের বেতাজ বাদশা হয়ে যান আল কাপোন। এই ঘটনার পরও আল কাপোন-কে দোষী সাব্যস্ত করা যায়নি, কারণ তার বিরুদ্ধে কোনো সাক্ষ্যপ্রমাণ না থাকায় পুলিশ কিছুই করতে পারেনি। ফলে অমীমাংসিতই রয়ে যায় ভ্যালেন্টাইনস ডে-র কুখ্যাত গণহত্যা। আসলে মাফিয়াদের দুনিয়া যতই উত্তেজনা বা ঘটনাবহুল হোক না কেন, সবাই মাফিয়াদের ভয় পায়, তাদের বিরুদ্ধে কেউই মুখ খুলতে চায় না। এমনকি ওই মৃতদেহগুলির মধ্যে একমাত্র যার দেহে কয়েক ঘন্টা প্রাণ ছিল সেও পুলিশের কাছে মৃত্যুর আগে কোনও জবানবন্দি দেয়নি। অনেক চেষ্টা করে পুলিশ শুধু এইটুকু জানতে পেরেছিল যে পুলিশের পোশাক পরা একটি দল সেদিন গোটা ঘটনাটি ঘটিয়েছিল।

(চলবে)