এক নজরে

এরই নাম শিশু উৎসব

By admin

June 18, 2023

সন্তানের মঙ্গল কামনায় তার বাবা-মা অনেক কিছুই করে থাকেন। তাদের দীর্ঘায়ুর জন্য করেন নানা রকম রীতি পালন। তবে এর অনেক কিছু আদিকালের নিরক্ষর মানুষের কুসংস্কারেরও ফল। যার অনেক রীতি বিংশ শতাব্দীতে এসেও পালন হচ্ছে ঘটা করে। মহারাষ্ট্র ও কর্ণাটক রাজ্যে দীর্ঘকাল ধরে প্রচলিত একটি রীতি হচ্ছে শিশুদের উঁচু জায়গা থেকে নীচে ফেলে দেওয়া। পালিত হচ্ছে ৭০০ বছর ধরে।

বিংশ শতাব্দীতে এসে এখনো অনেকে হাজার হাজার বছর আগের এই সব কুসংস্কার মেনে চলছেন অনেকেই। খুবই বিপ্পজনক এই সব প্রথা পালনের পদ্ধতি। ভারতের মহারাষ্ট্র ও কর্ণাটক রাজ্যে ৭০০ বছর আগে যখন এই রীতি পালিত হওয়া শুরু হয়; তখন শিশুমৃত্যুর হার বেশি ছিল। চিকিৎসা সংক্রান্ত জ্ঞানও খুব কম ছিল সবার। এমনকি ভালো কোনো চিকিৎসকও ছিল না।

তাই শিশুর মঙ্গল কামনায় ৩০ ফুট উঁচু থেকে শিশুকে ছুঁড়ে ফেলে দেওয়া হয় নীচে। ধর্মীয় কুসংস্কার অনুসারে ভারতের গ্রামীণ কিছু পরিবার (হিন্দু এবং মুসলমান উভয়ই) তাদের শিশুদের মাজারের ছাদ থেকে ছুঁড়ে ফেলা হয়। অন্যদিকে নীচে বিছানার চাদর দুই প্রান্তে ধরে দাঁড়িয়ে থাকে শিশুর অভিভাবক। নিচে পড়া মাত্রই শিশুকে ধরে ফেলেন তারা।

শিশু জন্মের ২ মাসের মধ্যেই এই রীতিটি পালন করা হয়ে থাকে। মাজারের অভিজ্ঞ ব্যক্তিরা শিশু ছুঁড়ে ফেলার কাজটি করে থাকেন। নীচে বিছানার চাদর ধরে দাঁড়িয়ে থাকেন শিশুর বাবা-মা। এই রীতি মানলেই নাকি সুস্থ থাকে শিশু, উজ্জ্বল হয় তার ভবিষ্যত! মহারাষ্ট্র ও কর্ণাটক রাজ্যে দীর্ঘকাল ধরে প্রচলিত এই রীতিটি পালিত হয়ে আসছে। ৭০০ বছর আগে যখন এই রীতি পালিত হওয়া শুরু হয়; তখন শিশুমৃত্যুর হার বেশি ছিল।

চিকিৎসা সংক্রান্ত জ্ঞানও খুব কম ছিল সবার। এমনকি ভালো কোনো চিকিৎসকও ছিল না। জনশ্রুতি আছে, এক সাধু আদেশ দিয়েছিলেন যেসব বাবা-মায়ের সদ্যজাত সন্তান মারা গিয়েছে; তারা যেন একটি মাজার তৈরি করেন। এরপর সেখান থেকে সদ্যজাত সব শিশুদেরকে ছুড়ে যেন নীচে ফেলে দেওয়া হয়। তবে তারা যেন মাটিতে পড়ে আঘাত না পায় সে বিষয়েও স্পষ্ট করে বলেছিলেন সাধু।

অলৌকিক হলেও সত্যিই যে, এরপর থেকেই মহারাষ্ট্র ও কর্ণাটক রাজ্যের কোনো মানুষের সন্তান আর আকস্মিকভাবে মারা যায়নি এবং সুস্থ সন্তানও জন্ম নিয়েছে! এরপর থেকে সেখানকার লোকেরা সন্তানকে বাঁচাতে, জন্মের কয়েক মাসের মধ্যেই এই রীতি পালন করেন। ৭০০ বছর ধরে পালিত এই রীতি অনুসারে গ্রামবাসীরা বিশ্বাস করেন, এই আচারটি তাদের সন্তানের দীর্ঘায়ু ও সৌভাগ্য বয়ে নিয়ে আসে। তারা জানায়, এই রীতি করতে গিয়ে কোনো শিশু কখনো আহত বা নিহত হয়নি। বরং যে শিশুর সঙ্গে এমনটি করা হয় না; তারই ক্ষতি হয়!

শত শত বছর পরে, ২০০৯ সালে প্রথম মহারাষ্ট্র ও কর্ণাটক রাজ্য কর্তৃপক্ষের নজরে আসে এই রীতি উদযাপনের বিষয়টি। তখন মহারাষ্ট্রের সোলাপুরের মাজার বাবা বাবা উমার দরগাহ থেকে রেকর্ড করা একটি ভিডিও দেখে নড়েচড়ে বসেন তারা। জাতীয় শিশু অধিকার সংরক্ষণ কমিশনকে এ বিষযে হস্তক্ষেপ করার অনুরোধ জানায়।

কমিশন তদন্ত করে নির্দেশ দিয়েছিল যে চাউল্ড টসিং বন্ধ করা উচিত। ভারতের জাতীয় শিশু অধিকার সংরক্ষণ কমিশনের মিডিয়া উপদেষ্টা বলেছিলেন, আমরা এই কুসংস্কারমূলক আচরণকে সমর্থন করি না। এটা শিশুদের স্বার্থের পরিপন্থী। তারা সত্যিই ভীত হতে পারে এবং এটি তাদের মানসিক বিকাশে বাঁধা ফেলতে পারে।

শিশু অধিকার আইনে, এই অনুশীলনটি অবৈধ। যদিও স্থানীয় প্রসাশনের কঠোরতায় ২০১০ সাল থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে এই রীতি উদযাপন করা বন্ধ হয়েছে। তবে এখনও সেখানকার বিভিন্ন গ্রামে এবং লোকচক্ষুর অন্তরালে এই রীতি চলছে।