এক নজরে

চোরচোট্টা

By admin

December 10, 2022

দুই

“সোনা চাই দানা চাই— আরো চাই; শুধু চাই আর চাই” এই লোভে মন্ত্রী সান্ত্রীরাও কোটি কোটি টাকা তছরুপ করে জেলের ঘানি টানছে এখন। সত্যিই এ যে মহাবিদ্যা সন্দেহ কি তায়! এ সব তো আর সিঁধেল চোর নয়। এদের স্ট্যাটাসই আলাদা। গরীব গুর্বোর টাকা চুরি করে তাদের পথে বসিয়ে বুক চিতিয়ে ঘুরে বেড়ায় যেন চুরি করাই কেবল সত্য বাকি সব ভীতু,  সৎ এবং বোকারা আদর্শ নিয়ে বেঁচে আছে! হায়রে কলিকাল! ডিজিটাল যুগে আস্ত আস্ত দেশ, মহাদেশ,  সমুদ্র, এরোপ্লেন কি না চুরি যাচ্ছে! বাসের গায়ে যে লেখা থাকে “পকেটমার হইতে সাবধান” সে সব এখন গা সওয়া। তুচ্ছ।

জিন জেনেট নামে সেই ফরাসি ভদ্রলোক তার বিশাল চুরির ফর্দ নিয়ে “থিবস জার্নাল” নামে আস্ত একটা বই লিখে ফেললেন। চুরি বিদ্যাকে টপকে সেই বই পড়ে মুগ্ধ হয়ে জেনেটকে “সন্ত” উপাধি দিয়ে বসলেন জা পল সাঁতরে। ভাবা যায়। চুরির কি অপার মহিমা। সত্যজিৎ রায়ের অবতার ফটাস করে ঝেড়ে দিলেন স্পিল বার্গ। হলিউডে সিনেমা হয়ে গেল “ইটি” নাম নিয়ে… সত্যজিৎ রায়ের লেখায় একটি চরিত্র কুয়োয় পড়ে গিয়ে একটা আধুলি পায়। কুয়ো থেকে উঠে সে সারা জীবন সেই আধুলিটা কপালে জুড়ে নিয়ে চলে। “ইটি” তেও হুবহু একই চিত্র। “ইন্টেলেকচুয়াল প্রপার্টি ইস অলসো এ প্রপার্টি।” সে চুরি গেলেও তাকে চোরের কারসাজি “চুরি”ই বলতে হয়। বই,  আঁকা ছবি, গান, কবিতা, সাহিত্য এসব তো হামেশাই টোকাটুকি চলতেই থাকে। বিদ্যাবুদ্ধি সম্পন্ন এই সব ইন্টেলেকচুয়াল কলাকুশলীদের আমরা নমনীয় ভাবেই দেখতে অভ্যস্ত। এঁদের সাত খুন মাফ বলা হয়ে থাকে, পৃথিবীর সবচেয়ে দামী সিংহাসন নাকি তৈরি করেছিলেন সম্রাট শাহজাহান। স্বর্ণ, দামি দামি রত্নসহ হীরাখচিত ছিল সেই সিংহাসনে। ফারসিতে একে বলা হতো ‘তখত-ই-তাউস’। তখত মানে সিংহাসন, আর তাউস শব্দের অর্থ হল ময়ূর।

সিংহাসনের পেছনে অনিন্দ্যসুন্দর পেখম ছড়িয়ে দাঁড়িয়ে থাকা দু’টি ময়ূরের ছবি ছিল। ময়ূর সিংহাসন ছিল মূল্যবান স্বর্ণ, হীরা ও দূর্লভ মরকত মনি খচিত।

এই সিংহাসনের চারটি পায়া ছিল নিরেট স্বর্ণ দ্বারা নির্মিত। বারোটি মরকত মনি স্তম্ভের পর চন্দ্রতাপ ছাদ আচ্ছাদন করা হয়। ছাদের চারদিকে মিনা করা মণি মুক্তা বসানো ছিল। এর ভেতরের দিকের সবটাই মহামূল্যবান চুন্নি ও পান্না দ্বারা মুড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল।

প্রত্যেক স্তম্ভের মাথায় মণি-মাণিক্য খচিত এক জোড়া ময়ূর মুখোমুখি বসানো হয়েছিল। প্রতি জোড়া ময়ূরের মধ্যস্থলে একেকটি মণি-মাণিক্য নির্মিত গাছ ছিল। যা দেখলে মনে হতো, ময়ূর দুটি ঠুকরে গাছের ফল খাচ্ছে। তবে আমাদের সে সিংহাসন আর রইলো কই? পারস্য সম্রাট নাদির শাহ ভারতবর্ষ লুঠ করতে এসে নিয়ে গিয়েছিলো পারস্য দেশে, বর্তমানে যেটা ইরান। রাজাদের যুদ্ধ,  হাতবদল ইত্যাদির ফলে এই মহামূল্যবান সিংহাসনটি কালের অতলে হারিয়ে গেছে। এই সিংহাসনে “কোহিনূর” মণি স্থাপন করা হয়েছিলো,  সেই মণি কিন্তু তৎকালীন ব্রিটিশ রাণী ভিক্টোরিয়ার মুকুটে শোভা পেতো,  যেটি রানি এলিজাবেথের মুকুটে এতদিন শোভিত হয়েছে।

ভারতবর্ষের মানুষ পয়সা খরচ করে লাইন দিয়ে দেখতে যায় নিজের দেশের ঐশ্বর্য্য বিদেশে,  সাহেব চোরের দেশে। ব্রিটিশ মিউজিয়ামে নকল এক ময়ূর সিংহাসন সাজিয়ে রেখেছে ওরা। যেন ওদেরই হক সেটি। ভারতের মানুষ একজন আরেজনকে  ফিসফিসিয়ে বলে আবার “দেখ দেখ আমাদের থেকে টানা মাল ব্যাটারা এখানে সাজিয়ে রেখেছে…”

মজার কথা আরো আছে, নটবরলাল নামে একটি লোক বার তিনেক নাকি তাজমহল বিককিরি করেছে। একটা চলতি “জোক” বলা যায় অবশ্যই।

কত দিগগজ চুরি করে মহান হয়ে গেলো আর “চুরি চামারি” এই অসভ্য শব্দটি উচ্চারণে এক বিশেষ নিম্ন সম্প্রদায়ের ওপর দোষ চাপানো হয়। লালমোহন বাবুর মাথায় বিষয়টা ঢুকলে উনি ঠিক বলতেন “চামার শব্দটা নিয়ে তো কাল্টিভেট করতে হচ্ছে মশাই… ।

(শেষ)