এক নজরে

তরিতে পারি শকতি যেন রয়

By admin

March 29, 2024

ফিরে এল আরও এক পবিত্র শুক্রবার। আজও মাথা তুলে দাঁড়িয়ে আছে একটি ক্রুশ, যার গায়ে এখনও লেগে আছে রক্ত, বিঁধে আছে পেরেক। ওই ক্রুশের ওপর এইরকমই এক শুক্রবারে বিদ্ধ করা হয়েছিল জেরুসালেমের এক ব্যক্তিকে, গোটা বিশ্ব যাকে চেনে ‘যীশু’ নামে। চাবুক দিয়ে ক্ষতবিক্ষত করা হয় তাঁর দেহ, মাথায় পরিয়ে দেওয়া হয় কাঁটার মুকুট, অবশেষে রক্তাক্ত যীশুর কাঁধে তুলে দেওয়া হয় ভারী ক্রুশকাঠ। জেরুসালেম সীমানার বাইরে গলগথ পাহাড়ে অপেক্ষা করছে বধ্যভূমি। গোটা রাস্তা কোনোক্রমে ক্রুশ টানতে টানতে নিয়ে যান তিনি। রক্ত ঝরছে, সারা শরীর ঘেমে যাচ্ছে; আর জোর নেই। বধ্যভূমিতে পৌঁছে তাঁর দুই হাতে আর পায়ে পেরেক বেঁধা হল। ছয় ঘণ্টা ক্রুশবিদ্ধ থাকার পর ধীরে ধীরে আকাশ অন্ধকার করে নেমে এল মৃত্যু। যীশুর মুখ দিয়ে বেরিয়ে আসে, “হে পিতা, এরা জানে না কী অন্যায় করছে। তুমি এদের ক্ষমা করে দিও।”

করুণ এই ইতিবৃত্ত আমাদের সকলেরই জানা। কিন্তু কেন মৃত্যু হল অমৃতপুরুষের? কেনই বা এমন অমানবিক যন্ত্রণা সহ্য করতে হল তাঁকে? উত্তরটি আমি যেন খুঁজে পাই মাইকেল কানিংহামের ‘The Hours’ উপন্যাসে ভার্জিনিয়া উল্ফ ও‌ তাঁর স্বামী লেনার্ডের মধ্যেকার একটি কথোপকথনে।

Leonard: Why does someone have to die?

Virginia: Someone has to die in order that the rest of us should value life more. It’s contrast.

Leonard: And who will die? Tell me.

Virginia: The poet will die…the visionary.

অর্থাৎ, যুগে যুগে এমনভাবেই মৃত্যুকে বরণ করে নিতে‌ হয় কবি, বিদ্রোহী, বিপ্লবী, স্বপ্নদর্শীদের- আমাদের জন্য, আমাদের সঠিক পথটি দেখানোর জন্য। যীশুকে মরতে হয়েছে যাতে আমরা জীবনের মূল্য‌ আরও বেশী করে অনুধাবন করতে‌ পারি। জীবন হয়ে উঠুক‌ যতই কঠিন, চলার পথ হোক যতই করুণরঙীন, কাঁটার মুকুটে, কশাঘাতে যতই হোক দেহ মন রক্তাক্ত- নির্ভয়ে চলতে হবে সে পথ, অন্যায়ের প্রতিবাদে থাকতে হবে সোচ্চার, অটল থাকতে হবে সংকল্পে। তবেই জীবন নামক অমূল্য উপহারটির সার্থকতা। 

পবিত্র শুক্রবারে তাঁর নিজের জীবন বিসর্জন দিয়ে‌ হয়তো যীশু আমাদের এই শিক্ষাতেই দীক্ষিত করতে চেয়েছিলেন। আর এই মর্মেই যেন ধ্বনিত হয় এক ঋষিকবির বাণী:”সহায় মোর না যদি জুটে নিজের বল না যেন টুটে, সংসারেতে ঘটিলে ক্ষতি, লভিলে শুধু বঞ্চনা নিজের মনে না যেন মানি ক্ষয়।”