২১ এর ধর্মযুদ্ধ

দ্বিতীয়দফাতেও ভোটের ঢল, তবু টক্করে তৃণমূল

By admin

April 02, 2021

অয়ন ঘোষ, কলকাতা ব্যুরো : দ্বিতীয় দফায় ভোট মিটতেই পাল্টা টক্কর দিতে শুরু করলো তৃণমূল। যদিও প্রথম দফার পর দ্বিতীয় দফা তেও ৮৬% বেশি ভোট পড়ায় ফের জল্পনা বেড়ে গিয়েছে এর প্রভাব নিয়ে। ৮৫ শতাংশের বেশি ভোট পড়ার ক্ষেত্রে শাসকদলের অসুবিধা নাকি, বিরোধীদের অসুবিধা সেই নিয়ে এখন অংক করছেন ভোট বিশেষজ্ঞরা।ভোটের পরিমাণের দিকে না তাকিয়ে এখন মমতা মুন্ডুপাত শুরু করেছেন বিজেপির। নরেন্দ্র মোদি থেকে অমিত শাহ বিজেপির মেজ সেজ নেতারাও বিভিন্নভাবে তৃণমূল এবং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ত্রুটি ধরছিলেন। মমতা তার প্রচারে রাজনৈতিক মোকাবিলার পথেই হাঁটছিলেন। কিন্তু এবার মমতাও সরাসরি কাউন্টার শুরু করলেন মোদি থেকে অমিত শাহকে। তবে মমতার এবার নজরে বেশির ভাগটাই অমিত শাহ।

নন্দীগ্রাম দ্বিতীয় দফার ভোটে পাঁচ জেলায় কেন্দ্রীয় বাহিনীর আচরণ নিয়ে বলতে গিয়ে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী সরাসরি কাঠ গড়ায় তুললেন অমিত শাহকে। এমনকি নির্বাচন কমিশন ভোট করছে না, অমিত শাহ? এই প্রশ্ন তুলে একদিকে কমিশন, অন্যদিকে বিজেপিকে আক্রমণ শানালেন।যদিও বৃহস্পতিবার দ্বিতীয় দফার ভোট চলাকালীন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের গতি প্রকৃতি এবং আচার-ব্যবহার যদি একটু খেয়াল করা যায়, তাহলে দেখা যাবে তিনি অনেকটাই ছিলেন চুপচাপ। তিনি নন্দীগ্রামের বুথের বারান্দায় গিয়ে ধরনায় বসে পড়লেও পুলিশ অফিসার এবং নির্বাচন কমিশনের অন্যান্য অফিসারদের সঙ্গে কথা বলেছেন অনেকটাই নম্রভাবে।যদিও এদিন দিনের শুরু থেকেই উত্তপ্ত ছিল নন্দীগ্রাম। দুই দলের তরফ থেকেই নানান ধরণের উত্তপ্ত আচরণ লক্ষ করা গিয়েছে বিভিন্ন জায়গা থেকেই। আর তার আঁচ গিয়ে পড়েছে কখনও সাধারণ মানুষের দিকে, তো কখনও সাংবাদিকদের উপর। মারদাঙ্গায় একপ্রকার জ্বলে উঠেছিল কেশপুর। কখনও গাড়ি ভাঙচুর তো কখনও সোজা আক্রমণ সংবাদ মাধ্যমকে। পুলিশ ও কেন্দ্রীয় বাহিনী এসে এসে পরিস্থিতি সামাল দিলেও এই রাজনৈতিক কাদা ছোঁড়াছুঁড়িকে সম্পূর্ণরূপে আটকাতে পারেননি কেউই। আর এর সাথে সাথে রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের উত্তপ্ত ও বিতর্কিত মন্তব্য তো লেগেই রয়েছে।

তবে এদিন পরিস্থিতি অবনতি এবং ব্যর্থতার জন্য তৃণমূল, সিপিএম-সহ বিরোধীদল কমিশনের দিকেই আঙুল তুলছে। তবে কমিশন কর্তারা একথা মানতে নারাজ। তাঁরা জানিয়েছেন যে, কেশপুরে মিডিয়া এবং বিজেপি প্রার্থীর গাড়ি ভাঙচুরের ঘটনায় এখনও পর্যন্ত মোট ২০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। কেশপুরে উত্তম দলুইয়ের মৃত্যুর ঘটনার তদন্ত চলছে। ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩০২, ১৪৩ ধারায় মামলাও হয়েছে। পূর্ব মেদিনীপুর উদয়শঙ্কর দুবের বিষয়টি আত্মহত্যার মনে হলেও তদন্ত চলছে।দক্ষিণ ২৪ পরগনার জয় নগর ও হাওড়ার উলুবেড়িয়ায় জনসভায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বলেন, বাংলা যা চাইছে সেটাই হয়েছে নন্দীগ্রামে। মুখ্যমন্ত্রী ভবানীপুর ছেড়ে নন্দীগ্রামে গিয়ে যে ভুল করেছেন, সেটা তিনি নিজেই বুঝতে পেরেছেন। মোদী যেমন শুভেন্দুর জয়ের ব্যাপারে নিশ্চিন্ত বলে দাবি করেছেন তেমন মমতাও দু’আঙুলে ‘ভিকট্রি’ দেখিয়ে বলেন যে ‘নন্দীগ্রামে তৃণমূল ৯০ শতাংশ ভোট পাবে। মা-মাটি-মানুষের আশীর্বাদে তিনিই জিতবেন। মুখ্যমন্ত্রী এও বলেন যে এখানে ভোট নিয়ে ‘চিটিংবাজি’ হয়েছে। যদিও মমতা বলে দিয়েছেন, নন্দীগ্রাম থেকে তিনি জিতছেন।

দ্বিতীয় দফায় ৩০ বিধানসভায় ৮৬. ১১ শতাংশ ভোট পড়েছে। তার মধ্যে দক্ষিণ ২৪ পরগনার চার বিধানসভায় ঘরে ৮৬.৭৪ শতাংশ, পূর্ব মেদিনীপুরে ৮৭.৪২ শতাংশ, তারমধ্যে নন্দীগ্রামে পড়েছে ৮৮.০১%, পশ্চিম মেদিনীপুরে ৮৩.৮৪ শতাংশ, বাঁকুড়া পড়েছে ৮৬.৯৮ শতাংশ। শতাংশের হিসেবে যে পরিমাণ ভোট পড়েছে, তাকে সাধারণভাবে ১০০% ভোট পড়া হিসেবেই ধরা হয়। এত ভোট মানুষ মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে আবার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে জয়ী করতেই দিয়েছেন কিনা, তা নিয়ে যেমন প্রশ্ন, তেমনই প্রশ্ন, নাকি রাজ্যের শাসকদলের বিরোধিতা করতেই এমন কাতারে কাতারে ভোটদান?