এক নজরে

আকাশলীন

By admin

November 13, 2022

সত্যজিতের ‘নায়ক’ ছবির নায়ক অরিন্দমকে মনে আছে? কেই বা তাঁকে ভুলতে পারে? মহিলা সাংবাদিক অদিতিকে যে নায়কের জীবনের সাফল্য আর ব্যর্থতার অভিজ্ঞতার কথা বলতে গিয়ে এক সময় সে মন্তব্য করে ওঠে, ‘‘শালা হুইমসিকাল পাবলিক! আজ মাথায় তোলে, কাল নামায়।’’ টিভিতে ভারত-ইংল্যান্ড ক্রিকেট সিরিজ দেখতে দেখতে প্রায়ই সেই কথাটা মনে হচ্ছিল। পাবলিক! জনগণেশ! আজ একে ওপরে তুলছে,কাল আবার তাকেই আছাড় মারছে। আজ শচীন… শচীন করে শোভাযাত্রা, কাল ‘‘ধুর একেবারে ফালতু আদমি।’’ আজ মুথাইয়া মূরলীথরন হিরো, কাল জিরো। বিরাট কোহলিকে নিয়ে ক্রিকেট দুনিয়ায় খুব মাতামাতি। তাঁকে নিয়ে এখন খুব ভয়। বাঘের পিঠে চড়ার অভিজ্ঞতা তাঁর হয়েছে। কিন্তু এর পর?

জানি না! বিরাটের খেলার শেষ দিনটা সে কথা বলতে পারে। ডন ব্র্যাডম্যানের সে দিনটা ভাল কাটেনি। হেমিংওয়ের বুলফাইট হিরোদেরও অনেকেরই শেষ দিনটা ছিল গ্লানি আর পরাজয়ে ভরা। কর্ণের রথের চাকা ডুবে গিয়েছিল, পরশুরামের দেওয়া দিব্যাস্ত্রের নাম ভুলে গেছিলেন। আকাশ থেকে সূর্যদেব কোনও সাহায্যের হাত বাড়াননি। তবুও আকাশের দিকেই তাকিয়ে ছিলেন কর্ণ।

কেননা ওই আকাশ ছাড়া আমাদের জীবনে কোনও আশ্বাস নেই। ওখানেই মহাকাল চিরস্থির। ওখানে ঐতিহ্যের, পরম্পরার আশ্বাসগুলো মেঘে মেঘে, নীলে নীলে, অনন্ত নক্ষত্রবীথিতে অচঞ্চল। ওখানেই তাকিয়ে ছিলেন অসামান্য সেঞ্চুরির পর শচীন-সৌরভ-সেহবাগ-বিরাটরা। প্রায় আড়াই দশক আগে চেকোস্লোভাকিয়ায় গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার মূহূর্তে ওখানেই চোখ মেলেছিলেন নাট্যকার-প্রেসিডেন্ট ভাক্লভ হাভেল। ওখানেই চোখ মেলে রবীন্দ্রনাথ একদিন গেয়েছিলেন, ‘‘আকাশ আমায় ভরলো আলোয়, আকাশ আমি ভরবো গানে।’’

হয়তো ওই বাঘের পিঠে চড়াটাই আসল।