এক নজরে

সম্পত্তি বৃদ্ধির অভিযোগে আতস কাঁচের তলায় বাম-বিজেপি-কংগ্রেস নেতারাও

By admin

August 14, 2022

কলকাতা ব্যুরো: সম্পত্তি বৃদ্ধি মামলায় এবার কলকাতা হাইকোর্টের নজরে আসতে চলেছে শিশির অধিকারী, শুভেন্দু অধিকারী, দিব্যেন্দু অধিকারী-সহ ২০ জন নেতা-নেত্রীর নাম। চলতি সপ্তাহেই তাঁদের নাম ও সম্পত্তি বৃদ্ধি সংক্রান্ত নথি জমা পড়তে পারে আদালতে। জানা গিয়েছে তালিকায় আরও থাকতে পারে দিলীপ ঘোষ, মহম্মদ সেলিম, অধীর চৌধুরি, আবদুল মান্নান, সুজন চক্রবর্তী, লকেট চট্টোপাধ্যায়, সৌমিত্র খাঁ, মনোজ কুমার ওরাওঁ, নিশীথ প্রামাণিক, মিহির গোস্বামী, অগ্নিমিত্রা পাল, শমীক ভট্টাচার্য, তন্ময় ভট্টাচার্য, শীলভদ্র দত্ত, রাহুল সিনহা, অনুপম হাজরা এবং জিতেন্দ্রকুমার তেওয়ারির নাম। সম্প্রতি এই কুড়ি জনের নামের ও সম্পত্তির হিসাবের চার পাতার একটি তালিকা জমা পড়বে আদালতে। আগামী ৫ সেপ্টেম্বর মামলার পরবর্তী শুনানিতে হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চে এবিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হবে বলে জানা গিয়েছে।

তবে এবিষয়ে বিজেপি, কংগ্রেস বা সিপিএমের বক্তব্য অযথা তাঁদের নেতাদের নাম জড়িয়ে বিতর্ক করছে তৃণমূল। তারা আগে নিজেদের নেতা-মন্ত্রীদের সম্পত্তি বৃদ্ধির হিসেব দিক। দৃষ্টি ঘুরিয়ে লাভ নেই। গত ৮ আগস্ট রাজ্যের শাসক শিবিরের বর্তমান ও প্রাক্তন মন্ত্রী এবং বিধায়ক মিলিয়ে ১৯ জনের সম্পত্তি বৃদ্ধি নিয়ে দায়ের হওয়া জনস্বার্থ মামলায় আর্থিক বেনিয়ম সংক্রান্ত কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটকে যুক্ত করার নির্দেশ দিয়েছিল হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি প্রকাশ শ্রীবাস্তব ও বিচারপতি রাজর্ষি ভরদ্বাজের ডিভিশন বেঞ্চ। ওই সংক্রান্ত আরেকটি জনস্বার্থ মামলায় একই নির্দেশ দেয় আদালত। রাজ্যের বিরোধী শিবিরের ৩০ জন নেতার সম্পত্তি বৃদ্ধি মামলাতেও ইডি-কে পক্ষভুক্ত করাতে বলা হয়। এবার সেই সম্পত্তি বৃদ্ধির তালিকায় হাইকোর্টের নজরে আনতে রাজ্যের শাসক-বিরোধী শিবিরের আরও ২০ জনের নাম জমা পড়তে পারে আদালতে।

আদালত সূত্রে জানা গিয়েছে, এঁদের কারও পাঁচ বছরের, আবার কারও দশ বছরের সম্পত্তির হিসাব জমা দেওয়া হতে পারে। তার মধ্যে কারও সম্পত্তির পরিমাণ কয়েকশো গুণ, কারও সম্পত্তি আবার কয়েক গুণ বাড়তে পারে বলেও জানা গিয়েছে। এই সংক্রান্ত মূল মামলার সঙ্গে নতুন নামের তালিকা যুক্ত করে, এঁদের বিরুদ্ধেও কোনও স্বাধীন তদন্তকারী সংস্থাকে দিয়ে তদন্ত করানোর আর্জি জানানো হয়েছে মামলায়।২০১৬ সাল থেকে ২০২১ সালের আগে পর্যন্ত শিশির অধিকারীর স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি বেড়েছে যথাক্রমে ৬২১৩ শতাংশ ও ৩৫৬৮ শতাংশ। তাঁর স্ত্রীর সম্পত্তির পরিমাণ বেড়েছে ১৭৩৮ শতাংশ ও ৩০০ শতাংশ। ২০২১ সাল পর্যন্ত শুভেন্দু অধিকারীর স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি বেড়েছে যথাক্রমে ৮৬৭ শতাংশ ও ১২৮ শতাংশ। দিব্যেন্দু অধিকারীর স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি বেড়েছে যথাক্রমে ৬৪৫ শতাংশ ও ৫৮ শতাংশ।

এছাড়াও দিলীপ ঘোষের স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি বেড়েছে যথাক্রমে ৩৭১১ শতাংশ ও ৭ শতাংশ। সৌমিত্র খাঁর স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি বেড়েছে যথাক্রমে ৩২১ শতাংশ ও ৫৪৭ শতাংশ। লকেট চট্টোপাধ্যায়ের স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি বেড়েছে যথাক্রমে ১০০ শতাংশ ও ২ শতাংশ। অধীররঞ্জন চৌধুরীর স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি বেড়েছে যথাক্রমে ৯৬ শতাংশ ও ১১৬৩ শতাংশ। আবদুল মান্নানের স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি বেড়েছে যথাক্রমে ৮৬ শতাংশ ও ৬৬ শতাংশ, তন্ময় ভট্টাচার্যের স্থাবর সম্পত্তি কমেছে ২৬ শতাংশ, তবে অস্থাবর সম্পত্তি বেড়েছে ৮৬ শতাংশ।

উল্লেখ্য, এর আগে সম্পত্তি বৃদ্ধি নিয়ে দায়ের হওয়া জনস্বার্থ মামলায় মামলাকারী জনৈক বিপ্লবকুমার চৌধুরী, আইনজীবী অনিন্দ্যসুন্দর দাস, অরিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়দের দাবি, তালিকায় নাম থাকা নেতা-নেত্রীদের পাঁচ বছরে একেক জনের সম্পত্তির পরিমাণ বেড়েছে কয়েকশো গুণ পর্যন্ত। এই টাকা নেতা-মন্ত্রীদের আয় বহির্ভূত সম্পত্তি বলে দাবি মামলাকারীদের। তাঁরা জানান, ২০১১ সালে বিধানসভা নির্বাচনের আগে নির্বাচন কমিশনের কাছে সম্পত্তির যে হলফনামা জমা দেন, পরবর্তীতে ২০১৬ সালেও তাঁরা সম্পত্তির পরিমাণ হলফনামায় সম্পত্তির হিসাব দিয়েছেন। সেখানে সম্পত্তির হিসেবনিকেশ করে দেখা গিয়েছে, পাঁচ বছরে এই টাকা নেতা-মন্ত্রীদের আয় বহির্ভূত সম্পত্তি।‘আর্থিক দুর্নীতি’ বিষয়ক হওয়ায় রাজ্যের শাসক শিবিরের বর্তমান ও প্রাক্তন মন্ত্রী এবং বিধায়ক মিলিয়ে ১৯ জন এবং রাজ্যের বিরোধী শিবিরের ৩০ জন নেতার সম্পত্তি বৃদ্ধির সেই মামলায় ইডিকে পক্ষভুক্ত করার নির্দেশ দেয় আদালত। যদিও সম্পত্তি বৃদ্ধি ইস্যুতে ইতিমধ্যেই মাঠে নেমে পড়ছে সিপিএম। দলের তিন নেতার বিরুদ্ধে অভিযোগ নস্যাৎ করে দিয়ে পালটা আক্রমণের পথে হেঁটেছে আলিমুদ্দিন। তৃণমূলের মন্ত্রী, বিধায়কদের সম্পত্তি বৃদ্ধির তথ্য তুলে ধরা হল পার্টির তরফে। সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তী শাসকদলের মন্ত্রীদের সম্পত্তি বৃদ্ধির তথ্য তুলে ধরেন। একইসঙ্গে তিন সিপিএম নেতা সূর্যকান্ত মিশ্র, অশোক ভট্টাচার্য ও কান্তি গঙ্গোপাধ্যায়দের সম্পত্তি বৃদ্ধি নিয়ে যে অভিযোগ তা ভিত্তিহীন বলে দাবি করে তথ্য দিয়ে উড়িয়ে দিয়েছেন সুজন।