অচিনপুর

মানচিত্রের শেষ গ্রাম  

By admin

November 24, 2023

কাল থেকে অর্থাৎ ১৩-১১ শুক্রবার (১৪-১১-২০২০) আমাদের যাত্রা ছিল সবসময়ই  সর্বশেষ। গতকাল আমারা যাত্রা শুরু করেছিলাম ‘বাগনান’ থেকে আমাদের গন্তব্য ছিল ‘ধর্মতলা’, বাস সেখানেই তার যাত্রা সাঙ্গ করলো। এরপর ‘বালুরঘাট’। কুন্ডু স্পেশালে অনলাইনে বুক করা আমাদের সে যাত্রাও শেষ হলো তার সর্ব শেষ গন্তব্যে। বালুরঘাটে নেমে যে বাসটা ধরলাম সেটাও শেষ হলো তার শেষ স্টপেজ ‘চিঙ্গিশপুর’ গিয়ে। চিঙ্গিশপুরে ‘ভঞ্জন খ্যাপা’র পাঠানো টোটো ধরে ‘সানাপাড়া’ বলে যে গ্রামটাতে এলাম সেটাও পশ্চিমবঙ্গ তথা ভারতের শেষ গ্রাম। ঘটনাচক্রে যে বাড়িতে উঠেছি সেটিও সানাপাড়ার শেষ বাড়ি, তারপর কাঁটাতারের বেড়া।

এই কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে সীমান্ত নির্দিষ্ট করা হলেও দু’দেশের মাটি দু’দেশের আকাশ, গাছপালা, ফসল সবই এক। এপারের বহু লোকের জমি এখনো থেকে গেছে ওপারে। ‘সানাপাড়া’, ‘চকন্দারু’, ‘মান্ডারা’, ‘উত্তর পিরিশপুর’ এরকম সীমান্ত পাড়ের বহু গ্রামে লোহার গেট আগলে বসে রয়েছে রাইফেলধারী সীমান্ত রক্ষী। দিনের নির্দিষ্ট কিছু সময়ে, যেমন সকাল সাতটা থেকে আটাটার সময় গেট খোলা হয় এদেশের কৃষক তাদের কার্ড দেখিয়ে চাষ করতে চলে যায় ওদেশে। দুপুরে ১২টা থেকে ১টার সময় দেশে ফিরে খাওয়াদাওয়া করে আবার ফিরে যাওয়ার সুযোগ রয়েছে ওদেশে। তবে বিকেল ৪টার মধ্যে ফিরতে হবে নিজের দেশে। এ যেন এদেশ ওদেশে ডেলি প্যাসেঞ্জারি।

এ সীমান্ত কিন্তু খুব বেশিদিন কাঁটাতার দিয়ে আটকানো হয়নি, প্রথম কাঁটাতারের বেড়া দেওয়া শুরু হয়েছিল এই সেদিন, ২০০৬ সালে, তাও লোহার এঙ্গেল দেওয়া তিন তারের বেড়া। ২০১০ সালে দেওয়া হয়েছে গোল পাকানো তারের শক্তপোক্ত করে। তার আগে ছিল খুঁটি পোতা সীমান্ত, অবাধ যাতায়াত ছিল চাষি বাসীর। এক সময় পাচারকারীরা দখল নিল এলাকা, লাগলো কাঁটাতার। সাধারণ মানুষের স্বাধীনতা হল খর্ব কিন্তু পাচার বন্ধ হলো না। ‘গরু’ থেকে ‘ফেনসিডিল’ প্রতিনিয়ত পাচার হয়ে চলেছে সীমান্তরক্ষী বাহিনীর মদতে। বিএসএফ-এর মর্জির উপর নির্ভর করে চাষির  চাষের জন্য সুষ্ঠ বিদেশ যাত্রা। কাঁটাতারের এলাকায় ধান, গম, আলু, শাক-সবজি সবই চাষ করা যায় কিন্তু চাষ করা যাবেনা পাট বা কচু কিংবা কলাগাছ, কারণ বড় বা ঝাঁকড়া গাছের আড়াল নিতে পারে দুঃস্কৃতীরা। বিএসএফ-এর বিরাগভাজন হয়ে পড়লে অহেতুক কেস ঠুকে দেয় তারা তাই তাদের খুশি করতে মাঝেমধ্যে হাঁস মুরগির ভেট পাঠাতে হয় তাদের। অনেক সময় হাঁস মুরগি আপনা হতে নিখোঁজ  হয়ে বিএসএফ ক্যাম্পের রান্নাঘরের সুগন্ধ বাড়ায়। এত কিছুর মধ্যে এরা বোধহয় ভালো আছে, সন্ধ্যার পর এখনো এখানে বসে গানের আসর। রাষ্ট্রীয় অনুদানের ক্লাব খুব একটা গজিয়ে ওঠেনি এখনো তাই পরের প্রজন্ম গান থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়নি। তবে শেষের সেদিন বোধহয় আসন্ন, সে আশঙ্কা প্রকাশ করে গেলেন প্রভাস বর্মন ও নারায়ণ বর্মন।

পরে কোনোদিন বলা যাবে এখানকার গান নিয়ে দু’চার কথা।