ছাপা যন্ত্র প্রথম আবিস্কার হয়েছিলপাঁচ সাতশ বছর আগে। তারও বহু আগে থেকে মানুষ গাছের বল্কলে, গুহায়, পাথরের গায়ে লেখালেখি করতো।কিন্তু মানুষ যেদিন প্রথম ছাপা যন্ত্র আবিস্কার করলো তারপরই নীরবে ঘটে গেল এক বিপ্লব। উল্লেখ্য,প্রাচীন চীনারা বই সংগ্রহ শুরু করে ৯৬০ সালের পরে। তার এর নাম দেয় ‘শানবিন’। বইকে তারা খুবই গুরুত্ব দিতো। তাদের সংস্কৃতি ইতিহাসকে ধরে রাখার জন্যই বই সংগ্রহ শুরু করে চীনারা। পৃথিবীতে এই বই সংগ্রহের রীতিটি বেশ পুরনো। সক্রেটিস আমলেও ছিল বলেও জানা যায়।তবে ইতিহাস বলছে গুটেনবার্গ সাহেব প্রথম বাইবেলের কয়েকটি অধ্যায় ছাপার আগে দ্বাদশ শতকে জার্মানিতে হাতে লেখা বই বিক্রি হতো। পরে ১৪৬২ সালে জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্টার মেসে বিশ্বের প্রথম বইমেলা অনুষ্ঠিত হয়। যা ‘দ্য ফ্রাঙ্কফুর্ট বুকফেয়ার’ নামে পরিচিত। সে সময় জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট ছিল ইউরোপের ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রাণকেন্দ্র। বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন মানুষের যাতায়াত ছিল ফ্রাঙ্কফুর্টে। তাদের কেন্দ্র করেই মূলত গড়ে উঠেছিল ফ্রাঙ্কফুর্টার মেস। বর্তমানে ‘দ্য ফ্রাঙ্কফুর্ট বুকফেয়ার’ বিশ্বের সবচেয়ে বড় বইমেলা। এ মেলাতে বিশ্বের প্রায় ১০০টি দেশ থেকে ৭৩০০-এর মতো পুস্তক প্রকাশক ও পরিবেশক অংশ নিয়ে থাকেন।
প্রসঙ্গত, জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট শহরেই পৃথিবীর প্রথম বইমেলা হয়েছিল। যে বইমেলার ইতিহাস ৫০০ বছর পুরোনো। বহু শতাব্দী ধরে ইউরোপের বাণিজ্য ও ব্যাংকিংয়ের কেন্দ্রে ছিল ফ্রাঙ্কফুর্ট শহর। সেই সুবাদে ফ্রাঙ্কফুর্টাস মেসের কথা সেই দ্বাদশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময় থেকেই শোনা যায়। বেশ কিছু সূত্র থেকে জানা যায়, সেই ১৪৭৮ সাল থেকেই এখানে বইমেলা হত এবং তা আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ ছিল। ১৯৭৫ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্তপিটার ওয়েডহাস এই মেলার একজন পরিচালক ছিলেন। তাঁর একটি বই আছে, ‘আ হিস্টি অব দ্য ফ্রাঙ্কফুর্ট বুকফেয়ার’ বা ফাঙ্কফুর্ট বইমেলার ইতিহাস নামে। সেখানে তিনি লিখেছেন, রাজা অষ্টম হেনরি নাকি স্যার টমাস বোডলিকে এই বইমেলায় পাঠিয়েছিলেন অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন লাইব্রেরির জন্য বই কিনতে।
পরবর্তীকালে, সম্ভবত রানি মেরির রাজত্বকালে (ধর্মের নামে গণ নিধনের কারণে যাঁর ডাকনাম হয়েছে ব্লাডি মেরি) নিষিদ্ধ বইয়ের এক তালিকা বানানো হয়েছিল। মেলার বহু বই ছিল সেই তালিকায়। যে কারণে ফ্রাঙ্কফুর্টের প্রকাশনা ব্যবসা সেই সময় যথেষ্ট ক্ষতিগ্রস্তও হয়েছিল। ১৭ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে, প্রটেসন্ট্যান্ট শাসনাকালে ফ্রাঙ্কফুর্টকে ম্লান করে দিয়ে লেইপজিগ শহর প্রকাশনা বাণিজ্যের কেন্দ্রে চলে আসে। আবার দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তী সময়ে ১৯৪৯ সালে ২০৫টি জার্মান প্রকাশনীকে নিয়ে নতুন উদ্যমে চালু হয় ফ্রাঙ্কফুর্ট মেলা। এই মেলাকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেয় ‘জার্মান প্রকাশক সমিতি’। আর ১৯৬৪ সাল থেকে এই মেলা পেয়ে যায় আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি। প্রত্যেক বছর অক্টোবর মাসের মাঝামাঝি সময়ে এই মেলা শুরু হয়। মেলার সময়কাল পাঁচ দিন। মেলার আয়োজক জার্মান পাবলিশার অ্যান্ড বুক সেলার অ্যাসোসিয়েশন। আলবেনিয়া থেকে জিম্বাবুয়ে পর্যন্ত প্রায় ১০০টি দেশ থেকে প্রায় ৭ হাজার ৫০০ প্রকাশনী এতে অংশগ্রহণ করে।এছাড়াও বিশ্বের নানা প্রান্তেরলেখক, পাঠক, দর্শক ও সাংবাদিক সহ বুদ্ধিজীবীদের অংশগ্রহণে মুখরিত হয়ে ওঠে এই মেলা প্রাঙ্গণ।