এক নজরে

কৃষক আন্দোলনে ফের উত্তাল হয়ে উঠছে দেশ

By admin

February 14, 2024

পাঞ্জাব-হরিয়ানা-উত্তরপ্রদেশের ২৫ হাজার কৃষক সঙ্গে পাঁচ হাজার ট্র্যাক্টর নিয়ে তাঁরা ‘দিল্লি চলো’ অভিযান শুরু করার পরেই পাঞ্জাব-হরিয়ানা শম্ভু সীমানায় পুলিশের সঙ্গে প্রবল ধস্তধস্তি হয় আন্দোলনকারীদের।এক সময়ে তাঁদের ছত্রভঙ্গ করতে ড্রোন থেকে টিয়ার গ্যাসের শেল ফাটানো হয়। এখনও উত্তর ভারতে যথেষ্ট ঠান্ডা, তা সত্ত্বেও তাঁদের উপর বারবার জলকামান চালানো হয়।পুলিশ লাঠি উঁচিয়ে অনেক জায়গায় তেড়ে গেলেও তাঁদের হতদ্যোম করা যায়নি। বরং তাঁরা দিল্লির দিকে এগিয়েছেন।

গোটা দিল্লি শহর কড়া নিরাপত্তার বেড়াজালে মোড়া। আসলে এই বিক্ষোভের কেন্দ্রে রয়েছে ফসলের ন্যূনতম সহায়ক মূল্য। অর্থাৎ মোদী সরকার ফসলের ন্যূনতম সহায়ক মূল্য অত্যন্ত কম রেখেছে তার জেরে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন চাষীরা। মোদী সরকার কম হারে ফসলের ন্যূনতম সহায়ক মূল্য দিচ্ছে বলে অভিযোগ চাষীদের। যার জেরে অন্য ব্যবসায়ীরা সুবিধা পেয়ে যাচ্ছে। এবং তাঁদের অন্য ব্যবসায়ীদের কাছে কম টাকায় ফসল বিক্রি করে দিতে হচ্ছে। কৃষকদের প্রাথমিক দাবি হল সমস্ত ফসলের জন্য ন্যূনতম সমর্থন মূল্যের (এমএসপি) আইনি গ্যারান্টি। 

কৃষকরা চান স্বামীনাথন কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়িত হোক। প্রয়াত এমএস স্বামীনাথনের নেতৃত্বে কৃষকদের জন্য জাতীয় কমিশন ২০০৬ সালে  রিপোর্ট জমা দেয়। কমিশনের অন্যতম সুপারিশ ছিল যে এমএসপি উৎপাদনের ওজনের গড় খরচের চেয়ে কমপক্ষে পঞ্চাশ শতাংশ বেশি হওয়া উচিত । এই সুপারিশটি ২০০৭ সালের কৃষকদের জন্য জাতীয় নীতিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি।

আন্দোলনকারীরা কৃষক ও কৃষি শ্রমিকদের জন্য পেনশন চান। তাঁরা ৬০ বছরের বেশি বয়সী প্রতিটি কৃষক ও খামার শ্রমিকদের জন্য মাসে ১০ হাজার টাকা মাসিক পেনশনের জন্য জোর দিচ্ছেন।

কৃষকের ঋণ মকুব হল প্রতিবাদী কৃষকদের আরেকটি প্রধান দাবি । কৃষকদের মতে, কৃষিঋণই কৃষকদের জীবন চলে যাওয়ার প্রধান কারণ । এটি সামগ্রিকভাবে কৃষিজীবী সম্প্রদায়কে শ্বাসরুদ্ধ অবস্থায় রেখেছে ৷ কৃষকরা বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে নেওয়া সমস্ত কৃষিঋণ সম্পূর্ণ মকুবের দাবি তুলেছেন ৷

কৃষকরা দাবি করেছেন যে ২০২০-২১ সালে সরকারের বিরুদ্ধে  যে কৃষকরা আন্দোলন করেছিলেন, তাঁদের বিরুদ্ধে সমস্ত মামলা প্রত্যাহার করতে হবে৷ জানা গিয়েছে সরকার এই দাবিতে সম্মত৷

২০২০-২১ সালে কৃষকদের বিক্ষোভের সঙ্গে যুক্ত আরেকটি দাবি হল, আন্দোলনের সময় প্রাণ হারিয়েছে এমন বেশ কয়েকজন কৃষকের পরিবারের জন্য আর্থিক সাহায্য দিতে হবে৷

কৃষকরা চান কেন্দ্রীয় সরকার জমি অধিগ্রহণ আইন ২০১৩ ফিরিয়ে আনা হোক। কারণ, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই জমি অধিগ্রহণের পর কৃষকরা ভূমিহীন হয়ে পড়েছে। তাঁরা উন্নয়নমূলক প্রকল্পের জন্য বিভিন্ন কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে অধিগৃহীত জমির ন্যায্য ক্ষতিপূরণ চান৷ তাঁদের আরও দাবি, তাঁদের জমিতে গড়ে ওঠা আবাসিক বা বাণিজ্যিক প্লটে পরিবারের জন্য ১০ শতাংশ জমি নির্ধারণ করা হোক। কৃষকদের যুক্তি, তাঁরা কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে যে ক্ষতিপূরণ পাচ্ছেন, তা মোট অধিগৃহীত জমির পাঁচ থেকে সাত শতাংশ। কৃষকরা বলছেন, এর আগে কম দামে জমি অধিগ্রহণের কারণে তাঁরা আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন ।

আন্দোলনকারীদের তরফে লখিমপুর খেরির ঘটনায় নিহত কৃষকদের পরিবারের জন্য আর্থিক সাহায্যের দাবিও তোলা হয়েছে৷ পাশাপাশি ২০২১ সালের ৩ অক্টোবর ঘটে যাওয়া ওই ঘটনায় দোষীদের কড়া শাস্তির দাবিও করা হয়েছে ৷ ওই ঘটনায় চারজন প্রতিবাদী কৃষককে গাড়ি চাপা দিয়ে হত্যার অভিযোগ ওঠে৷ ওই ঘটনায় মূল অভিযুক্ত কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অজয় মিশ্রের ছেলে আশিস মিশ্র৷

Untitled

মহাত্মা গান্ধী ন্যাশনাল রুরাল এমপ্লয়মেন্ট গ্যারান্টি অ্যাক্ট অনুযায়ী কাজের দিন ১০০ থেকে বাড়িয়ে ২০০ এবং দৈনিক মজুরি ৭০০ টাকা করার দাবি তুলেছেন কৃষকরা৷ পাশাপাশি তাঁরা এটি কৃষির সঙ্গে সংযুক্ত করার দাবিও তুলেছেন৷

কৃষকরা চায় ভারত সরকার বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা (ডব্লিউটিও) থেকে সরে যাক। দীর্ঘদিন ধরে কেন্দ্রীয় সরকারকে ডব্লিউটিও থেকে বেরিয়ে আসার এবং এই সংস্থার সঙ্গে সম্পাদিত সমস্ত বাণিজ্য চুক্তি বন্ধ করার জন্যা কৃষকেরা চাপ দিয়ে আসছে। কৃষকদের মতে, ডব্লিউটিও ছোট জমির মালিক কৃষকদের উপেক্ষা করে বাণিজ্যিক ও শিল্প সংক্রান্ত চাষের পক্ষে জোর দেয়৷

মঙ্গলবার মধ্যরাতেও কৃষিমন্ত্রীকে কৃষক সংগঠনের পক্ষ থেকে একটি প্রতিবাদ পত্র পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু তাতে কোনও সুরাহা মেলেনি। তাই দিল্লি চলো অভিযানে অনড় কৃষকরা। এদিকে কৃষকদের এই অভিযান প্রতিহত করতে কার্যত দুর্গে পরিণত করা হয়েছে রাজধানী দিল্লিতে। পাঞ্জাব, হরিয়ানা সীমান্তে পুলিশ পিকেট বসানো হয়েছে। পুলিশ কাঁটাতার দিয়ে ব্যারিকেড তৈরি করেছে যাতে কৃষকরা সেই পথে দিল্লি প্রবেশ করতে না পারে তার জন্য সবরকম প্রস্তুতি নিয়ে ফেলেছে দিল্লি পুলিশ। একই সঙ্গে দিল্লি সীমানায় বিশাল পুলিশ বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। তাদের কাছে কাঁদানে গ্যাসের সেল, জলকামান রয়েছে।