এক নজরে

কলকাতা পুলিশের প্রভাবশালী শান্তনু সিনহা বিশ্বাসকে সরালো কমিশন

By admin

March 26, 2021

কলকাতা ব্যুরো: সুরজিৎ কর পুরকায়স্থর পর শান্তনু সিনহা বিশ্বাস।একজন বর্ষীয়ান আইপিএস, অন্যজন কলকাতা পুলিশের ইন্সপেক্টর। নির্বাচন কমিশন শুক্রবার সন্ধ্যায় পদ থেকে অপসারণ করল শান্তনু সিনহা বিশ্বাসকে। কালীঘাট থানার ওসি গত সেপ্টেম্বরে নয়া দায়িত্ব পেয়েছিলেন পুলিশ ওয়েলফেয়ার বোর্ড এর সমন্বয়কারী হিসেবে। রাজ্য পুলিশ এবং কলকাতা পুলিশের মধ্যে সমন্বয়ের দায়িত্ব ছিলেন এই ইন্সপেক্টর। সুরজিৎ কর পুরকায়স্থ রাজ্য পুলিশের ডিজি হিসেবে চাকরি থেকে অবসর নেওয়ার পর মুখ্যমন্ত্রীর আস্থাভাজন হওয়ায় তাকে রাজ্যের নিরাপত্তা উপদেষ্টা হিসেবে নতুন দায়িত্ব দিয়েছিল তৃণমূল সরকার। আর মুখ্যমন্ত্রীর আস্থাভাজন হওয়ায় কালীঘাটের শান্তনু সিনহা বিশ্বাসকে দেওয়া হয়েছিল ভোটের মুখেই ওয়েলফেয়ার বোর্ড এর সমন্বয়কারীর পদ। যাতে গোটা রাজ্যের পুলিশের কাছে শাসকের বার্তাবহ হয়ে উঠেছিলেন তিনি।

পুলিশের রাজ্য ওয়েলফেয়ার বোর্ড এর কোঅর্ডিনেটর হিসেবে দায়িত্বে থাকলেও শান্তনু সিনহা বিশ্বাসের পোস্টিং ছিল ইন্সেপেক্টর স্পেশাল ব্রাঞ্চ। এদিন নির্বাচন কমিশন তাকে পাঠালো ইন্সেপেক্টর ডাইরেক্টোরেট অফ ইকোনমিক অফেনসেস। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়ি কালীঘাট থানার মধ্যে। তাই বরাবরই এই থানার ওসি হন মুখ্যমন্ত্রীর অতি বিশেষ আস্তাভাজন। ২০১১ সালে তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পর দীর্ঘদিন মহাদেব চক্রবর্তী সেখানে ওসির দায়িত্বে ছিলেন। যিনি বাম আমলেও বাম-বিরোধী হিসেবে পরিচিত ছিলেন। পরবর্তীতে শান্তনু সিনহা বিশ্বাস কালীঘাটের দায়িত্ব পান। তার প্রভাব কতটা তা নিয়ে যথেষ্টই চাপে থাকেন বিভাগীয় ডিসিরাও। এমনকি অতিরিক্ত কমিশনাররাও জানেন কালীঘাটের ওসি কলকাতা পুলিশের অন্যতম ক্ষমতার ভরকেন্দ্র। তাই কালীঘাটের ওসিকে খুব বেশি ‘পরামর্শ’ দেওয়ার চেষ্টা করেন না শীর্ষ আইপিএসরাও। আর হরিশ চ্যাটার্জি স্ট্রিট এর সঙ্গে কানেকশনের দৌলতে কালীঘাটের ওসি অন্যতম রাজ্যের প্রভাবশালী হিসেবেই চিহ্নিত হন।

রাজ্যে পুলিশের ওয়েলফেয়ার বোর্ড ছিল আগেই। তা সত্ত্বেও গত বছর সেপ্টেম্বরে হঠাৎই সেই বোর্ডের কাজে আরো গতি বাড়াতে সেখানে হঠাৎ করেই কালীঘাট থানার ওসিকে সমন্বয়কারীর দায়িত্ব দিয়ে দেয় রাজ্য সরকার। সরকারি এই বোর্ডের জন্য জেলায় জেলায় অফিস নেওয়া হয়। সেই অফিসে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি দেখা যায়। এমন কি গত কয়েক সপ্তাহ আগে বিজেপি এবং সিপিএম নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ জানায়, এই ওয়েলফেয়ার বোর্ড আসলে নির্বাচনে পুলিশকে রাজ্যের শাসক দলের হয়ে নিয়ন্ত্রণ করার একটা মাধ্যম হয়ে উঠেছে। আর সেখানে শান্তনু সিনহা বিশ্বাসের নামে প্রভাব খাটানোর অভিযোগ করা হয়। একই সঙ্গে বিরোধী দলগুলি অভিযোগ করে, পুলিশের পোস্টাল ব্যালটে কারচুপির আশঙ্কা রয়েছে। তাদের অভিযোগ, থানায় থানায় এই ওয়েলফেয়ার বোর্ড এর মাধ্যমে মৌখিক নির্দেশ পৌঁছে গিয়েছিল নির্বাচন ঘোষণার আগেই। পোস্টাল ব্যালটে সবাইকে করণীয় স্থির করে দিয়েছিল এই ওয়েলফেয়ার বোর্ড, এমন অভিযোগ বিরোধীরা করে কমিশনের কাছে। পরবর্তীতে নির্বাচন কমিশন পোস্টাল ব্যালট নিয়েও কিছু কড়া কড়ি করে দিয়েছিল। আর সর্বশেষ প্রভাবশালী সেই ওয়েলফেয়ার বোর্ড এর কর্তা শান্তনু সিনহা বিশ্বাসকে সরিয়ে দেওয়া হলো তার পদ থেকেই।

২ মে ভোট গণনার পর যদি তৃণমূল সরকার আবার ক্ষমতায় ফিরে সে ক্ষেত্রে শান্তনু সিনহা বিশ্বাসরা আবার তাদের পুরনো পদ ফেরত পেতে পারেন। আর কোন ক্রমে বিজেপি যদি রাজ্যে ক্ষমতার ভার পায় সে ক্ষেত্রে কোথায় ঠাঁই হবে এমন রাজনীতিক দলের আস্থাভাজন উর্দি ধারীদের, তা উপরওয়ালাই জানেন।