এক নজরে

ধরা হয়নি সেই ব্যাঙ্ক ডাকাতদের

By admin

December 01, 2021

অপরাধ দুনিয়ায় ব্যাংক ডাকাতির মতো ঘটনা সব সময়েই আলোচনার বিষয় ছিল। এ নিয়ে বহু রকম গবেষণাও আছে। যার মধ্যে দুই অর্থনীতির অধ্যাপক জিওভান্নি মান্ত্রোবুয়োনি এবং ডেভিড এ রিভার্স-এর গবেষণার কথা আলাদা করে উল্লেখ করতে হয়। তাঁরা গবেষণা করেছিলেন ব্যাংক ডাকাতদের আচরণ নিয়ে। পাঁচ হাজার ব্যাংক ডাকাতির ঘটনা বিশ্লেষণ করে এই দুই অর্থনীতিবিদ জানান, ব্যাঙ্ক ডাকাতি সফল হওয়ার সম্ভাবনা বেশি হয় যত কম সময়ে সেটি সম্পন্ন করা যায়, আর যদি তা তিন মিনিটের মধ্যে করা যায় তাহলে তা পুরোপুরি সফল হয়।

ক্লেটন রস থাম যিনি মাত্র দু’বছরে বেশ কয়েকটি সফল ব্যাঙ্ক ডাকাতি করেছিলেন, একদিন তিনি নিজেই পুলিশকে ফোন করে সব স্বীকার করেন। এর জন্য তাঁর পাঁচ বছর জেলও হয়। এরপর তিনি একটি বইও লেখেন- দ্য ব্লু চিপ স্টোর: হাউ ব্যাংক রবারি চেইঞ্জড মাই লাইফ। সেই বইতে তিনি ব্যাংক ডাকাতদের জন্য ১০টি টিপসও দিয়েছেন। জানি না ব্যাঙ্ক ডাকাতরা তাঁর সেই বই পড়েছে কিনা বা টিপস কাজে লাগিয়েছে কিনা। তবে ‘আস্ক মি এনি কোশ্চেন’ শীর্ষক একটি সাক্ষাতকারভিত্তিক অনুষ্ঠানে তিনি নিজের পরিচয় দিয়েছিলেন, একজন অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংক ডাকাত বলে।

এবার ঢোকা যাক একটি ব্যাঙ্ক ডাকাতির ঘটনায়। ঘটনাস্থল লন্ডনের ওয়েস্টমিনস্টার, লয়েডস ব্যাঙ্কের বেকার স্ট্রিটের শাখা। লন্ডনের এই রাস্তাটিকে আরও বিখ্যাত করেছেন শার্লক হোমস। তিনি এখানেই থাকতেন। আর সে রাস্তারই লয়েডস ব্যাংকে ১৯৭১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর ঘটে দুর্ধর্ষ এক ডাকাতি যে ডাকাতরা আজও ধরা পড়েনি, উদ্ধার হয়নি ডাকাতির টাকা, গয়না ও মূল্যবান জিনিসপত্র।

ডাকাতরা বেকার স্ট্রিটের ওই ব্যাঙ্কের দুটি বাড়ি পর মাত্র ৫০ ফুট দূরত্বে একটা চামড়ার জিনিসপত্রের দোকান ভাড়া নেয়। দিনেরবেলা বিক্রিবাটা আর রাতে মাটির নীচ দিয়ে সুড়ঙ্গ খোঁড়া। এইভাবে একদিন সুড়ঙ্গ খুঁড়ে তারা ঢুকে পড়ল ব্যাঙ্কের ভল্ট রুমে। ডাকাতদের একটি দল যখন ভল্ট রুমে, তখন আরেকটি দল পাশের বাড়ির ছাদে পাহারায়। তারা নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ রাখছিল ওয়্যারলেস সেটে। কিন্তু রবার্ট রোল্যান্ড নামে এক হ্যাম রেডিও অপারেটর অত রাতেও ওয়্যারলেসে দু’দল ডাকতদের কথাবার্তা শুনে ফেলেন। তিনি সঙ্গে সঙ্গে জানিয়ে দেন স্থানীয় থানায়। কিন্তু পুলিশ তাঁর কথা বিশ্বাস করেনি। এরপর রোল্যান্ড স্কটল্যান্ড ইয়ার্ডের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তারপর পুলিশের টনক নড়ে।

পুলিশ রাত দুটো নাগাদ বেকার স্ট্রিটের সমস্ত ব্যাংকের সামনে হাজির হলেও কিছুই উদ্ধার করতে পারেনি। তখন ডাকাতরা লয়েডস ব্যাঙ্কের ভিতরে, দরজা বন্ধ দেখে পুলিশ নিশ্চিন্ত হয়ে ফিরে যায়। আর সেই রাতে ডাকাতরা নগদ ১৫ লাখ পাউন্ড অর্থাৎ ২ কোটি ৮ লাখ পাউন্ড এবং ২৬০টি সেফ ডিপোজিট বক্স নিয়ে নিরাপদে চম্পট দেয়।

কেবল ব্যাঙ্ক ডাকাতি নয়, ফিরে যাওয়ার আগে তারা রসিকতা করতেও ভোলেনি। চম্পট দেওয়ার আগে তারা ব্যাঙ্কের দেয়ালে ‘এখন দেখা যাক শার্লক হোমস কীভাবে রহস্যের কিনারা করেন’ এই কথাটিও লিখে রেখে যায়। প্রশ্ন চ্যালেঞ্জটা না হয় শার্লক হোমস নিতে পারেননি, কিন্তু স্কটল্যান্ড ইয়ার্ড কেন পারল না। কারণ, ব্রিটিশ সরকার চায়নি রহস্যের কিনারা হোক। এমনকি ব্যাংক ডাকাতির সব খবর নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে প্রচারে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল। কি সেই নিরাপত্তা- ব্যাংকের সেফ ডিপোজিট বক্সে রাখা ছিল রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের বোন প্রিন্সেস মার্গারেটের কিছু খোলামেলা ছবি। ওই ওই ছবিগুলো দিয়ে এমন একজন ব্ল্যাকমেল করতেন যার বিরুদ্ধে ব্রিটিশ পুলিশ কোনো ব্যবস্থাও নিতে পারছিল না। স্বভাবতই সেই ছবির কথা সাধারণ মানুষ জানুক তা রাজপরিবার চায়নি। এমনকি একথাও চালু হয়েছিল যে ব্রিটিশ গোয়েন্দা সংস্থা এমআইফাইভ ডাকাতদের ভাড়া করে ব্যাংক ডাকাতি করতে পাঠিয়েছিল। তবে এই ব্যাংক ডাকাতির ঘটনা নিয়ে ;দ্য ব্যাংক জব’ নামে একটি ছবি তৈরি হয়েছিল।