এক নজরে

নানা দেশের অদ্ভুত ভোট

By admin

April 20, 2024

ভোটের হাওয়া বইছে এখন দেশজুড়ে। সেই হাওয়ায় দুলছে ভোটার, ভোটকর্মী, প্রার্থী এক কথায় দেশের আম জনতা। প্রত্যেকেই কথা বলছে ভোটে কি হবে আর কি হবে না তাই নিয়ে। ভোটের মধ্যেই রয়ে গিয়েছে নানা প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তি। ভোট নিয়ে যে আমরাই বেশি মাতামাতি করি, তা কিন্তু নয়। হয়তো পৃথিবীর অন্য সব দেশ ভোট নিয়ে এমন তুমুল মাতামাতি করে না, কিন্তু এমন অনেক দেশ আছে যাদের ভোট সত্যি খুব অদ্ভুত। রীতিমতো অবাক করার মতো।

দুনিয়ার বেশির ভাগ দেশই রবিবার ভোটের দিন হিসাবে পছন্দ করেন না। তারা চান সপ্তাহের অন্য দিনগুলির যে কোনো একদিন ভোট হোক কিন্তু রবিবার কিছুতেই নয়। কারণ, রবিবার দিনটি সাপ্তাহিক ছুটি, সেই ভোটের জন্য উপযুক্ত নয়। বিশেষ করে যেসব দেশের প্রাথমিক ভাষা ইংরেজি তারা সবাই রবিবারকে ভোটের দিন হিসেবে এড়িয়ে যেতে চান। যেমন কানাডার নাগরিকরা সোমবার, ব্রিটেন বৃহস্পতিবার এবং অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড শনিবার দিনটিকে ভোটের দিন বেছে নেয়। আর আমেরিকা মঙ্গলবার। তবে পৃথিবীর বেশিরভাগ দেশেই ভোট হয় রবিবারে।   

বেলজিয়াম প্রিথিবীর প্রথম দেশ যেখানে ১৮৯২ সালে পুরুষদের জন্য এবং ১৯৪৯ সালের নারীদের জন্য বাধ্যতামূলক ভোটের ব্যবস্থা চালু হয়। এখন পর্যন্ত মোট ২২টি দেশে এই নিয়ম চালু আছে। তার মানে নাগরিকদের অবশ্যই নিজের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে হবে। তা নাহলে বিভিন্ন ধরনের শাস্তি পেতে হবে। যেমন অস্ট্রেলিয়াতে ভোট না দেয়ার শাস্তি হিসেবে গুণতে হবে ২০-৫০ অস্ট্রেলিয়ান ডলার জরিমানা।

পশ্চিম আফ্রিকার দেশ গাম্বিয়ায় ব্যালট পেপার নয়, ভোট হয় মার্বেল দিয়ে। প্রায় ২১ লক্ষ জনসংখ্যার দেশ গাম্বিয়াতে শিক্ষার হার প্রায় ৫৬%। নিরক্ষরতা যাতে ভোট দানে বাঁধা না হয়ে দাঁড়ায়, তাই সে দেশে গত ৬০ বছর ধরেই মার্বেলের মাধ্যমে ভোট দেওয়ার ব্যবস্থা চালু রয়েছে। ভোটে প্রত্যেক ভোটারকে ব্যালটের একটি স্বচ্ছ মার্বেল দেওয়া হয়, এবং ব্যালট বক্সের পরিবর্তে সেখানে থাকে প্রার্থীর ছবি লাগানো ড্রাম। ভোটারের যে প্রার্থীকে পছন্দ সেই ভোটার প্রার্থীর ড্রামে মার্বেলটি ফেলেন।

উত্তর কোরিয়াকে কি গণতান্ত্রিক দেশ বলা যায়। ক্ষ্যাপাটে রাজা কিম জং উনের দেশে ভোটের কথায় যে কারও অবাক হওয়াটাই স্বাভাবিক। একচ্ছত্র আধিপত্য যেখানে ধার্য সেখানে আবার ভোট কীভাবে সম্ভব? সে দেশে তো বিকল্প প্রার্থী বাছাইয়ের সুযোগই নেই। কিন্তু সে দেশেও ভোট হয় তবে পদ্ধতিটি অবশ্যই ভিন্ন। গণতান্ত্রিক নির্বাচনের মতো কখনই নয়। উত্তর কোরিয়ার ক্ষমতাসীন দল একটি ব্যালট নির্ধারণ করে থাকে। সেই ব্যালটে থাকে একটি মাত্র নাম। এই ভোটকে ভোট ভোট খেলাও বলা যেতে পারে। প্রতি পাঁচ বছরে সেখানে একটি ভোটের আয়োজন করা হয়। ২০১৫ সালে শেষবার ভোট হয়েছে। ভোট দিতে অংশ নিয়েছে ৯৯.৭ শতাংশ ভোটার। কিন্তু হাস্যকর হলেও সত্য যে, ভোটারদের পছন্দসই প্রার্থী বেছে নেওয়ার কোনো সুযোগ ছিল না। কেউই শাসককে প্রত্যাখ্যান করেনি। এমন ভোট প্রতি পাঁচ বছর হয়ে আসছে।

দুনিয়ার প্রায় ২০৫টি দেশে ভোটা দিতে ন্যূনতম বয়স লাগে ১৮ বছর। তবে এর থেকে কম বয়সেও ভোট দেওয়া যায়। ব্রাজিল ১৯৮৮ সালে প্রথমবারের মত ১৬ বছর বয়সী কিশোর-কিশোরীদের ভোট দেওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়। এরপর অস্ট্রিয়া, ইকুয়েডর, আর্জেন্টিনাসহ প্রায় ১১টি দেশে ১৬ বছর থেকেই ভোট দেওয়ার সুযোগ মেলে। ২০০৭ এর আগে ইরানে ১৬ বছর থেকে ভোট দেওয়ার সুযোগ ছিল। ২০০৭ সালে তা পরিবর্তন করে করা হয় ১৮ বছর। তবে ১৯৮০ সালের পর থেকে বেশ কয়েকবার পরিবর্তন করা হয়েছে সেটি। বসনিয়া ও হার্জেগোভিনায় ১৮ বছর বয়স থেকেই ভোটের অধিকার পায় সবাই। তবে কারো বয়স ১৬ বা এর বেশি, কিন্তু সে যদি কোনো কর্মক্ষেত্রে যুক্ত থাকে, তবে সে ভোট দিতে পারবে। তবে আরব আমিরাতে ভোট দিতে চাইলে আপনার বয়স ন্যূনতম ২৫ বছর হতে হবে।

আন্তর্জাতিক স্পেস স্টেশন থেকে মহাকাশচারীরা ভোট দিতে পারবে এই মর্মে টেক্সাসে আইন পাস হয় ১৯৯৭ সালে। তখন থেকে নভোচারীরা ভোট দেওয়ার সক্ষমতা অর্জন করে। ২০০৫ সাল থেকে এস্তোনিয়ায় অনলাইনে ভোট দেওয়ার রীতি চালু আছে। ভোটাররা ঘরে বসেই নিজের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিয়ে দেন। অথবা কোথাও ঘুরতে গেছেন, হাতে থাকা স্মার্ট ফোন দিয়ে নিজের ভোট দিয়ে দিচ্ছেন। ভোটদানের ক্ষেত্রে নারী-পুরুষের সমান অংশগ্রহণ আমাদের কাছে খুব স্বাভাবিক একটি বিষয়। কিন্তু এর ব্যতিক্রম দেখা যায় চিলিতে। সেখানে ২০১২ সালের  নির্বাচনেও নারী-পুরুষ আলাদাভাবে অংশগ্রহণ করে। চিলির স্থানীয় নির্বাচনে নারীরা ভোটদানের অধিকার পায় ১৯৩০ সালে। তাদের জন্য তৈরি হয় আলাদা একটি তালিকা। তখন থেকে নারী ও পুরুষ ভোট দেয় আলাদা পোলিং স্টেশনে। যুগের পরিবর্তন হলেও নিয়মটি এখনো বহাল রয়েছে।