অদ্ভুতুড়ে

অদ্ভুত রহস্যময়য় দ্বীপ

By admin

March 20, 2024

দক্ষিণ আমেরিকার ইকুয়েডরের কাছে ১৩টি দ্বীপ নিয়ে গ্যালাপাগোস দ্বীপপুঞ্জ। সেই দ্বীপপুঞ্জের ঠিক মাঝখানে অদ্ভুত এক রহস্যময় এক দ্বীপ বাল্ট্রা। স্থানীয় নাম ইসলা বালত্রা। অনেকে এই দ্বীপটিকে আবার অভিশপ্ত দ্বীপও বলে। এই দ্বীপে জনমানুষের দেখা মেলেনা না। কেবল যে মানব বসতি নেই তা নয়, রুক্ষ ধূসর এই দ্বীপটিতে নেই কোন গাছ। এক জাতের ফণীমনসা আর পালো সান্টো গাছ ছাড়া এই ধূ ধূ শূন্য দ্বীপে সবুজের দেখা মেলে না। বাল্ট্রা দ্বীপে কোনো  পশুপাখি, কীটপতঙ্গ, পোকামাকড়ও নেই। এই সব কারণে এই দ্বীপের আরেক নাম ‘ডেড আইল্যান্ড’ বা মৃত দ্বীপ।

জানা যায় এক সময় বাল্ট্রা দ্বীপে কিন্তু মানুষের বসবাস ছিল। কিন্তু কয়েকশো বছর আগে এক অদ্ভুত রোগ দ্বীপে ছড়িয়ে পড়লে একের পর এক মানুষের মৃত্যু হয়। তখন প্রাণের ভয়ে এই দ্বীপের সমস্ত মানুষ প্রাণের ভোয় ঘরবাড়ি ছেড়ে অন্যত্র পালিয়ে যায়। তারপর থেকে মুখে মুখে রটে যায় যে এই দ্বীপ অভিশপ্ত, একবার গেলে আর প্রাণ নিয়ে ফেরা যাবে না। সেই থেকে এই দ্বীপ জনমানবশূন্য হপয়ে যায়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় আমেরিকা পানামা খালকে সুরক্ষিত রাখতে এবং পূর্ব প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলকে শত্রুর আক্রমণ থেকে রক্ষা করার জন্য বাল্ট্রা দ্বীপে বিমানঘাঁটি স্থাপন করেছিল। তারপর থেকেই অজ্ঞাতপরিচয় এই দ্বীপের রহস্যময় আচরণের কথা ছড়িয়ে পড়ে।

গ্যালাপাগোস গ্রীষ্মমণ্ডলীয় দ্বীপপুঞ্জ হওয়ায় এখানে প্রচুর বৃষ্টি হয় কিন্তু বাল্ট্রা দ্বীপের চরিত্র অন্য দ্বীপগুলির থেকে একেবারেই আলাদা। আশেপাশের দ্বীপগুলিতে প্রবল বৃষ্টি হলেও একটি ফোঁটাও বৃষ্টি পড়ে না বাল্ট্রায়। কোনো এক রহস্যময় কারণে বৃষ্টির ফোঁটাগুলি বাল্ট্রার মাটিতে পড়ার আগেই উড়ে চলে যায় অন্য দিকে। ইকুয়েডরের আশেপাশের এই দ্বীপগুলোতে বাস করে প্রচুর পরিমানে সিল, ইগুয়ানা, দানবীয় কচ্ছপ, গিরগিটিসহ নানা জাতের সরীসৃপ। বিরল প্রজাতির নানা পাখির আনাগোনা লেগে থাকে এইসব দ্বীপে। কিন্তু অদ্ভুত ব্যাপার হল এইসব স্থানীয় জীবজন্তুদের কারও দেখা মেলে না বাল্ট্রা দ্বীপে। এক অজানা ভয়ে ছোটখাটো সরীসৃপেরাও বাল্ট্রা দ্বীপে না গিয়ে পাশের দ্বীপ সান্তাক্রুজের ধার ঘেঁষে চলে। এমনকি আকাশে উড়ন্ত পাখিগুলিও উড়তে উড়তে বাল্ট্রার কাছে এসে পড়লে তক্ষুনি দিক বদল করে চলে যায় অন্য দিকে।

দ্বীপটির ভেতর এক অদ্ভুত রহস্য কাজ করে, যার ফলে একের পর এক রহস্যময় ও অবিশ্বাস্য ঘটনা ঘটেই চলে। শোনা যায় বাল্ট্রায় এলেই না কি নাবিক বা অভিযাত্রীর কম্পাস অস্বাভাবিক আচরণ করে। তার থেকেও রহস্যজনক ব্যাপার হল, বাল্ট্রা দ্বীপের ওপর দিয়ে যাওয়া বিমানগুলির কম্পাসও কাজ করে না। আবার দ্বীপ পার হলেই সব ঠিক। বাল্ট্রার আরেকটি অদ্ভুত দিক হল, এই দ্বীপে পা দিলেই অদ্ভুত কিছু অনুভূতি হয়, মাথার ভিতর হালকা হয়ে যায়। অজানা-অচেনা কোনও এক জায়গায় হারিয়ে যাওয়ার বোধ আচ্ছন্ন করে ফেলে। বেশিক্ষণ এই দ্বীপে থাকলে দ্বীপ থেকে চলে আসার পরও বেশ কিছুদিন সেই আশ্চর্য অনুভূতি থেকে যায়। পরে অবশ্য আস্তে আস্তে ঠিক হয়ে যায়। কিন্তু কেন হয় এমন? প্রযুক্তিগত দিক দিয়ে বিশ্ব আজ অনেক দূর এগিয়ে গেছে। কিন্তু বিজ্ঞানীরা বাল্ট্রা দ্বীপের এ রহস্যের কোনও কূলকিনারা করতে পারেননি।  

এই দ্বীপের রহস্য রহস্যময়তার আবিষ্কারক এক দুঃসাহসী ব্যক্তি একবার একটা পরীক্ষা চালিয়েছিলো। সে জোর করে কিছু প্রাণী কে ধরে এনে বাল্ট্রা দ্বীপ এবং তার পাশের দ্বীপ সান্তাক্রুজের মধ্যবর্তী খাল এ ছেড়ে দিয়েছিলো। কিন্তু দেখা গেল এই প্রাণীগুলো সান্তাক্রুজের দিকে এগিয়ে গেল। সবচেয়ে রহস্যজনক ব্যাপার হলো উড়ন্ত পাখি উড়তে উড়তে এ বাল্ট্রা দ্বীপে এসেই ফিরে যেতে থাকে। দেখে মনে হবে যেন অদৃশ্য কোন দেয়ালে ধাক্কা খাচ্ছে ওরা।