এক নজরে

অবু

By admin

May 22, 2023

ট্রাম রাস্তার ঢালে ফুটপাত ঘেঁষে হাই-ড্রেনের ঝাঁঝরির আশপাশ এখনো পুরো শুকিয়ে ওঠেনি। রাস্তায় পথচলতি মানুষ, গাড়ী সবই কম এ সময়টায়। রোদের হলকা মারছে, বোঝাই যায় জৈষ্ঠ্য মাসের গরম। ঝড় জল থেমে যাওয়ার চব্বিশঘন্টা হয়ে গেছে ফুটপাথ কিছুটা সাফসুতরো, গয়নার দোকানের লোহার ঝাপের সামনেটা। অবু আজ এখানেই কাটাবে ঠিক করলো। এদিকটা গাছ বিশেষ ভাঙেনি টেলিফোনের একটা খুঁটি ও পাশটায় হেলে গাড়ী বারান্দার দিকে উঁকি দিচ্ছে। সকালে কিছুটা খাবার জুটলেও আজও বেলার আহারের বন্দোবস্ত বেশ কঠিন মালুম পেয়ে গেছে অবু।

180697852

এখন ঝকঝকে রোদ তিনদিন পরে। কী ভালোই না লাগছিলো অবুর বিড়িগুলোর জন্য মেজাজটা বিগড়ে গেল অথচ হাতের মাচিস জ্বললেই আগুন। ধোঁয়ার সুখ সে এক্ষুনি পেতে চায়, পেটটাও খালি। ঝড়ের দিনও তো কিছুই জোটেনি রাতে তো নিজের প্রানটাই এক ঠ্যালা। সেদিন নাড়ি সুদ্ধু পাক দিয়ে উঠেছিল কোথাও চাইতে যাওয়ার পরিস্থিতি ছিল কই তারপর রাতে ঝড়ের কি ঝাপটা।মনে হচ্ছিল ওপরের বারান্দাটা বুঝি এই ভেঙে পড়বে। ভাগ্যিস গলিটাতে কোনো গাছ ছিলনা।

http://www.dreamstime.com/royalty-free-stock-photo-beggar-image15816145

সেই কোন ছোটবয়েস থেকে এই রাস্তাটার ধারেই ও থেকে গেল ভিক্ষা করতে করতে। অনেক রাত বদল করেছে ফুটপাথ। রাতটুকুই তো ওর আশ্রয়। দু’একবার ব্রিজের গোড়ায় ফুলবাজার পাশ কাটিয়ে গঙ্গার ধারেও গিয়ে ভালো লেগেছে। দু’রাত ওখানে দিব্যি গঙ্গার ফুরফুরে হাওয়ায় শুয়েছিল যদিও একটা পচা গন্ধ ভেসে আসতে ওকে জায়গা বদল করতে হয়েছিল । সেদিনও ভোররাত থেকে বৃষ্টি নিজের যা সব ভিজে গেল।

বিড়ি ক’টা রোদে মাথার কাছে শুকোতে দিলো অবু। বিড়ির ধোঁয়াটা খুব দরকার ওর মনে হচ্ছিল। শখ বলতে তো ওই একটাই যে দুটো ও কুড়িয়ে নেয়না। দস্তুরমতো ভিক্ষের টাকা দিয়ে খাবার কেনা বাঁচিয়ে দোকানে কেনে। সম্মান আছে ওর এঁটোকাঁটা কুড়িয়ে খায়না। কতবছর এভাবেই বেঁচে গেল অবু। মা-বাবা নামে কাউকে সে দেখেছে বলে ওর জানা নেই। কোথায় ছিল আগে অনেক অনেক দিন আগে সেটাও আবছা। শুধু রেলগাড়ী চলতো কাছ দিয়ে এটুকু ছায়া ছায়া মনে করতে পারে। একটা ঘেরা জায়গায় তখন প্রতিদিন শুতো। কারা যেন খাবার দিত ওকে প্রায়ই। একটা নিজের থালাও ছিল। এসব একটু একটু মনে করতে করতে রোদটা হেলে এসে ওর মুখে গায়ে পড়ছে। সরার আর জায়গা নেই পিঠটা ঝাপের তালাটাতে লাগছে। গেল বছর অবুর বেজায় অসুখ করেছিল সেকথা মনে করলেই ভয় পায় ও।

180697852

পর পর কদিনই বন্ধ দোকানের, গ্যারেজের সামনে বমি আর পায়খানা করে পড়েছিল। জল ছাড়া কিছুই খায়নি তখন। দুটো বোতল কারা যেন দিয়ে গেছিল পরিষ্কার করার জন্য। কয়েকটা দোকানদার, দারোয়ান এসে লাঠি দিয়ে গুঁতো দিয়ে ওকে সরে যেতে বলছিল। সেবার ও বুঝেছিল এভাবেই মানুষ মরে যায়। দুলুবুড়িকেও অবু মরে যেতে দেখেছে তবু কিই বা ও বোঝে বাঁচার মরার। ভেবেছিল ঘুমিয়েই আছে । পরদিন বিকেলের পর পুলিশের লোক কাদের সঙ্গে নিয়ে এসে একটা বাঁধা পোটলার মতো দড়ি বেঁধে দুলুবুড়িকে একটা ভ্যানে তুলে নিয়ে গেল। অনেক কিছু মনে পড়ে অবুর কখনো কখনো যখন খিদেটা জানান দেয়। এখন রোদ ডুবে গেছে বড় নদীর ওপারে। বিড়িগুলো হাতে নিয়ে দেখে বেশ টান টান হয়েছে। অবু এবার বিড়ি জ্বালিয়ে লম্বা টান দেয়। সফলভাবে ধোঁয়া ওড়ায় ঘোলাটে আকাশের দিকে।