Jpeg

অচিনপুর

এক ভূতুড়ে অভিশপ্ত কেল্লার গল্প

By admin

September 18, 2023

রাজস্থানের আলোয়ার জেলার গোলকবাস গ্রামের ভানগড় দূর্গ। দিল্লি হয়ে জয়পুরের দিকে প্রায় তিন ঘন্টা সময় লাগে। সপ্তদশ শতকে  এটি তৈরি করেছিলেন সম্রাট আকবরের সেনাপতি মান সিং এর ছোট ভাই মাধো সিং। দূর্গটি এখন প্রায় ধ্বংসস্তুপ।কিন্তু কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা দুর্গের স্থাপত্য নিদর্শনের কিছুটা এখনও অবশিষ্ট রয়ে গেছে। কেল্লায় ঢোকার জন্য আছে দরজা, যার উচ্চতা প্রায় ৩০ ফুট। দরজা দিয়ে ঢুকেই বাগান।  পেরিয়ে  গেলেই সামনে পড়বে একটা জলাধার, স্থানীয় ভাষা যাকে বলে ‘বউলি৷

কথিত, এই এলাকা থেকে কোনো শব্দ বাইরে যেতে পারে না। যে কোনো শব্দই  এলাকার মধ্যে ঘুরে বেড়ায়। বউলির  থেকে অনেকেই নাকি নূপুরের আওয়াজ শুনতে পান। দুর্গে নেই কোনো ইলেক্ট্রিসিটি। ফলে ঘন অন্ধকারের মধ্যে ভূতুড়ে গল্প আরও জমাট বেঁধেছে। কিন্তু দুর্গে ভূত এলো কী করে? ভূতুড়ে দুর্গ নিয়ে লোকমুখে দুটি  কাহিনী  প্রচলিত আছে। একটি হচ্ছে সাধু বালুনাথ আর অন্যটি রাজকন্যা রত্নাবতীকে নিয়ে।

মাধু সিং যখন প্রথম ভানগড়ের দুর্গ তৈরি করছিলেন, সেই দুর্গ এলাকার এককোণেই ছিল সাধু বালুনাথের আশ্রম। তিনি দুর্গ তৈরিতে বাঁধা দিয়ে বলেছিলেন, তিনি কেল্লা বানাচ্ছেন তাতে তার আপত্তি নেই। তবে কেল্লার ছায়া যেন তার আশ্রমের উপর না পড়ে। ছায়া পড়লে তিনি মাধু সিংয়ের এই সাধের কেল্লা ধ্বংস করে দেবেন। এমনকি রাজবংশের কাউকে তিনি বেঁচে থাকতে দেবেন না! ভয়েই হোক কিংবা শ্রদ্ধায় হোক, মাধু সিং কথা দিয়েছিলেন, বালুনাথের আদেশ তিনি পালন করবেন। কেল্লা বানানো শেষ হলেও বালুনাথের কথা শেষ পর্যন্ত রাখতে পারলেন না মাধু সিং৷ দেখা গেলো দিনের একটা সময়ে মাত্র কয়েক সেকেন্ডের জন্য কেল্লার ছায়া বালুনাথের আশ্রমের উপর পড়ত। সেই কারণেই ক্ষুব্ধ হযলেন বালুনাথ। তার তীব্র আক্রোশে ভানগড়ের কেল্লার সঙ্গে গোটা ভানগর রাজ্যও ধ্বংস করে দিলেন! ভানগড়ে গেলে দেখা যায়, সেখানে বাড়ির অভাব নেই। অথচ কোনো বাড়ির ছাদ নেই। স্থানীয়রা বলেন, গুরুনাথ চেয়েছিলেন এই এলাকায় অন্য কেউ এসে যাতে বসবাস করতে না পারে, সেই কারণেই তিনি বাড়ির ছাদ উড়িয়ে দিয়েছেন।

ভানগড়ের ভূতুড়ে দুর্গের গল্প এখানেই শেষ নয়। আরও অনেক কাহিনী রয়েছে এই দুর্গ নিয়ে। শোনা যায়, বহুকাল আগে এই দূর্গের কছাকাছি এক জায়গায় এক তান্ত্রিক থাকতেন। তার নাম সিঙ্ঘিয়া। সে রাজকুমারীকে পছন্দ করত। রত্নাবতীর প্রেমে সে ছিল পাগল। ভানগড়ের রাজকুমারী রত্নাবতী বয়ঃপ্রাপ্ত হলে বিভিন্ন রাজ্য থেকে বিয়ের প্রস্তাব আসতে থাকে। তন্ত্রবলে তান্ত্রিক বুঝে নেয়, রাজকুমারী তার প্রেমে সাড়া দেবে না। তাই সে একদিন রত্নাবতী যখন দাসীদের নিয়ে বাজারে সুগন্ধী কিনতে গিয়েছিলেন, তখন তান্ত্রিক সুগন্ধীর উপর জাদুর প্রভাব বিস্তার শুরু করে। সিঙ্গিয়ার মতলব ছিল, রাজকুমারী এই গন্ধ শুঁকলেই বশীভূত হয়ে পড়বেন ও সিঙ্ঘিয়ার পিছনে পিছন চলে আসবেন। কিন্তু রূপের সঙ্গে রত্নাবতীর বুদ্ধিও ছিল মারাত্মক৷ তিনি সিঙ্ঘিয়ার এই ছল বুঝতে পেরে সুগন্ধীর বোতল একটি পাথরে ছুঁড়ে মারেন। জাদুবলে ওই পাথরটি বশীভূত হয়ে সিঙ্ঘিয়ার পিছনে ছুটতে আরম্ভ করে। আর ওই পাথরের তলায় চাপা পড়েই সিঙ্ঘিয়া মারা যায়। আর মরার সময় সে রাজকুমারীকে অভিশাপ দিয়ে যায়, রাজপরিবারের কাউকে সে বাঁচতে দেবে না, রাজকুমারীকেও সে মরার পরেও ছাড়বে না।

এই ঘটনার ঠিক কিছুদিনের মধ্যেই ভানগড়ের সঙ্গে আজবগড়ের যুদ্ধ লাগে। সিংগিয়ার অভিশাপ ফলতে দেরি হয়নি। ভানগড়ের মানুষ সাহসীকতার সঙ্গে লড়াই করলেও আজবগড়ের সৈন্যদের হাতে মারা পড়ে। রাজকন্যা নিজেও ঘোড়ার পিঠে যুদ্ধ করতে করতে প্রাণ হারান। যুদ্ধে রাজপরিবার সহ গোটা ভানগড় ধ্বংস হয়ে যায়। স্থানীয়দের বিশ্বাস ওই কেল্লায় নাকি তান্ত্রিক ও রত্নাবতীর অতৃপ্ত আত্মা এখনও ঘুরে বেরোয়। আর তাদের সঙ্গে ভানগড়ের অসংখ্য মানুষের আত্মাও রয়েছে কেল্লায়।মানুষের বিশ্বাস সেই আত্মা এখনও ভানগড়কে পাহারা দিচ্ছে।

এরপর বহু শতাব্দী পাড় হয়েছে। ভানগড় এখনো সেই নিঃশব্দে ঠান্ডা পরিত্যক্ত চেহারা  নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে আরাবল্লীর কোলে। দেশ-বিদেশ থেকে পর্যটকেরা আসেন দেখতে। তবে সবাই এই দুর্গের বাতাসে একটা তীব্র আতঙ্ক অনুভব করে। যদিও দুর্গ ঘিরে একের পর এক গল্প তৈরি হলেও কেউ স্বচক্ষে ভুতের দেখা পায়নি৷ কিন্তু ভানগড় এলাকায় সূর্যাস্তের পরে এবং সূর্যোদয়ের আগে প্রবেশ পুরোপুরি নিষিদ্ধ। কেউ এই আদেশ অমান্য করলে তার বিরুদ্ধে ভারত সরকার কড়া ব্যবস্থা নিতে পারে বলে এক সাইনবোর্ড ঝোলানো রয়েছে। কিছু দুঃসাহসী সেখানে রাতের অন্ধকারে ঢোকার চেষ্টা করেছে। কিন্তু তার ফল ভালো হয়নি।