গাছটা দেখে খুব একটা সমীহ জাগেনা।শুখনো ক্ষয়া,টিং–টিং এ গাছ। বট–অশোক–পাকুরের মতন জমকালো ভক্তি জাগানো চেহারা একদম নয়। রামবাবু যখন ভক্তিভরে পেন্নাম ঠুকলেন,তখন বুঝলাম আর পাঁচটা গাছের থেকে গাছটা আলাদা। শমী বৃক্ষ,এই সেই বিখ্যাত গাছ।লোক মুখে প্রচারিত যে গাছে পান্ডবেরা অজ্ঞাতবাসে যাবার আগে তীর–ধনুক লুকিয়ে রেখে গিয়েছিলেন।স্বয়ং রামচন্দ্র সাগর পেরিয়ে সীতা উদ্ধারেরে আগে পূজো করেছিলেন।খোদ গনেশ ও শনি ঠাকুরের না কি বিশেষ পছন্দের এই গাছ।হিন্দী ভাষী মানুষেরা রীতিমতন পূজো করেন।বাড়ির বাম দিকে সুলক্ষন হিসাবে রাখার রেওয়াজ।
তবে এই দিগরে এই গাছ বিরল।কি করে একটি যেন গজিয়ে ছিল। দক্ষিনদিনাজপুর জেলার,হরিরামপুরের এক নম্বর বৈরহাট্টা অন্চলে এই গাছের আগমন নিয়ে গুজ্ঞন কম নেই।গাছটা কথা বললে হয়ত জানা যেত, বৈরহাট্টা অন্চলে মাটি খুঁড়লেই কেন চ্যাপ্টা টালির মতন ইঁট বের হয়।আহা! কি তার লাল রঙ! ঢিবির ছড়া–ছড়ি।সে ঢিবি তো নয়,ঐতিহাসিক গুপ্তধন। বর্তমানে প্রায় অপ্রচলিত সূর্য বা বরাহ মূর্তির দেখা মেলে।তাও কষ্টি পাথরের।অথচ এলাকায় পাহার নেই।একটু দুরে ছোট্ট অগভীর ডোবার নাম ‘হাতি ডোবা’। সে গল্প হয়ত গাছের অজানা নয়।
গাছটা কথা বললে হয়ত জানা যেত, বৈরহাট্টা অন্চলে মাটি খুঁড়লেই কেন চ্যাপ্টা টালির মতন ইঁট বের হয়।আহা! কি তার লাল রঙ! ঢিবির ছড়া–ছড়ি।সে ঢিবি তো নয়,ঐতিহাসিক গুপ্তধন।
এমন শিহরন জাগানো ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে শমী বৃক্ষ কে নেহাত ছুটকো ঘটনা বললে ভুল হবে।গাছটার বয়স কত? খুব বয়স্করাও বলেন বাপ–ঠাকুরদাদার আমলেও ছিল।খরা–বন্যা কম হয়নি তবে গাছটা মোটামুটি অমর তকমা পেয়েছে।তার বংশ বৃদ্ধির উদ্যোগ কারুর নজরে পরেছে বলে শুনলাম না।পাতা দেখে লিগুমিনেসি পরিবারের মনে হবেই।গাছটা যদি কোনোও বাড়ির বাম দিকে হয়,তবে সেটাও আশ্চর্যের কিছু নয়।তবে বাড়িটা মাটির নিচে।উপরে ভাঙা পাথুরে রথের চাকা।
বিজনবাবু পেশায় শিক্ষক। তিনি দাবি করলেন,‘আমাদের দেশ পান্ডব বর্জিত বলে কথিত।তবে পান্ডবরা এই দেশে কি কারনে খুঁজে পেতে এমন গাছে গান্ডীব রাখতে এলো?’গাছটার মূল্য শুধু ঐ ভক্তিতে।অর্থনৈতিক ভাবে মূল্যহীন।
গাছটার মূল্য শুধু ঐ ভক্তিতে।অর্থনৈতিক ভাবে মূল্যহীন।
গাছেদের কথা বলার ক্ষমতা নেই।কিছু মানুষ আসেন,আশ্চর্য হয়ে দেখেন।এই এলাকার বিরল এই গাছ।তবে কি করে এলো?কারা এনেছিল? এই সব প্রশ্ন উহ্য থেকে যায়।গাছের বেদীতে তেমন কিছু লেখা নেই যা মনের কৌতুহল মিটিয়ে দেবে।
শমীবৃক্ষ যে দর্শনীয় তা নিয়ে স্থানীয় মানুষদের আগ্রহ খুব একটা চড়া নয়।ঐ একটা আছে দু–তিন প্রজন্ম ধরে!ব্যস ঐ অবধি!
ফিরে আসতে আসতে মনে হল,এই অন্চলে গাছটা একা হলেও এর কদর ঝাড়খন্ড বা বিহারে ভালোই।ভুল করে চলে এসেছিল।এই গাছের মৃত্যু হয়না।সেই মিথকে সম্বল করেই গাছটা হয়ত আরো কয়েক প্রজন্ম চলে যাবে।হয়ে থাকবে চলমান ইতিহাসের নীরব সাক্ষী।
লেখক পেশায় রাজ্য পুলিশ অফিসার