এক নজরে

মহাকাশ অভিযানের সফল যাত্রায় শুভাংশু শুক্লা

By admin

June 25, 2025

বুধবার ভারতের মহাকাশ ইতিহাসে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা হল। দীর্ঘ ৪১ বছর পর ভারতীয় বায়ুসেনার গ্রুপ ক্যাপ্টেন শুভাংশু শুক্লা মহাকাশে পাড়ি দিলেন। তাঁর হাত ধরেই চার দশক পর ইতিহাস গড়ল ভারত। এদিন দুপুর ১২টা ১ মিনিটে নাসার কেনেডি স্পেস সেন্টার থেকে Axiom-4 মিশনের অংশ হিসেবে সফল উৎক্ষেপন করেন শুভাংশু শুক্লা। এই মিশনের মাধ্যমে তিনি প্রথম ভারতীয় হিসাবে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন (ISS)-এ পা রাখতে চলেছেন। এটি কেবল তাঁর একার যাত্রা নয়, ভারতের মহাকাশ গবেষণার ক্ষেত্রে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচিত করল। Axiom-4 মিশনের একজন গুরুত্বপূর্ণ সদস্য হিসেবে তিনি আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে (ISS) পা রাখবেন, যা ৪১ বছর পর একজন ভারতীয় হিসেবে মহাকাশে মানব অভিযানের এক ঐতিহাসিক মুহূর্ত হিসাবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে। এর আগে রাকেশ শর্মা ১৯৮৪ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের সৌজন্যে মহাকাশে গিয়েছিলেন। 

২০১৯ সালে ইসরো শুভাংশুকে মহাকাশচারীদের প্রশিক্ষণের জন্য নির্বাচিত করে এবং তিনি মস্কোর ইউরি গ্যাগারিন কসমোনট প্রশিক্ষণ কেন্দ্র থেকে বিশেষ প্রশিক্ষণ নেন। তিনিই প্রথম ভারতীয় যিনি একবিংশ শতাব্দীতে মহাকাশ ভ্রমণ করলেন এবং আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন পরিদর্শনকারী প্রথম ভারতীয়। উল্লেখ্য, Axiom-4 মিশন হল একটি পরিকল্পিত বাণিজ্যিক মহাকাশ অভিযান যা স্পেসএক্স এবং নাসা মিলিতভাবে করছে এবং এটি অ্যাক্সিওম স্পেস দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে। এই মিশনে স্পেসএক্সের তৈরি ড্রাগন মহাকাশযান ব্যবহার করা হবে, যা ফ্যালকন ৯ রকেটের মাধ্যমে পৃথিবীর নিম্ন কক্ষপথে স্থাপন করা হবে। শুভাংশু শুক্লা এই মিশনের একজন পাইলট হিসেবে কাজ করছেন। তাঁর সঙ্গী হয়েছেন নাসার প্রাক্তন মহাকাশচারী ও অ্যাক্সিওম স্পেসের বর্তমান মহাকাশযান বিভাগের পরিচালক পেগি হুইটসন (মিশনের কমান্ডার), পোল্যান্ডের স্লাওস উজনানস্কি-উইসনিউস্কি এবং হাঙ্গেরির টিবর কাপু। এই চারজন মহাকাশচারী প্রায় ১৪ দিন আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে অবস্থান করবেন এবং বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা-নিরীক্ষায় অংশ নেবেন। এর মধ্যে অন্যতম হল মেথি ও মুগ বীজের উপর মহাকাশের মাইক্রোগ্র্যাভিটির প্রভাব এবং মানবদেহে সেই প্রভাব বিশ্লেষণ। এছাড়াও, নাসা এবং ইসরোর যৌথ উদ্যোগে আরও পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ গবেষণায় তাঁরা অংশগ্রহণ করবেন।

অ্যাক্সিওম-৪ মিশন একাধিকবার পিছিয়ে গেলেও, শুভাংশু শুক্লা এবং তাঁর টিম হাল ছাড়েননি। আবহাওয়ার প্রতিকূলতা, যান্ত্রিক ত্রুটি এবং আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনের রক্ষণাবেক্ষণের কাজ সহ বিভিন্ন কারণে উৎক্ষেপণের তারিখ বারবার পরিবর্তিত হয়েছে। তবে সব বাধা পেরিয়ে ফ্লোরিডার কেনেডি স্পেস সেন্টার থেকে স্পেসএক্সের ফ্যালকন ৯ রকেটে চেপে ড্রাগন মহাকাশযানে চড়ে শুভাংশু ও তাঁর সঙ্গীরা মহাকাশে পাড়ি দিলেন। এই মিশন ভারতের ক্রমবর্ধমান মহাকাশ গবেষণার ক্ষমতা এবং আন্তর্জাতিকভাবে অন্যদের সহযোগিতার প্রতিফলন। এছাড়াও শুভাংশু ভারতের নিজস্ব স্পেস মিশন ‘গগনযান’-এর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবেন। উৎক্ষেপণের আগে শুভাংশু শুক্লা বলেন,“এই মিশন ভারতের জন্য একটি মাইলফলক। আমি চাই দেশের প্রতিটি মানুষ এই মিশনের সাফল্যের জন্য প্রার্থনা করুন। লক্ষ্য স্থির থাকলে আকাশছোঁয়া সম্ভব।” শুভাংশু এবং অন্য তিনজন মহাকাশচারীকে নিয়ে স্পেসএক্সের Crew Dragon C213 মহাকাশযান প্রায় ২৮ ঘণ্টার যাত্রা শেষে বৃহস্পতিবার বিকেল ৪:৩০ টায় ISS-এ ডক করবে।

সোশ্যাল মিডিয়ায় দেশজুড়ে চলছে শুভকামনার বন্যা। লখনউ, দিল্লি, বেঙ্গালুরু-সহ সারা দেশের মানুষ চোখ রেখেছেন শুভাংশুর মহাকাশ যাত্রার দিকে। শুভাংশুর মহাকাশ যাত্রা শুধু তাঁর একার নয়, সমগ্র ভারতের গর্ব। ৪০ বছর বয়সী এই ভারতীয় পাইলট এর আগে মিগ-২১ ও জাগুয়ার ফাইটার জেটে ২,০০০ ঘণ্টারও বেশি সময় উড়েছেন। শুভাংশু শুক্লার মহাকাশ অভিযানের সফল উৎক্ষেপণ হতেই শুভেচ্ছা জানান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও। তিনি লেখেন, “ভারতীয় মহাকাশচারী, গ্রুপ ক্যাপ্টেন শুভাংশু শুক্লা প্রথম ভারতীয় হতে চলেছেন যিনি আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে পাড়ি দিচ্ছেন। ওঁর সঙ্গে ১৪০ কোটি ভারতীয়ের আশা, প্রত্যাশা ও শুভেচ্ছা রইল। শুভাংশু ও বাকি মহাকাশচারীদের সাফল্য কামনা করি।” আজ ছেলের সাফল্যে চোখে জল শুভাংশুর বাবা-মায়ের। শুভাংশু-র বাবা বললেন, “আজ ওর জন্য অনেকের প্রার্থনা রয়েছে। ওর মিশন সম্পূর্ণ হোক। আমার বাচ্চা আজ এত বড় মিশনে যাচ্ছে, আজ গোটা লখনউ, গোটা দেশ ওর কথা বলছে। এটাই আমার জীবনের সবথেকে বড় প্রাপ্তি।” আর শুভাংশু মা… তিনি আজও চিন্তিত, মায়ের মন তো। বললেন, “মায়ের থেকে সন্তান যখন দূরে যায়, চিন্তা তো হয়। আর ও তো মহাকাশে যাচ্ছে। তবে ওর জীবনের একটা লক্ষ্য রয়েছে। উড়ান! আজ ওর স্বপ্নপূরণের দিন।” বলাই বাহুল্য, শুভাংশুর হাত ধরে আজ গোটা দেশের স্বপ্নপূরণের আশায়।