কলকাতা ব্যুরো: আজ তাঁর জন্মদিন। ১৫ আগষ্ট ১৮৭২ সালে জন্ম তাঁর। আজ ভারতের স্বাধীনতা দিবস। অনেকে মনে করেন কাকতালীয়। শ্রী অরবিন্দ বলে গেছেন, এই দিনটিতেই স্বাধীনতা আসা তাঁর আধ্যাত্মিক জীবনের সঙ্গে যুক্ত। ১৯৪৭ এর ১৪ আগষ্ট তিরুচিরাপল্লীর আকাশবাণী ভাষণ তার সাক্ষ্য বহন করে।
১৯০৮ সাল। আলিপুর বোমার মামলায় গ্রেফতার হন শ্রীঅরবিন্দ। দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন অরবিন্দ ঘোষের আইনজীবী হিসাবে মামলা লড়েন। সেদিন আদালত কক্ষে দাড়িয়ে দেশবন্ধু অরবিন্দর উদ্দেশ্যে বলেন,
” He will be looked upon as a poet of patriotism, prophet of nationalism and lover of humanity. His words will be echoed and re echoed among the corridors of the world “
অরবিন্দ আজও বেঁচে আছেন। শুধু বাংলা বা ভারতবাসীর কাছে নয় , সমগ্র বিশ্ববাসীর কাছে। একজন বলিষ্ঠ নেতা, সাংবাদিক, দার্শনিক, সাহিত্যিক এবং সর্বোপরি ঋষি হয়ে যার দেখানো ইন্টিগ্রাল যোগ এখনও পৃথিবীর অনেক মানুষের কাছেই চর্চার বিষয়।
অরবিন্দ বড় হন এক নির্দিষ্ট জীবন দর্শন নিয়ে। ভারত থেকে দূরে। ইউরোপীয় শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে। বাবা কৃষ্ণধনের ইচ্ছা ছিল আদ্যোপান্ত সাহেব হয়ে উঠুক ছেলে। ভারতীয়ের মত হতভাগ্যের শিকার যাতে না হয় তাই শিশুকাল থেকেই পাঠিয়ে দিয়েছিলেন এমন পরিবেশে যেখানে ভারতীয়ত্বের ছোয়া যেনো না লাগে। সেখানে লাতিন, গ্রীক, জার্মান, ইতালিয়ান, ফ্রেঞ্চ শিখেছিলেন অরবিন্দ। আইসিএস পরীক্ষার জন্য ক্যামব্রিজের কিংস কলেজ পড়াশুনা করে ১৮৯৩ সালে দেশে ফেরেন স্টেট সার্ভিস অফিসার হয়ে। পরে ফরাসি ভাষার শিক্ষক হন বরদা কলেজে।
এর পরই ভারতীয় স্বাধীনতা সংগ্রামের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। ১৯০৫ এ বঙ্গভঙ্গ আন্দোলনে তার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। ১৯০৬ এ কংগ্রেস এ যোগ দেন। এরই মধ্যে বেশ কয়েকটি গোপন বিপ্লবী দল গঠন করেন। পরে জড়িয়ে পড়েন আলিপুর বোমার মামলায়, সাক্ষাৎ হয় দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাসের সঙ্গে। একবছর জেল খাটেন এবং সেখানেই তার আধ্মত্মিক ভাবের উন্মেষ এবং নারায়ণ দর্শন হয়।
জেল থেকে বেরিয়ে কর্মযোগ এবং ধর্ম নামে বাংলা ভাষার পত্রিকা চালু করেন। উত্তরপাড়া অভিবাসনে একজন বিপ্লবী থেকে আধ্যাত্মিক মানুষে রূপান্তরিত হবার প্রথম বার্তা দেন। এরপর চন্দননগর এবং সেখান থেকে পন্ডিচারি। অজস্র গ্রন্থ লেখেন। এর মধ্যে তার সবিত্রী কাব্যগ্রন্থটি বিশেষ খ্যাতি লাভ করে।
অনেক বিদেশী এটিকে জন মিল্টনের প্যারাডাইস লস্ট এর মতো কাব্যগ্রন্থের সঙ্গে তুলনা করেছেন। এরপর আর এক ইতিহাস রচনা হয়। শ্রীমার সঙ্গে দেখা পন্ডিচেরিতে আশ্রম স্থাপন এবং তার যোগ চর্চ্চার শিখরে পৌঁছানো। শুধু বৃহত্তর ভারতের স্বপ্ন নয়, সংঘবদ্ধ পৃথিবী (World Union) র স্বপ্ন দেখিয়ে গেছেন শ্রীঅরবিন্দ। সেই স্বপ্নের ধুনি জ্বালিয়ে রেখেছেন তার অজস্র অনুগামী।