২১ এর ধর্মযুদ্ধ

৫০ আসনের দাবি শাহের, নন্দীগ্রাম তার, বলছেন মমতা

By admin

April 02, 2021

কলকাতা ব্যুরো: রাজ্যে আট দফার বিধানসভা নির্বাচনের মধ্যে দেখতে দেখতে দুটো পর্যায় উতরে ফেলল বাংলা। আর দ্বিতীয় পর্যায়ের নির্বাচন শেষ হওয়ার পর থেকেই সাধারণভাবে ঘুরপাক খাচ্ছে মূলত দুটি প্রশ্ন। এক, এই পর্যায়ে মোট ৬০ টি বিধানসভার নির্বাচনের মধ্যে বিজেপি কতগুলি পেতে পারে, আর নন্দীগ্রামে জিতবে কে? মোটামুটি এই কৌতুহল আর জল্পনায় এখন রয়েছে বাংলা।প্রথম এবং দ্বিতীয় পর্যায় মোট ছয়টি জেলায় ৬০ টি বিধানসভার নির্বাচন শেষ হলো। ২৭ মার্চ পাঁচ জেলায় ভোট হয়। আর ১ এপ্রিল সেই জেলাগুলির সঙ্গেই যুক্ত হয়েছে দক্ষিণ ২৪ পরগনার চারটি বিধানসভা। এবার একটু দেখে নি এই বিধানসভা গুলি বা যে যে জেলায় নির্বাচন হল, সেখানকার বিগত সময়ের রাজনৈতিক শক্তি কার কেমন ছিল। যদিও এর সঙ্গে আর একটা কথা যোগ করা দরকার, তা হলো, অন্যান্য রাজ্যের সঙ্গে বাংলার নির্বাচনের একটা বড় পার্থক্য, এখানে ওয়ান ডে গেমও একটা স্ট্র্যাটিজির মধ্যে পরে। অর্থাৎ যে রাজনৈতিক দল নির্বাচনের জন্য যতই পরিকল্পনা বা কৌশল ঠিক করুক না কেন, ভোটের দিন আসল কৌশল কার্যকর না হলে, বাস্তবে তাদের আর জায়গা থাকে না।প্রথম পর্যায়ে নির্বাচন হয়েছিল পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, দুই মেদিনীপুর এবং ঝাড়গ্রাম জেলায়। এরমধ্যে ঝড়গ্রাম ও পুরুলিয়ার সব কটি বিধানসভা নির্বাচন হয়ে যায় প্রথম পর্যায়ে। গত বিধানসভা ভোটে এই এলাকাগুলি কমবেশি সবাই ছিল তৃণমূলের দখলে। কিন্তু গত লোকসভা ভোটে পুরুলিয়া, ঝাড়গ্রাম এবং বাঁকুড়ার একটা অংশে যথেষ্টই বিজেপির দাপট দেখা যায়। ফলে এই এলাকাগুলি থেকে বিজেপির প্রতিনিধিরাই সাংসদ নির্বাচিত হন। দুই মেদিনীপুর ছিল তৃণমূলের হাতে। ২০১৯ এ লোকসভা নির্বাচনে এবারে প্রথম পর্যায়ে যে ত্রিশটি বিধানসভায় ভোট হল, তাতে কুড়িটিতে ছিল বিজেপির প্রাধান্য। আবার ১ এপ্রিল যে নির্বাচন হলো তার মধ্যে ১৮ টিতে প্রাধান্য ছিল গত লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূলের। প্রশ্ন, তাহলে এবারের নির্বাচনে ফল কি হতে পারে?প্রথমত পুরুলিয়া, বাঁকুড়া এবং আরএসএসএসের শক্ত ঘাঁটি ঝাড়গ্রাম কে যদি আগেই তৃণমূলের দখল থেকে সরিয়ে রাখা যায়, সেক্ষেত্রে আলোচনা হতে পারে বাকি তিনটি জেলা নিয়ে। এর মধ্যে দক্ষিণ ২৪ পরগনার যে চারটি বিধানসভার নির্বাচন হয়েছে, তার মধ্যে গত লোকসভা নির্বাচনে একমাত্র বিজেপির যথেষ্ট ভাল ভোট পেয়েছিল গোসাবায়। বাকি বিধানসভা গুলি ছিল তৃণমূলের। অন্যদিকে দুই মেদিনীপুর জেলায় গত চার মাস আগেও সংগঠন গত ভাবে এবং ভোট মেশিনারির যাবতীয় অংক সামলাতেন শুভেন্দু অধিকারী ও অধিকারী পরিবার। ফলে এবার দুই মেদিনীপুরেও একদিকে তৃণমূল দলের সঙ্গে অধিকারী পরিবারের ওয়ানডে মেশিনারি কে কতটা কাজে লাগাতে পারলো, তার একটা হিসেব চলবেই। এতদিন শুভেন্দু অধিকারী যে মেশিনারি চালিয়ে দুই মেদিনীপুর ও ঝাড়গ্রামে তৃণমূলের ভোট আনতেন, এবার যে তিনি সেই কাজটা বিজেপির জন্য করবেন, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। সে ক্ষেত্রে এই দুই জেলায় তৃণমূল দল হিসেবে কতটা ওয়ানডে গেম খেলে, ভোটবাক্স স্ফীত করতে পেরেছে, তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করার সুযোগ রয়েছে।মোট সাতটি আসনের মধ্যে সে ক্ষেত্রে যদি চল্লিশটির বেশি আসন সর্বসাকুল্যে বিজেপি এই দুই পর্যায় থেকে নিজেদের ঘরে তোলে তাহলে ধরতে হবে, একদিকে শুভেন্দুর মেশিনারি ও অন্যদিকে পুরুলিয়া, বাঁকুড়া এবং ঝাড়গ্রাম জেলায় বিজেপির আগের পায়ের তলার মাটি আরো শক্ত হয়েছে। পাশাপাশি এই জেলাগুলিতে সংগঠন করার ক্ষেত্রে মুকুল রায় চলে যাওয়ার পরে এখন তৃণমূলের সেই জায়গায় বিকল্প আর তেমন কেউ আসেনি, যিনি দক্ষতার সঙ্গে তৃণমূলের ভোট মেশিনারি চালানোর চ্যালেঞ্জ নিতে পারেন।

যদিও ২০১৯ এ যে প্রবল বিজেপি হাওয়া রাজ্যে উঠেছিল, তার দাপট এখন কিছুটা কমেছে। সে ক্ষেত্রে দলবদলু নেতাদের নিয়ে ভোটের ময়দানে দাঁড় করিয়ে দেওয়া, আদি বিজেপি কর্মী নেতাদের মনে দল সম্পর্কে বিরূপ প্রতিক্রিয়া তৈরি করছে। পাশাপাশি তৃণমূলের প্রতি বিক্ষুব্ধ নাগরিকদের একটা অংশ এই একই কারণে বিজেপির প্রতি হতাশ। আবার এই সময়ের মধ্যে তৃণমূল এমন ভরসা রাজ্যবাসীকে জোগাতে পারেনি যেখানে তারা আবার ক্ষমতায় এলে দুর্নীতি বা স্বজনপোষণ হবে না অথবা সংখ্যালঘুদের প্রতি অযথা মমতা দেখানো হবে না, এই আশ্বাস দিতে পেরেছে তৃণমূল।যদিও তৃণমূলের তরফে দাবি, মমতার দান ধ্যানে রাজ্যের মহিলাদের একটা বড় অংশই এখনও তার প্রতি আস্থাশীল। ফলে রাজ্যের মা-বোনেদের এবং সংখ্যালঘুদের একটা ভোট তার দিকে চলে গেলে আবার সরকার তৃণমূলের হবে।যদিও অমিত শাহ শুক্রবার রাজ্যে ভোট প্রচারে এসে দাবি করেছেন, যে সাতটি বিধানসভার নির্বাচন হয়ে গেল তার অন্তত ৫০ টি থাকবে তাদের হাতে। আর নন্দীগ্রামে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় হারবেন বলেও দাবি শাহর। যদিও মমতা এদিন উত্তরবঙ্গে ভোট প্রচারে জানিয়ে দিয়েছেন, নন্দীগ্রামে জিতছেন তিনিই। ২ মে র আগে তাই এমন জল্পনা আর অঙ্কের হিসেবে পাতার পর পাতা ভরবে।