এক নজরে

সহজপাঠ ও যৌনশিক্ষা

By admin

August 09, 2020

সূর্য গুপ্ত

এবার চাই যৌনশিক্ষা।হ্যাঁ, ঠিকই পড়লেন, এতদিন মৌনব্রত থাকার পর হঠাৎ যৌনব্রত। একটি টুইটার ট্রেন্ড দেখছিলাম কিছুদিন আগে #thesexedchallenge বলে ! কিছু বোঝার আগেই চোখের সামনে গোটা কৈশোর ঝপাং করে সিনেমার মতো খেলা করে গেল । সত্যি, কোথায় তখনকার ছোটবেলা আর কোথায় এখনকার! Information and technology র যুগে সারা পৃথিবী আজ হাতের মুঠোয়, আর হ্যাঁ, sex ও, ইয়ে মানে sex education ও। আমাদের ছোটবেলার সেক্স মানে চুপচুপ, ফিসফাস আর পাড়ার গুগলদাদারা। আর হ্যাঁ, অবশ্যই হিন্দি সিনেমা । হিন্দি সিনেমা আর সেক্স বলতে প্রথমেই বুঝতাম শক্তি কাপুর, হ্যাঁ ওনার মতো সৎ ভাবে সেক্সকে ভালোবাসতে আর কেউ বলেনি। একা মহিলা পেলেই উনি আউ বলে জাপটে ধরতে পারতেন- বড্ড ভালো লাগতো আমার। বাকি হিরোরা তো কাছে আসতে চাইলেই নায়িকারা বুঝিয়ে দিতেন যে ইশশশ, তোমার মুখে দুর্গন্ধ! আর যাদের নায়িকারা কাছে আসতে রাজি হতেন একটু, সঙ্গে সঙ্গে সিনেমা বনদফতরের হাতে চলে যেত , ফুল-পাতা-গাছ জড়ামরি করতে থাকতো।

আমাদের ছোটবেলা এতো ভয়ঙ্কর ছিল, যে, দিদিমণির বায়োলজি ট্যুইশন ক্লাসেও ব্যাঙের জননতন্ত্রের জন্য ছেলে মেয়েদের আলাদা দিন বরাদ্দ ছিল, সেটাও আবার ক্লাস টেনে- আরে মশাই, হাসছেন কেন? সত্যি বলছি। সেক্স তো তখনকার দিনে খুবই খারাপ ব্যপার ছিল, ক্লাস নাইনে জীবন রহস্য জানার পর আমার সাথে এক বন্ধুর তো দু সপ্তাহ কথা বন্ধ ছিল- তার কথা অনুযায়ী তার মা-বাবা নাকি এরকম খারাপ কাজ করতেই পারেন না-শেষমেশ এটা বলে ভাব হলো যে আমাদের মা-বাবারা এসব করেন না।

সব থেকে মোক্ষম শিক্ষামূলক প্রযুক্তি হাতে এলো যখন একটু বড়র দিকে- মানে ক্লাস টেন। আদি ও অকৃত্রিম বাংলা পানু!! আমাদের স্কুলবেলায় কিন্তু এর নাম পানু ছিল না – এটি তখন চটি নামে খ্যাত ছিল।পরের দিকে হস্টেলে গিয়ে শুনলাম এর নাম নাকি পানু হয়ে গেছে। প্রথম দিকে একটু লজ্জা লাগতো কারন, আমার বড় জেঠুর নাম পানু—যাক গে পরে অবশ্য নাম ধরে ডাকা অভ্যাস হয়ে গেছিল । সেই চটি বই তো আমাদের ধর্মীয় গ্রন্থটি ছিল- আমাদের জ্ঞানচক্ষু উন্মীলনের আলো নিয়ে এলো চটি । চটির আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে আমার এক বন্ধু পাশের বাড়ির কাকিমাকে কুপ্রস্তাব দিয়ে বাবার সবিশেষ চটির আশীর্বাদ লাভ করেছিল- সে এক কেলেঙ্কারির একশেষ। কেলেঙ্কারির খলনায়ক কিন্তু আমিও হয়েছি দাদা, একবার স্কুলের এক সহপাঠী একটি যৌনসমস্যা ও তার প্রতিকার মার্কা বই এনেছিল ও আমরা যত্পরোনাস্তি উৎসাহ সহকারে পড়তে গিয়ে ধরা পড়ে প্রবল ভৎর্সিত হয়েছিলাম আর শাস্তিস্বরূপ স্কুলের বাথরুম পরিষ্কার করতে হয়েছিল।

বয়স বাড়ছে, আর বয়স বাড়ার সাথে সাথে ভিড় করে আসে হাজার স্মৃতি- এই বুড়ো বয়সে একটা জিনিস বুঝি- সেক্স এডুকেশন দরকারি- ঠিক যেরকম অঙ্ক,ইতিহাস আর ভূগোল। আর এই শিক্ষা সত্যি সত্যি দরকার সারা জীবন ধরেই । শেখানো উচিত পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধা। এডোলেসেন্স আর মেনোপজকে সঠিক ভাবে বোঝা। যৌনতা কিন্তু পাপ নয় আর যৌনাঙ্গ নোংরা নয়। এখনকার বাচ্চারা অনেক স্মার্ট, তারা আমাদের মতো ক্যাবলা নয়- কিন্তু তাদের জীবন আরো জটিল, সেখানে চাইল্ড সেক্সুয়াল অ্যাবিউজ আছে, এলজিবিটিকিউ আছে- কিন্তু ভরসার কথা তাদের সেক্স এডুকেশন আছে- আর আছে অসীম সম্ভাবনা-এগিয়ে যাও মানবসভ্যতা-হাতে হাত সেক্স আর এডুকেশন!