এক নজরে

লাল পোশাক আর সাদা দাড়িওয়ালা সান্তা ক্লজ   

By admin

December 25, 2023

ক্রিসমাস বা বড়দিনের সবচেয়ে পরিচিত মুখ হলো, সাদা চুল-দাড়িওয়ালা হাসিখুশি ও স্বাস্থ্যবান একটি লোক, যিনি বড়দিনের আগের রাতে গোপনে বাচ্চাদের জন্য উপহার রেখে যান। বিশ্বব্যাপী তিনি ‘সান্তা ক্লজ’ নামে পরিচিত। সত্যি কি সান্তাক্লজ বলে কেউ ছিলেন? যাকে আজ আমরা সান্তা ক্লজ বলে চিনি তার এক সুদীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে, যার শুরুটা হয়েছিল চতুর্থ শতাব্দীতে সেন্ট নিকোলাস নামে এক ব্যক্তিকে ঘিরে। যদিও কোনো বিশ্বাসযোগ্য ঐতিহাসিক সূত্র তার জীবনের তথ্য প্রমাণ করতে পারেনি। তবে ঐতিহ্য অনুসারে, ২৮০ সালের দিকে এশিয়া মাইন বা বর্তমান তুরস্কের পাতারা নামক অঞ্চলে তার জন্ম হয়েছিল বলে ধারণা করা হয়।

পরবর্তী সময়ে সেন্ট নিকোলাস, তৎকালীন রোমান সভ্যতার শহর মায়রার (বর্তমানে তুরস্তের দেমরে শহর) বিশপ হন। খ্রিস্টান ধর্মে গভীর বিশ্বাস ও অসাধারণ সহানুভূতি-উদারতার জন্য তিনি সুপরিচিত ছিলেন।যদিও ঐতিহাসিক নথিতে তার জীবনের বিস্তারিত কোনো বিবরণ পাওয়া যায়নি। তবে ঐতিহ্য অনুসারে তিনি তার যৌবনে নিজের গভীর আধ্যাত্মিক প্রত্যয়কে আরও দৃঢ় করে তুলতে ফিলিস্তিন ও মিশর ভ্রমণ করেছিলেন।প্রচলিত আছে, একবার তিনি দাস হিসেবে বিক্রি হওয়া থেকে ৩টি মেয়েকে রক্ষা করেছিলেন এবং তাদের বিয়ের জন্য যৌতুকসহ যাবতীয় খরচ দিয়েছিলেন। সেই সেন্ট নিকোলাসের মহানুভবতার খবর চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে ও তিনি মানুষের রক্ষক হিসেবে পরিচিতি পান।

ইউরোপের নিকোলাসের মৃত্যুর দিন ৬ ডিসেম্বরকে সবাই বিয়ে করার ও কেনাকাটা করার দিন হিসেবে পালন করতো। রেনেসা পর্যন্ত ইউরোপে বেশ জনপ্রিয় ছিলেন সেন্ট নিকোলাস। জার্মানি ও নেদারল্যান্ডে ১৭০০ সালের দিকে সেন্ট নিকোলাসের নামে উপহার দেওয়ার প্রথা শুরু হয়। ১৭৭৩ ও ১৭৭৪ সালে পরপর দু’বার একটি পত্রিকায় এক ডাচ পরিবারের সেন্ট নিকোলাসের মৃত্যুবার্ষিকী উৎযাপন করার খবর আসে। ডাচরা তাকে ‘সিন্তারক্লাস’ বলে ডাকত, যা শেষ পর্যন্ত ইংরেজি শব্দ ‘সান্তা ক্লজ’-এ পরিণত হয়। এদিকে, ১৭০০ সালেই সান্তা ক্লজের ঐতিহ্য উত্তর আমেরিকায় পরিচিত পায়। আর ১৮০০ সালের মধ্যে এই প্রথা বিশ্বজুড়ে খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের মাঝে ছড়িয়ে পড়ে। বিশেষ করে, ইংরেজিভাষী সম্প্রদায়ের মধ্যে সান্তা ক্লজ কিংবদন্তীটি ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায়। ক্রিসমাসে সবাইকে বিশেষ করে, বাচ্চাদেরকে উপহার দেওয়ার রীতি শুরু হয় ১৮০০ শতকের শুরুর দিকে।

১৮২০ সালের দিক থেকে ক্রিসমাস উপলক্ষ্যে দোকানগুলো বিজ্ঞাপন দিত, পত্রিকায় বিশেষ সংখ্যা বের হতো, যেগুলোতে প্রায়ই সান্তা ক্লজের ছবি ছাপা হতো। ১৮৪১ সালে আমেরিকার ফিলাডেলফিয়ার একটি দোকানে একটি মানুষ আকৃতির সান্তা ক্লজ তৈরি করা হয়, যা দেখতে হাজার হাজার শিশু ভিড় জমিয়েছিল।এরপর থেকে বাচ্চা এবং তাদের বাবা-মায়েদের আকৃষ্ট করতে দোকানগুলোতে জীবন্ত সান্তা ক্লজ সাজানো হয়। ১৮২২ সালে ক্লেমেন্ট ক্লার্ক মুর নামক একজন ক্রিসমাস উপলক্ষ্যে একটি কবিতা লেখেন, যেটির শিরোনাম ছিল ‘অ্যান অ্যাকাউন্ট অব এ ভিসিট ফ্রম সেন্ট নিকোলাস’।

লাল পোশাক পরা সাদা দাড়িওয়ালা একটি মানুষ ৮টি হরিণ দিয়ে টানা গাড়িতে উড়ে বাড়ি বাড়ি গিয়ে বাচ্চাদের জন্য উপহার বিতরণ করছে- এমনই এক চিত্র ফুটে উঠেছিল ওই কবিতায়। তাই বলা হয়, আজ আমরা সান্তা ক্লজের যে রূপ দেখি বা কল্পনা করি, সেটা আসলে এই কবিতা থেকেই শুরু হয়েছিল। কবিতাটি আমেরিকা-জুড়ে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায়। পরে ১৮৮১ সালে কোনো একটি পত্রিকায় প্রকাশিত থমাস নাস্ট নামক এক কার্টুনিস্টের আঁকা একটি ছবিতে দেখা যায়, সান্তা ক্লজ হরিণটানা গাড়িতে চড়ে কাঁধে উপহারের ঝোলা নিয়ে বাড়ি বাড়ি গিয়ে বাচ্চাদের উপহার দিচ্ছে।

এইভাবে সারা বিশ্ব জুড়ে ক্রিসমাসের আগের রাতে বাচ্চাদের ঝোলানো মোজা উপহারে পরিপূর্ণ হয়ে যাওয়ার রীতিটি জনপ্রিয় হয়ে উঠে। সান্তা ক্লজ আসলে মিথ হলেও শিশুরা এখন বিশ্বাস করে, তিনি সত্যিই আছেন ও বড়দিনের আগের রাতে তিনি আসলেই উপহার নিয়ে আসেন।