কলকাতা ব্যুরো: আর মাত্র শ’খানেক মিটার দূরে সমুদ্র। এখনো নিম্নচাপ চলছে। টানা বৃষ্টি চলছে। গত কয়েকদিনের প্রাকৃতিক দুর্যোগে পাড় ভাঙছে সাগরও। এই ভাবে সমুদ্র ধ্বংসলীলা চালালে আর কতদিন টিকে থাকবে এই কাঠের বাংলো তা নিয়ে ঘোর সংশয় রয়েছে এখানকার বাসিন্দাদেরই।
প্রায় এক দশক আগে তৃণমূল সরকার ক্ষমতায় আসার পর তখন জেলায় জেলায় প্রশাসনিক বৈঠকে যাচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী স্বয়ং। তেমনই দক্ষিণ ২৪ পরগনার বৈঠক ডাকা হলো সাগরে। সে এক রাজকীয় অনুষ্ঠান দেখলো সাগর। তখনই এলো ইকো ট্যুরিজম নিয়ে ভাবনা। পরিকল্পনা চললো। আর সাগরে এসে কোথায় থাকবেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়? তাই এক কাঠের কটেজ তৈরির পরিকল্পনা হলো। মুখ্যমন্ত্রী নিরিবিলিতে থাকতে পছন্দ করেন। তাই সাগরে কপিলমুনির আশ্রম ছাড়িয়ে আরও গভীরে, সমুদ্রের আরও কাছে কয়েক কোটি টাকা খরচ করে তৈরি হলো সেগুন কাঠের বাংলো। ভিতরে অতি আধুনিক মানের আসবাব এলো। হলো রান্নাবান্নার পৃথক ব্যবস্থা। মাঝে কাটা পড়লো সাগর পাড়ে সার দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা বহু ঝাউবন।
তারপরে দিন-কাল-বছর গড়ালো। সাগর মেলা আসে, সাগর মেলা যায়, সেই রিসোর্ট একই থাকে। মুখ্যমন্ত্রীর সাধের আবাস। তাই তা আর পর্যটকদের ভাড়া দিয়ে নষ্ট করার সাহস দেখায়নি বকখালি-সাগর উন্নয়ন পর্ষদও। আর যাঁর ভাবনার এই বাংলো, তাঁর আর সময় হয়নি, এই রিসোর্টে আসার।
আর এবার সমুদ্রের ভাঙ্গন যে ভাবে দ্রুত জমি কেটে তলিয়ে যাচ্ছে তাতে আর অস্তিত্ব কতদিন তাই নিয়েই সন্দিহান বাসিন্দারা। যদিও বকখালি-সাগর উন্নয়ন পর্ষদের চেয়ারম্যান তথা বিধায়ক বঙ্কিম হাজরা মানতে নারাজ মুখ্যমন্ত্রীর জন্যই এই কাঠের বাংলো তৈরি হয়েছিল। তিনি অবশ্য সমুদ্রের প্রবল ভাঙ্গনে উদ্বিগ্ন। তিনি বলেন, ‘বাংলোটা শুধু মুখ্যমন্ত্রীর কথা ভেবে তৈরি হয়নি। যদি প্রধানমন্ত্রী বা রাষ্ট্রপতির মতো ভিআইপিরাও এসে সাগরে রাত কাটাতে চান, তাঁদের কথা ভেবেই ওটা করা হয়েছে।’ যদিও মুখ্যমন্ত্রী ওই রিসোর্টে কোনোদিন পা রেখেছিলেন কি না অনেক ভেবেও তা মনে করতে পারেননি বিধায়ক। তিনি আরও বলেন, ‘যেভাবে সমুদ্র এগিয়ে আসছে সেটা আমাদেরও চিন্তা। তাই পোর্টট্রাস্ট ইতিমধ্যে একটা পরিকল্পনা তৈরি করেছে। কিন্তু কোভিড পরিস্থিতির জন্য কাজ আটকে রয়েছে।’
বিধায়কের কথা অনুযায়ী, কোভিড পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে সমুদ্রে ভাঙ্গন ঠেকানোর কাজ শুরু পর্যন্ত রিসর্ট থেকে তার দূরত্ব কতটা বজায় থাকে তা নিয়েই ভাবনা এখন স্থানীয়দের।
না কি তার আগেই কোটি কোটি টাকা খরচ করে তৈরি একটি বাংলো শুধু একজন আসার পথে চেয়ে বসে থেকেই তলিয়ে যাবে অতলে।