এক নজরে

গরাদের আড়াল থেকে বেরোনো ওদের সাদা কালো জীবনে পাশে জয়ন্ত নারায়ন

By admin

October 02, 2020

কলকাতা ব্যুরো: সাধারণভাবে মঞ্চে যারা বসে থাকেন, তাদের কমবেশি সকলকেই চিনে থাকেন উল্টো দিকে বসা মানুষগুলো। কারণ তারা কোনও না কোনভাবে নিজের নিজের জগতে স্বীকৃতি পেয়েছেন। সেই অর্থে সেলিব্রিটিদের প্রেস কনফারেন্সে দেখেই অভ্যস্ত আমরা।কিন্তু এ যেন এক অন্য রকম প্রেস কনফারেন্স। যেখানে এক মহিলা মাইক হাতে বলছেন তার জীবনের সেই ১৩ বছরের কাহিনী। স্বামীকে খুনের দায়ে যাকে যাবজ্জীবন সাজা দিয়েছিল আদালত। ১৩ বছর জেলের অন্ধকার চোরা কুঠুরিতে প্রায় জীবন্ত মরতে বসেছিলেন। সেখান থেকে আবার ফিরে আসার গল্প। গল্প বা অতিবাস্তব, যাই ভাবুন না কেন, অপরাজিতা ওরফে মুনমুনকে কালো তালিকাতেই ফেলে দিয়েছিল আমাদের সমাজ। স্বামীকে খুনের দায়ে তাকেই নিম্ন আদালত সাজা দিয়েছিল। আর এখন তিনি বেকসুর খালাস পেয়ে সমাজে নিজেই এখন এক পথদিশা।তার দুটো হাত পঙ্গু। অথচ ব্যাংক ডাকাতিতে তাকেই সাজা দিয়েছিল আদালত। সাক্ষীরা আদালতে বলেছিল, তিনি হাতে রিভলভার ধরে ব্যাংক ডাকাতি করেছেন। পাঁচ বছর জেল খাটার পর অবশেষে হাইকোর্ট থেকে বেকসুর খালাস পেয়েছেন তিনি। প্রায় ষাটের কোটায় বয়স চলে যাওয়া তাগড়া চেহারার শেখ এক্লাসকে এখন দেখা যায় হাইকোর্ট পাড়ায়। আইনজীবীর করণিক হিসেবে ফাইলপত্র নিয়ে যান। বেকসুর খালাস পেয়ে এখন বলছেন, ঈশ্বর আছে, আল্লাহ আছে।

প্রতিবেশী খুনের দায়ে জেলে ঢোকার পর টানা পাঁচ বছর তিনি জামিন পাননি। কিন্তু যখন তিনি জেলের বাইরে বেরোলেন, তখন আর জামিন নয়, একেবারে মুক্তির স্বাদ। তাকে বেকসুর খালাস করেছে কলকাতা হাইকোর্ট। এখন তিনি লড়ছেন জীবনযুদ্ধে। রুটির জন্য। তারক চক্রবর্তী এখন কুরিয়া সংস্থার কাজ করছেন।তিনটি ঘটনা শুধুমাত্র উদাহরণ মাত্র। এমন অনেক মুনমুন, শেখ একলাস, তারক চক্রবর্তীরা আজ মুক্তির স্বাদ পেয়েছেন যার মাধ্যমে, তিনি জয়ন্ত নারায়ন চট্টোপাধ্যায়। তাদের জন্য আইনি লড়াই করে, তিনি এদের অভিযোগ থেকে মুক্ত করেছেন। ফলে এরা তাকে মানেন ঈশ্বর বিশ্বাসে।শুধু এরাই কেন?মনীষা পৈলান, সঞ্চিতা যাদবরাও জয়ন্ত স্যারের জন্য আজ নির্দ্বিধায় বলতে পারেন, ‘ স্যার ছিলেন বলেই…..’। এ রাজ্যের অ্যাসিড ভিকটিমদের মধ্যে মনীষাকেই প্রথম সরকার ক্ষতিপূরণ দিতে বাধ্য হয় কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশে।বর্তমান বোম্বে হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি দীপঙ্কর দত্ত, কলকাতা হাইকোর্টে থাকাকালীন অ্যাসিড আক্রান্তদের মামলার টানা শুনানি করেছেন নিজের এজলাসে। তারপরে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী ক্ষতিপূরণ কার্যকর করতে বড় ভূমিকা নিয়েছিলেন তিনি। আর এই কাজে আদালতকে সাহায্য করা বা মনীষাদের পাশে দাঁড়িয়ে আইনি লড়াই করেছিলেন সেই জয়ন্ত নারায়ন চট্টোপাধ্যায়।

আড়াই দশকের তার এই আইনি লড়াইয়ে নানান অভিজ্ঞতা, নানান ঘটনার ঘনঘটা। দেখতে দেখতে এক সময় অনেকটাই ফিকে হয়ে যাচ্ছিল কিছু কিছু। কিন্তু করোনা আবহে লকডাউনে সবাই যখন বাড়িতে বসে প্রায় আতঙ্কের মধ্যে কিহবে কিহবে ভাবছেন, তখন কিন্তু জয়ন্ত হাতে তুলে নিয়েছিলেন ল্যাপটপ। না, মামলার ব্রিফ তৈরির জন্য নয়। তার জীবনের নানা অভিজ্ঞতা আর কল্পনার মিশেলে তৈরি হয়েছে একের পর এক গল্প।আর প্রেসক্লাবের সেই অনুষ্ঠানে জয়ন্ত নারায়নের লেখা দুটি বই প্রকাশ হয়েছে সেই দিন। গরাদের আড়ালে ও সাদাকালো দুটি বইয়ের মলাট উন্মুক্ত করেছিলেন, রিলের সেলিব্রিটিরা নন, রিয়েল লাইফের হিরোরা। যারা নিজেদের জীবনের এক অধ্যোয়ে সংসার, সমাজ থেকে অস্পৃশ্য হয়েও পরে আবার ফিরেছেন স্বাভাবিক জীবন যুদ্ধে। এখনো লড়ছেন নিজের অধিকারের জন্য, তার মতো আরও কারো অধিকারের দাবিতে। একেবারে রিয়েল লাইফে। তারাই ছিলেন জয়ন্ত র বই এর উদ্বোধক।সেই মঞ্চেই ঘুরেফিরে এসেছে তাদের বাস্তব জীবনের অভিজ্ঞতা ও জয়ন্ত নারায়নের মত কিছু আইনজীবীর পাশে থাকার গল্প। যারা শুধু পয়সার জন্য আইনি লড়াই না লড়ে, নীতি-নৈতিকতা বা ঠিক ভুল বুঝে, নিজের বিবেকের ডাকে সাড়া দিয়ে, কালো কোট গায়ে চাপিয়ে লড়ে যান আইনের রিয়েল লাইফে।