আসানসোল উওর থানার বেশ কয়েকটি পারিবারিক দূ্র্গা পূজাগুলির মধ্যে কাঁখয়া গ্রামের ঘোষাল বাড়ির দূর্গা ,নিশ্চিন্তা গ্রামের শিকদার বাড়ির লাল দূর্গা ,চক্রবর্তী পরিবারের হলুদ অন্যতম। এই পারিবারিক দূ্র্গা পূজাগুলি আসানসোল শহর থেকে কিছুটা দুরে হলেও এর নিয়ম নিষ্ঠা ,প্রতিমার অভিনবত্বে নিজ নিজ ঐতিহ্য বহন করে চলেছে আজও।
বাংলায় বর্গী হানায় যেমন বাংলার বহু গ্রাম নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েছিল, তেমনই বেশ কিছু জঙ্গলাকীর্ণ অঞ্চলে বর্গীদের ভয়ে বাস্তুহারা মানুষেরা গড়ে তুলেছিল নতুন নতুন জনপদ । কাঁখয়া গ্রাম বাংলার সেই জনপদগুলির একটি । নবাব আলিবর্দী খাঁর আমলে বর্গী হামলায় বিধস্ত বাংলার চব্বিশ পরগনার আডিয়দহের ঘোষাল পরিবারের নিমাই ঘোষাল চলে আসেন জঙ্গলাকীর্ণ এই অঞ্চলে । বসতি স্থাপন করেন ছোট্ট এক স্থানীয় নদী বা ঝোড়ার পাশে। বর্ষার জলে নদীর কানা ক্ষয়ে যেত বলে গ্রামের নাম হয় কানা ক্ষয়া।
পরর্বতী কালে কানা ক্ষয়া লোক মূখে মূখে হয় কাঁখয়া। গ্রামের এই ঘোষাল বাড়ি ছিল কাশিমবাজার রাজবাড়ির পত্তনিশ অর্থাৎ খাজনা আদায়কারী ।ঘোষাল বাড়ির মানিকচন্দ্র ঘোষাল জানান, পরিবারের এক পুরুষের পুত্র কামনায় বৈষ্ণব মতে শুরু হয় পারিবারিক দূর্গা পুজো। পূজোর পনের দিন আগে ঘট স্থাপনের মধ্য দিয়ে সূচনা হয় ঘোষাল বাড়ির দূর্গা পূজার বোধন। পূজোর সময় ষষ্টী থেকে দশমী ভোরে নহবতের শব্দে ঘুম ভাঙে পাড়ার সকলের। অষ্টমীতে ছাগের বদলে চিনি বলি হয়। বন্দুকের গুলি ছুঁড়ে আজও শুরু হয় ঘোষাল বাড়ির সন্ধি পূজা।
ঘোষাল বাড়ির আর এক প্রবীন সদস্য বলরাম ঘোষাল জানান, এক সময় প্রতি দূর্গা পূজোয় আমাদের পুরনো বাড়িতে নীলকন্ঠ পাখি আসতো। ছোটবেলায় আমিও দেখেছি। কিন্তু এখন আর দেখি না। ১৯৫৬ তে জমিদারি প্রথা বিলুপ্তি ঘটলেও আমাদের দূর্গা পূজোর ঐতিহ্য এখনো আমরা একই ভাবে ধরে রেখেছি। করোনা আবহে এবার পূজো কেমন কাটবে জানতে চাইলে বলরাম বাবু বলেন-গ্রামের বেশ কিছু মানুষ চাকরি সূত্রে গ্রামের বাইরে থাকেন। তারা এবছর গ্রামের পুজোয় উপস্থিত থাকতে পারছেন না, এটাই দূঃখের।