কলকাতা ব্যুরো: ময়নাগুড়িতে ভয়াবহ রেল দুর্ঘটনায় শেষ পাওয়া খবর অনুযায়ী মৃত বেড়ে ৫। দুর্ঘটনায় আহত শতাধিক। মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। বৃহস্পতিবার বিকেলে দুর্ঘটনার কবলে পড়ে আপ বিকানের-গুয়াহাটি এক্সপ্রেস। তবে উদ্ধার কাজ চলার সঙ্গে সঙ্গে ক্রমশ বাড়ছে আহতের সংখ্যা। জানা গিয়েছে, ইতিমধ্যে শতাধিক আহত যাত্রীর হদিশ মিলেছে। দুর্ঘটনাগ্রস্ত বগিগুলিতে প্রায় ২৫০ জন যাত্রী ছিলেন বলে প্রাথমিক ভাবে জানা গিয়েছে।
এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় রীতিমতো উদ্বিগ্ন রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণ। ঘটনার পর নিজের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন রেলমন্ত্রী। টুইট করে রেলমন্ত্রী জানিয়েছেন, পশ্চিমবঙ্গের নিউ ময়নাগুড়ির কাছে বিকানের-গুয়াহাটি এক্সপ্রেসের ১২ টি কামরা লাইনচ্যুত হয়েছে। এই ঘটনা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক। আমি ব্যক্তিগতভাবে সবকিছুর ওপর নজর রাখছি।
টুইটারে দুর্ঘটনার ভয়াবহতা উল্লেখ করার পাশাপাশি রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণ জানিয়েছেন, উদ্ধারকাজ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গেও তাঁর কথা হয়েছে। কেন্দ্রীয় রেলমন্ত্রী টুইটারে জানিয়েছেন, দুর্ঘটনা মৃতদের সরকারের তরফে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে। দুর্ঘটনায় মৃত ব্যক্তিদের পরিবারকে ৫ লক্ষ টাকা, গুরুতর আহত ব্যক্তিদের ১ লক্ষ টাকা এবং কম আহতদের ২৫ হাজার টাকা আর্থিক সাহায্য দেওয়া হবে। সূত্রের খবর বৃহস্পতিবার রাতেই কলকাতা আসছেন রেলমন্ত্রী অশ্বিনি বৈষ্ণ। সেখান থেকেই ঘটনাস্থলের উদ্দেশে রওনা দেবেন তিনি।
এই ভয়াবহ রেল দুর্ঘটনায় টুইটারে নিজের প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সেই টুইটটি রেলমন্ত্রীর টুইটার হ্যান্ডেলে রিটুইট করা হয়েছে। টুইটে প্রধানমন্ত্রী মোদী লিখেছেন, রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণর সঙ্গে কথা বলে পশ্চিমবঙ্গের রেল দুর্ঘটনা পরিস্থিতির সম্পর্কে খোঁজখবর নিয়েছি। মৃতদের পরিবারের প্রতি আমার সমবেদনা রইল। আহতদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করি।
পাশাপাশি স্বরাষ্ট মন্ত্রী অমিত শাহ টুইটে নিহতদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন। আহতদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করেছেন তিনি।
দুর্ঘটনার পর টুইটারে নিজের উদ্বেগ প্রকাশ করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়ও ৷ পরপর দু’টি টুইটে তিনি জানান, রাজ্য প্রশাসনের সদর দফতর অর্থাৎ নবান্ন থেকেই গোটা ঘটনায় নজর রাখা হচ্ছে ৷ সংশ্লিষ্ট জেলাশাসক, পুলিশ সুপার এবং উত্তরবঙ্গের আইজি সরাসরি বিষয়টির তদারকি করছেন ৷ যাঁরা এই দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন, তাঁদের যাতে চিকিৎসার কোনও সমস্যা না হয়, তা দেখা হচ্ছে ৷ যত দ্রুত সম্ভব আহতদের চিকিৎসা পরিষেবা দেওয়া হচ্ছে ৷
ইতিমধ্যে ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনায় দ্রুত উদ্ধারকার্যের সহযোগিতায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে পশ্চিমবঙ্গ বন দপ্তরের পক্ষ থেকে সার্চ লাইট, জল ও বন দপ্তরের আধিকারিক সহ কর্মীদের পাঠানো হয়েছে দুর্ঘটনাস্থলে।
এছাড়াও “পাশে আছি” বার্তা দিয়ে ফেসবুকে পোস্ট করেছেন সিপিআইএম রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র। তিনি পোস্টে লিখেছেন, রেড ভলান্টিয়ার সহ সিপিএম এর ময়নাগুড়ি এরিয়া কমিটির সম্পাদক অপূর্ব রায় ঘটনাস্থলে আছেন। কোনও সাহায্যের জন্য যাত্রীদের পরিবারের তরফে ৮২৫০৯৩৮৪৭৪ এই নম্বরে যোগাযোগ করতে পারেন।
টুইট করেছেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়ও। পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল ট্যুইট বার্তায় জানিয়েছেন, জেনেরাল ম্যানেজারের সঙ্গে কথা হয়েছে। আহত এবং যাত্রীদের সবরকম সহায়তা প্রদানের জন্য সমস্ত প্রচেষ্টা চলছে। যাত্রীদের অন্য ট্রেনে করে গুয়াহাটিতে নিয়ে যাওয়া হবে। আহতদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করছি।
বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী টুইট জানিয়েছেন, শুক্রবার দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শনে আসবেন রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব। রেলমন্ত্রী উদ্ধার কাজ এবং আহতদের ক্ষতিপূরণ প্রদানের ব্যবস্থার উপর নজর রাখছেন। শুভেন্দু অধিকারী গোটা ঘটনায় মৃত ও আহতদের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন। টুইটে আহতদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করেছেন তিনি।
অন্যদিকে উত্তরবঙ্গের তৃণমূল নেতা গৌতম দেব বলেন, যুদ্ধকালীন তপরতায় উদ্ধারকার্য চলছে। রাজ্য সরকারের আধিকারিকরা পৌঁছেছেন। গ্যাসকাটার এনে যাত্রীদের উদ্ধার করা হচ্ছে। অনেককে হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। যাঁরা সুস্থ আছেন, তাঁদের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করেছে প্রশাসন। তবে উদ্ধারকার্য শেষ হতে সময় লাগবে।
অন্যদিকে, দুর্ঘটনার পরই রেল দুর্ঘটনার কারণ নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। রেল সূত্রের খবর, দুর্ঘটনার কারণ খতিয়ে দেখতে উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি তৈরি করা হতে পারে। কেউ আবার নাশকতার সম্ভাবনাও উড়িয়ে দিচ্ছেন না। তবে রেল বা রাজ্য সরকারের তরফে এই প্রসঙ্গে এখনও কিছু জানানো হয়নি।
রেল দফতর সূত্রে খবর ওই দুর্ঘটনাগ্রস্থ ট্রেনে ৭০০ জন যাত্রী ছিল। দুর্ঘটনার পর উদ্ধারকারী দল ঘটনাস্থলে আসার আগেই স্থানীয় মানুষদের তৎপরতায় উদ্ধারকাজ শুরু হয়। এই পরই এসে পৌঁছয় প্রশাসনের উদ্ধারকারী দল। উদ্ধার কাজ চলার সঙ্গে সঙ্গে ক্রমশ বাড়ছে আহতের সংখ্যা। জানা গিয়েছে, ইতিমধ্যে ২০০ জনের বেশি আহত যাত্রীর হদিশ মিলেছে।
দুর্ঘটনায় ইতিমধ্যে কমপক্ষে ৫ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গিয়েছে। মৃতের সংখ্যা আরও বাড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। অন্যদিকে আহত হয়েছেন প্রায় শতাধিক যাত্রী। রেলের তরফে যুদ্ধকালীন তৎপরতায় চলছে উদ্ধারের কাজ। এমারজেন্সি কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে দুটি গুরুত্বপূর্ণ স্টেশনে। তার হেল্পলাইন নম্বর ৯০০২০৪১৯৫১, ৯০০২০৪১৯৫৫ এবং ৯০০২০৪১৯৫২, ০৬৪৫২২৩০৬৯২।
বৃহস্পতিবারের এই ভয়াবহ রেল দুর্ঘটনার কারণে বেশ কিছু ট্রেন বাতিল হওয়ার পাশাপাশি প্রচুর ট্রেনের রুটও বদল হয়েছে।
একনজরে দেখে নেওয়া যাক….