এক নজরে

রবীন্দ্রনাথ কি শৈশব থেকেই আত্মপ্রচারক

By admin

December 25, 2022

আমসত্ত্ব দুধে ফেলি,         তাহাতে কদলী দলি, সন্দেশ মাখিয়া দিয়া তাতে— হাপুস হুপুস শব্দ            চারিদিক নিস্তব্ধ, পিঁপিড়া কাঁদিয়া যায় পাতে।

রবীন্দ্রনাথ অতি অল্পবয়স থেকেই আত্মপ্রচারে কৃপণ ছিলেন না। জীবনস্মৃতি পাঠ করলেই তা পাওয়া যায়। তিনি নিজেই লিখছেন, ‘আমি কবিতা লিখি, এ খবর যাহাতে রটিয়া যায় নিশ্চয়ই সে-সম্বন্ধে আমার ঔদাসীন্য ছিল না।’ সেই সুবাদেই তাঁদের শিক্ষক সাতকড়ি দত্ত একদিন তাঁকে ডেকে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘তুমি নাকি কবিতা লিখিয়া থাক।’ বালক রবীন্দ্রনাথ  গোপন করেননি। জীবনস্মৃতিতে লিখেছেন, ‘ইহার পর হইতে তিনি আমাকে উৎসাহ দিবার জন্য মাঝে মাঝে দুই-এক পদ কবিতা দিয়া, তাহা পূরণ করিয়া আনিতে বলিতেন। তাহার মধ্যে একটি আমার মনে আছে— রবিকরে জ্বালাতন আছিল সবাই,/ বরষা ভরসা দিল আর ভয় নাই।’ রবি ঠাকুর তার পাদপূরণে লিখেছিলেন…’মীনগণ হীন হয়ে ছিল সরোবরে,/এখন তাহারা সুখে জলক্রীড়া করে।’

ঠাকুরবাড়িতে বালক থেকে কৈশোরে পৌঁছনো রবীন্দ্রনাথের ঠাকুবাড়ির ভিতরমহলে সবচেয়ে আদর্শ শ্রোতা ছিলেন কাদম্বরী দেবী, ছোটবৌঠান। আরবাহিরমহলে তাঁর সৃজনশীল রচনার প্রধান দুই শ্রোতা হলেন প্রিয়নাথ সেন এবং লোকেন্দ্রনাথ পালিত। নিজেজীবনস্মৃতি’তে লিখেছেন, ‘তখনকার দিনে যত কবিতাই লিখিয়াছি সমস্তই তাঁহাকে শুনাইয়াছি এবং তাঁহার আনন্দের দ্বারাই আমার কবিতাগুলির অভিষেক হইয়াছে।’ এই ‘তাঁহাকে’ হচ্ছেন প্রিয়নাথ সেন।

কবির শান্তিনিকেতনের ছাত্র প্রমথনাথ বিশী উল্লেখ করেছেন, ‘পলাতকা ও লিপিকা লিখিবার সময়ে প্রতিদিন সন্ধ্যায় সেদিনের লিখিত অংশ পড়িয়া শুনাইতেন। সভায় বৈদেশিক অধ্যাপক কেহ থাকিলে তাঁহাদের জন্য সঙ্গে সঙ্গে ইংরেজি অনুবাদও করিয়া যাইতেন।’ আমরা জানি, জগদীশচন্দ্র বসু ছিলেন রবীন্দ্রনাথের অভিন্ন হৃদয় বন্ধু। নিয়ম করে প্রায় প্রতিটি শনি-রবিবার শিলাইদহে কাটিয়ে যেতেন রবীন্দ্রনাথের কাছে। কবির কাছে বিজ্ঞানীর দাবি, প্রতি সপ্তাহে একটি করে নতুন গল্প তাঁকে শোনাতে হবে। সে দাবি কবি শুধু পূরণই করেননি, উপরি হিসেবে বন্ধুকে নতুনলেখা গল্পটি পড়েও শোনাতেন। সম্ভবত শোনানোর আগ্রহটা কবির দিক থেকেই ছিল বেশি। কেননা, আমরা কবিপুত্র রথীন্দ্রনাথের লেখা থেকে জানতে পারি। তখন কবি সপরিবার শিলাইদহে। কবিপুত্র জানাচ্ছেন, ‘লেখা সবেমাত্র শেষ হয়েছে, বাবা মাকে বললেন, ‘আমার গল্পটা লেখা শেষ হয়ে গেছে, আমাকে এখনি কলকাতায় যেতে হবে।’ এই কথা শুনে মা কিছুমাত্র আশ্চর্য হলেন না। তিনি জানতেন, কোনো লেখা শেষ হলে সাহিত্যিক বন্ধু-বান্ধবদের সেটা যতক্ষণ না পড়ে শোনাচ্ছেন— বাবা স্বস্তি বোধ করতেন না। এই অভ্যাস তাঁর বরাবর থেকে গিয়েছিল।’